|
|
|
|
অচলই রইল সংসদ, সর্বদল সোমবার
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
অনাস্থা নিয়ে তৃণমূল একঘরে হয়ে পড়লেও সংসদে স্বস্তি পেল না সরকার। বরং আগাম আশঙ্কা মতো বাম-বিজেপি-সহ বিরোধী শিবিরের সম্মিলিত দাবি এবং সরকার পক্ষের জবাবে অচলই রইল সভা।
কী ছিল বিরোধীদের দাবি? তৃণমূলের অনাস্থায় আপত্তি থাকলেও বাম-বিজেপি সম্মিলিত ভাবে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির (এফডিআই) বিরোধিতা করেছে এ দিন। এই নিয়ে আলোচনা এবং ভোটাভুটিও দাবি করেছে। এবং সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে সরকার পক্ষ।
এখানেই শেষ নয়। একই পরিস্থিতি চলার আশঙ্কা রয়েছে আগামিকালও। প্রধানমন্ত্রী এ দিন সংসদে ঢোকার সময় বিরোধীদের কাছে আবেদন করেন, অধিবেশন চালাতে তাঁদের সহযোগিতা দরকার। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের সামনে এই আর্জিতেই ক্ষান্ত হচ্ছে না সরকার। একই সঙ্গে তারা বিরোধী বরফ গলানোর প্রয়াসও শুরু করে দিয়েছে। আগামী সোমবার এফডিআই নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছে। আবার আজ সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিকে নৈশভোজে নিমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী। তবে সেই বৈঠকে বিশেষ কোনও অগ্রগতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁরা ভোটাভুটি ছাড়া আলোচনায় রাজি। বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলে তিনি জানান, এফডিআই এখন সময়ের দাবি। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব সে কথা মানতে চাননি।
তাঁরা ভোটাভুটির দাবিতে অনড়। উদাহরণ হিসেবে এনডিএ আমলে বালকোর বিলগ্নিকরণের উদাহরণ দেন তাঁরা। মূলত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির দাবি মেনেই তখন ভোটাভুটি-সহ আলোচনা হয়।
নৈশভোজে পথ না মিললেও প্রধান বিরোধী দলকে বুঝিয়েই অচলাবস্থা কাটাতে চাইছেন সরকার তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব। কারণ, সংসদে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। পেনশন ও বিমা বিল পাশ করাতে বিজেপি-র সাহায্য চান তিনি। অতীতে বাজপেয়ী জমানাতেই পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অথরিটি গঠন ও বিমা বিল পাশের তৎপরতা শুরু হয়েছিল। সে জন্য অধিবেশন চালাতে পারাটা জরুরি। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও কংগ্রেসের একাধিক নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্য এখন বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গত সন্ধ্যায় লালকৃষ্ণ আডবাণীর জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন মানব সম্পদ প্রতিমন্ত্রী শশী তারুর।
তবে একটা জায়গায় সরকার অনড়। খুচরো ব্যবসায় এফডিআই নিয়ে সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেবে না তারা।
উল্টো দিকে, এফডিআই বিরোধিতায় আন্দোলন এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে বাম-বিজেপি যে, এখন তাদের পক্ষেও সুর নরম করা কঠিন। আজ সংসদের বাইরে এফডিআই-র বিরোধিতায় এক আলোচনাসভায় একমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলি, সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি এবং সংযুক্ত জনতা দল নেতা শরদ যাদব। পরে সীতারাম বলেন, “রাজনৈতিক সভা হলে হয়তো যোগ দিতাম না। কিন্তু এফডিআই-এর বিরোধিতা সিপিএম গোড়া থেকেই করছে। এ ব্যাপারে বিরোধীরা একজোট রয়েছেন।”
এই অবস্থায় মধ্যপথ খোঁজা যে মুশকিলের কাজ, সেটা কংগ্রেস নেতৃত্বও জানেন। তাই অন্য কৌশলও তৈরি রেখেছেন তাঁরা। সে জন্য মায়াবতী এবং মুলায়মকেই সঙ্গে চাইছেন তাঁরা। অথচ মায়া-মুলায়ম দু’জনেই খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই, বাম, এনডিএ এবং বাকি বিরোধীরা যখন আজ খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮৪ ধারায় আলোচনা ও ভোটাভুটি দাবি করেন, তখন মুলায়মের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টি সাংসদরা উত্থাপন করেন অন্য প্রসঙ্গ। সপা-র দাবি, ভর্তুকি মূল্যে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার বছরে ৬টি থেকে বাড়িয়ে অন্তত ১২টি করতে হবে। আর মায়াবতীর দলের দাবি ছিল, সরকারি চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে অবিলম্বে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
অর্থাৎ, তাঁরা যে বিরোধীদের থেকে আলাদা অবস্থান নিয়েছেন, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দু’জনই। রাজনীতির কারবারিদের মতে, এফডিআই নিয়ে ১৮৪ ধারায় ভোটাভুটি হলে মায়া-মুলায়মের পক্ষে সরকারের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁরা যদি ভোটে অংশ না নেন, তা হলে সরকারেরই লাভ। সে ক্ষেত্রে লোকসভায় উপস্থিত সাংসদ সংখ্যা হবে ৪৭৩। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য সরকারের দরকার ২৩৭। আর সরকারের পক্ষে এখন সমর্থন রয়েছে ২৫৪ জন সাংসদের।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এতে মুলায়মের কী লাভ হবে? কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, ভর্তুকি মূল্যে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একপ্রকার নিয়ে ফেলেছে সরকার। সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা হলে মুলায়ম কৃতিত্ব নিতে পারবেন। তা ছাড়া পোড় খাওয়া এই সমাজবাদী নেতাটি ভাল করে জানেন, ‘আমআদমি’ এফডিআই বোঝে না। বরং গ্যাসের ভর্তুকি ছাঁটাই নিয়ে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি অসন্তুষ্ট। আবার মায়াবতীর দাবি মেনে সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার জন্য সংবিধান সংশোধনে প্রস্তুত সরকার। তা ছাড়া এ ব্যাপারে সর্বদল বৈঠকে সর্বসম্মতিও হয়েছে। |
|
|
|
|
|