|
|
|
|
আমাদের ঠাঁই নেই |
পাশে শুধু বিজেডি, হতাশা তৃণমূলেই
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
গত এক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক নাটকের পর, আজ লোকসভায় প্রত্যাশিত ভাবেই গৃহীত হল না তৃণমূলের আনা অনাস্থা প্রস্তাব।
সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিজেডি-র তিন জন সাংসদ ছাড়া আর কাউকে সঙ্গে পেলেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। কথা দিয়েও পাশে দাঁড়ায়নি গত লোকসভা ভোটে জোটসঙ্গী এসইউসি। অভিযোগ, তাদের সঙ্গে আলোচনাই করেনি তৃণমূল। এমনকী দলের ১৯ জন সাংসদের সবাইকে লোকসভায় হাজিরও করতে পারেননি তৃণমূল নেতারা। গরহাজির থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তোপ দেগেছেন যাদবপুরের সাংসদ কবীর সুমন।
ফলে তৃণমূল নেত্রী যে জাতীয় রাজনীতিতে এখনও সাবালকত্ব অর্জন করেননি, সেটা আরও এক বার প্রমাণ হয়ে গেল বলেই মনে করছেন দিল্লির রাজনীতির কারবারিরা। এর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করে হাত পুড়িয়েছিলেন মমতা। এ বার অনাস্থা-প্রশ্নে ফের তিনি একঘরে হয়ে পড়লেন।
মমতার কিন্তু দাবি, ‘মা-মাটি-মানুষের’ স্বার্থে তাঁর এই লড়াই সফল। আজ দুপুরে প্রয়োজনীয় সমর্থনের অভাবে তৃণমূলের প্রস্তাব স্পিকার খারিজ করে দেওয়ার ঠিক পরেই ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘সংসদে প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেলেও দেশের মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা খারিজ করেননি। সরকারের রক্ষাকর্তা কারা, সেটা স্পষ্ট।’
যার পাল্টা প্রদেশ কংগ্রেস ফেসবুকে লিখেছে, ‘জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল দল ও তার নীতি সম্পূর্ণ একঘরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুবিধাবাদী রাজনীতি ফের পরাজিত হল। অনাস্থা প্রস্তাবে সিপিএমের সমর্থন চেয়ে তিনি বঙ্গবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সে জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ |
ঘর চেয়ে ধর্না। সংসদে দলের আলাদা ঘরের দাবিতে গাঁধীমূর্তির সামনে
তৃণমূল সদস্যরা। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই |
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এত দিন থেকেও দু’পা এগিয়ে এক পা পিছিয়ে আসার দক্ষতা বা নমনীয়তা এখনও তৃণমূল নেত্রীর নেই। জাতীয় রাজনীতিতে এখনও শিক্ষানবিশই থেকে গিয়েছেন তিনি। আর সেই কারণেই পরপর দু’বার কার্যত অপদস্থ হতে হল তাঁকে। মমতা অবশ্য আজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের শক্তি এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন ছিলাম। কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম, অন্য যে সাংসদরা খুচরো ব্যবসায় এফডিআই এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ইউপিএ সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তাঁরা আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বিভিন্ন রকম অজুহাত দেখিয়ে তাঁরা মানুষের স্বার্থে এগিয়ে এলেন না।’ কিন্তু বাম এবং বিজেপি স্পষ্ট ভাষায় অনাস্থা-কৌশলে অসম্মতি জানানোর পরেও কেন তিনি ভেবেছিলেন যে অন্য সাংসদেরা পাশে দাঁড়াবেন, তার কোনও ব্যাখ্যা এ দিন মমতা দেননি।
