জমি অধিগ্রহণ করা নিয়ে সমস্যার ‘কারণ’ দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রায়গঞ্জের পরিবর্তে আগে নদিয়ার কল্যাণীতে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির পক্ষে মত দিয়েছিলেন। সম্প্রতি পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও কল্যাণীতে জমি ও পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে দাবি করে সেখানেই এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়ার পক্ষে বিবৃতি দেন। তবে উত্তর ‘স্থানীয় রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা’র কারণে তৃণমূলের নেতারাই উল্টো পথে হাঁটছেন বলে দাবি বিরোধীদের। অন্তত, গত সোমবার হাসপাতালের জন্য সরকারি জমি চিহ্নিত করার দাবিতে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় রায়গঞ্জ ব্লক তৃণমূলের অবস্থান বিক্ষোভের পরে তা স্পষ্ট হয়েছে বলে কংগ্রেস-সিপিএমের দাবি।
কংগ্রেসের তরফে কটাক্ষ করা বলা হচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সাইনবোর্ডে পরিণত হওয়ার ভয়ে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে তৃণমূল আন্দোলনে নেমেছেন। প্রায় একই সুরে সিপিএমের অনেকেরই অভিযোগ, রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়ার বিরোধিতার ফল অদূর ভবিষ্যতে কী হতে পারে তা বুঝেই ওই আন্দোলনের নামে নাটক করছে তৃণমূল। সিপিএম নেতাদের অনেকেরই বক্তব্য, সরকারি জমি থাকলে কবেই তো কাজ শুরু হয়ে যেত।
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে হাসপাতাল তৈরির জন্য সরকার পানিশালায় জমি অধিগ্রহণ না করলে মানুষ ক্ষমা করবেন না বলে তৃণমূল নেতারা বুঝে গিয়েছেন। সেই কারণেই সাইনবোর্ডে পরিণত হওয়ার আশঙ্কায় শীর্ষ নেতৃত্বের উল্টোপথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন। সরকারি জমি অধিগ্রহণ করার মতো ভিত্তিহীন দাবি তুলছেন।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব পাল বলেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধিতার জেরেই যে রাজ্য সরকার হাসপাতাল তৈরির জন্য পানিশালায় জমি অধিগ্রহণ করছেন না তা সবাই বুঝে গিয়েছেন। তাই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবি ঠেকাতেই জেলার তৃণমূল নেতারা শীর্ষ নেতৃত্বের মত উপেক্ষা করে সরকারি জমি অধিগ্রহণের ইস্যু তুলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। তবে পানিশালাতেই জমি অধিগ্রহণ করার দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে।”
রায়গঞ্জ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা রজত ঘোষের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী বা সরকারের তরফে কখনওই বলা হয়নি যে রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল হবে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি জোর করে জমি অধিগ্রহণ করে ও কৃষিজমি নষ্ট করে হাসপাতাল তৈরির পক্ষপাতী নন। রায়গঞ্জে জমি পেলে তিনি হাসপাতাল তৈরি করবেন বলেও জানিয়েছেন। সেই কারণেই হাসপাতাল তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনকে সরকারি জমি চিহ্নিত করার দাবিতে দলের তরফে আন্দোলনে নামা হয়েছে। রাজনীতি বা শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধের কোনও ব্যাপার নেই।” তিনি জানান, রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের অব্যবহৃত প্রায় ১০০ একর জমি রয়েছে। রাজ্য সরকারকে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হবে।
উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলায় ১০০ একর সরকারি জমির খোঁজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “সরকারি জমি চিহ্নিত হলে কল্যাণীর বদলে রায়গঞ্জেই আগে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি হতে তো কোনও অসুবিধা নেই। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যতই নোংরা রাজনীতি করুক, মুখ্যমন্ত্রী পানিশালায় কৃষিজমি নষ্ট করে হাসপাতাল তৈরি করার পক্ষে কখনওই নিজের মত দেবেন না।” ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার রায়গঞ্জে ৮২৩ কোটি টাকায় ১০০ একর জমিতে ৯৬০ শয্যার এইমসের ধাঁচের একটি হাসপাতাল গড়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। পানিশালায় চাষিরা ক্ষতিপূরণ পেলে ১০০ একর জমি দেওয়া হবে বলে সম্মতিও দেন। কিন্তু, কল্যাণীতে তৈরি পরিকাঠামো রয়েছে বলে সেখানে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরিতে জোর দেন রাজ্যের বর্তমান শাসক জোটের অন্যতম তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেত্রী। |