নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
এক দিকে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। মাল কেনাবেচা, দর হাঁকাহাঁকি। সামান্য কানাকড়ি নিয়েও কত টানাটানি। সেই জন কোলাহলকে ভেঙে দিতেই যেন মধুর শান্ত এক দৃশ্যের সমাপতন পথেরই এক ধারে অন্ধ ভিখারি। গলায় করুণ সুর। সেই সঙ্গে তরি-তরকারি, শাক-সব্জির দোকান, সাধুর তাবিজ-কবজ বিক্রি, ময়রার মিষ্টির দোকান একটি পরিপূর্ণ গ্রামীণ হাটে যা থাকে সবই রয়েছে। |
ওই গ্রামীণ হাটই এ বার দশ বছরে পা রাখা রামপুরহাট ইয়ুথ ইউনিয়নের জগদ্ধাত্রী পুজোর থিম। রেল স্টেশনের কাছে প্রায় ২৫০০ বর্গ ফুট জুড়ে আস্ত একটি গ্রামীণ হাট বসিয়েছে পুজো কমিটি। হাটে প্রবেশ করতেই দুই আদিবাসী পুরুষ-রমণী ধামসা মাদলে সাদর অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। হাটের পুরনো মাটির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। খড়ের চালের ছাউনিতে সারি সারি পায়রার বাসা। খুঁটি দিয়ে তৈরি হয়েছে দোচালা ঘর। জিয়াগঞ্জের মৃৎশিল্পীর পরিকল্পনায় ৩৬টি দোচালা ঘরে কিছু না কিছু নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতা। সেখানে মাছ, মাংস, ডিম থেকে বিক্রি হচ্ছে চাল, নুন-তেলও। মাটির তৈরি সব মূর্তিই সারিবদ্ধ ভাবে বসানো হয়েছে দোচালাগুলিতে। হাটের ভিড় সামাল দিতে রয়েছে প্রতীকি পুলিশি ব্যবস্থাও!
পুজো কমিটির পক্ষে অচিন্ত্য চক্রবর্তী, লাল্টু মণ্ডল-রা বলেন, “হাট যেমন পণ্য কেনাবেচার কেন্দ্র, তেমনই ভাবের আদানপ্রদান ও যোগাযোগেরও প্রধান কেন্দ্র। এক কথায় গ্রামীণ জীবনের হৃৎপিণ্ড।” এ বারে তাই থিম ‘বাংলার হাট হেমন্তের সন্ধ্যায়’। গ্রামের হাট থেকে এই একটু আলাদা বটে। রাত নামতেই অন্ধকারে ডুবে থাকবে না। বরং সেজে উঠবে রঙবেরঙের আলোয়। পাশাপাশি জগদ্ধাত্রী পুজোর এই গ্রামীণ হাটে বিভিন্ন সামাজিক প্রসঙ্গে প্রচার চালানোও হচ্ছে। পোস্ত চাষ বন্ধ থেকে সামাজিক কুসংস্কার এমন নানা বিষয়েই সেখানে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। হাটের প্রাণ অবশ্য মাতৃরূপী জগদ্ধাত্রী। হাটের মাঝে দর্শনার্থীদের ভিড় তো সেখানেও!
হেমন্তের সন্ধ্যায় ভিড় জমছে রেল কলোনিতে। গ্রামীণ হাটে জেগেছেন সাক্ষাৎ মা জগদ্ধাত্রী।
থিম পুজোর পাশাপাশি রামপুরহাটের সারদাপল্লিতে তিন বছর ধরে মহিলারা জগদ্ধাত্রী পুজো পরিচালনা করে আসছেন। সেখানেও পুজো ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ ও উন্মাদনা দেখা যায়।
|