এ দিকে মমতার এই হঠকারী রাজনীতিতে তাঁর দলের সাংসদেরাই হতাশ। এক তৃণমূল সাংসদের কথায়, “আর একটু সময় নিয়ে গোটা বিষয়টি করলে ভাল ফল পাওয়া যেত। এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা অনাস্থা প্রস্তাব আনার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে ভাল করে আলোচনা করারই সুযোগ পাওয়া গেল না।” সৌগত রায়ও বলেন, “এডিএমকে নেতা থাম্বিদুরাই জানিয়েছেন, মমতা যদি নিজে জয়ললিতার সঙ্গে কথা বলতেন, তা হলে তিনি সমর্থন করতেন।” |
সংসদে প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেলেও দেশের মানুষ
সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা খারিজ করেননি।
সরকারের রক্ষাকর্তা কারা, সেটা স্পষ্ট।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
মমতা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনছিলেন,
কিন্তু তাঁর উপরেই কারও আস্থা নেই।
দীপা দাশমুন্সি |
|
সরকারের সুবিধা করে দিতে চাইনি। এফডিআই নিয়ে
বিরোধীরা একজোট। এতেই ভোটাভুটি চেয়েছি।
শাহনওয়াজ হুসেন |
|
উনি প্রস্তাব নিয়ে দরজায় দরজায় ঘুরবেন। কেউ দরজা
খুলবে না। ভাঙন তাঁর দলের দরজায় কড়া নাড়ছে।
সূর্যকান্ত মিশ্র |
|
কংগ্রেস সহযোদ্ধা। মতের অমিল হলে সেটা হাটে না
নামিয়ে আলোচনা করে সমাধান করা যেত।
কবীর সুমন |
|
|
যে বিজেডি অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করেছে, তাদের সঙ্গেও যে তৃণমূল ভাল করে আলোচনা করেনি, সেটা স্পষ্ট। কারণ, লোকসভায় নবীন পট্টনায়কের দলের ১৪ জন সাংসদ থাকলেও প্রস্তাব পেশের সময় হাজির ছিলেন মাত্র তিন জন।
তবে দিনের শেষে হতাশা কাটিয়ে কংগ্রেস-বিরোধিতার তাসই খেলতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতা এই বার্তাই দিতে চাইছেন যে, কংগ্রেসের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে একা তৃণমূল। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কেউ যদি না-আসে তবে একলাই চলবেন মমতা। সিপিএম যে কংগ্রেস-বিরোধিতায় এগিয়ে এল না, সেই বিষয়টিকেও আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে হাতিয়ার করতে চাইছে তৃণমূল।
সিপিএম অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করছে যে, কংগ্রেসকে সাহায্য করতেই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল তৃণমূল। দলের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেলে কংগ্রেস বিরাট সুবিধা পেয়ে যেত। জনবিরোধী সমস্ত আর্থিক সংস্কারের সিদ্ধান্তে সংসদের সিলমোহর রয়েছে বলেই প্রচার করত তারা। মমতা ইচ্ছা করেই কংগ্রেসকে এই সুবিধা করে দিতে চেয়েছিলেন। কারণ, কংগ্রেসের বি-টিম তৃণমূল।” আর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের দাবি, তাঁরা সরকারকে একঘরে করতে চেয়েছিলেন। ১৮৪ ধারায় আলোচনা করেই সেটা করা সম্ভব।
মমতার অনাস্থা প্রস্তাব আনার উদ্যোগের বিরুদ্ধে আজ রাজ্য জুড়ে ধিক্কার দিবস পালন করে কংগ্রেস। কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেস দফতর থেকে ধিক্কার মিছিল বেরিয়ে ধর্মতলা পর্যন্ত যায়। সেখানে তৃণমূল নেত্রীর কড়া সমালোচনা করেন মানস ভুঁইয়া, আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
মানসবাবু বলেন, “২০১২-র লেডি জয়প্রকাশ হয়ে মনমোহন সিংহের সরকার ভাঙা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী তপ্ত মস্তিষ্কে দিল্লিতে ঘোরাঘুরি না-করে ঠান্ডা মাথায় সমস্যাবহুল বাংলাকে সামাল দিন।” |
|
|
|
|
|