প্রশাসনের সদিচ্ছা ও নজরদারির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুরের আরও এক পুরাকৃতী। শাঁখারি বাজারে মদনমোহন মন্দির লাগোয়া প্রাচীন জলাধার এখন আবর্জনায় ক্রমশ মজে যাচ্ছে। এ নিয়ে পর্যটকেরা হতাশা প্রকাশ করলেও প্রশাসন অবশ্য নির্বিকার। ওই জলাধার কে পরিষ্কার করবে তা নিয়ে কার্যত মহকুমা প্রশাসন ও বিষ্ণুপুর পুর কর্তৃপক্ষের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
বিষ্ণুপুরের ইতিহাস গবেষক চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্তের মতে, “সারা ভারতে এমন বিশাল ও প্রাচীন জলাধার অল্প কয়েকটি রয়েছে। বিষ্ণুপুরে লালগড়ে ও শাঁখারিবাজারে তেমন দু’টি জলাধার রয়েছে। লালগড়েরটি সংস্কার ও সংরক্ষণ হলেও, শাঁখারি বাজারের জলাধারটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিচার করে ওই জলাারটি অবিলম্বে সংস্কার করা দরকার।”
১৬৯৪ সালে মল্লরাজা দুর্জন সিংহ শাঁখারি বাজারে তৈরি করেছিলেন অনন্য শিল্প শৈলির নিদর্শন মদনমোহন মন্দির। যার গায়ে রয়েছে টেরাকোটার দশাবতার, কৃষ্ণলীলার পৌরাণিক কাহিনীর দৃশ্য। রয়েছে পশু-পাখি, হংসলতার অপূর্ব প্যানেল। মন্দিরের বিগ্রহের স্নানের জন্য মন্দির লাগোয়া একটি জলাধার তৈরি করা হয়েছিল। |
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ মদনমোহন মন্দিরের সংরক্ষণের দায়িত্ব নিলেও প্রাচীন স্থাপত্যের দর্শনীয় ওই জলাধারটির দায়িত্ব তারা নেয়নি। ফলে কালে কালে জলাধারটি সংস্কারের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে।
বিষ্ণুপুরের ইতিহাস নিয়ে উৎসাহীরা মদনমোহন মন্দির দর্শনে এসে জলাধারের খোঁজ করে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে পরিস্কার না হওয়ায় ওই জলাধারে ময়লা জমতে জমতে আস্তাকুঁড়ের চেহারা নিয়েছে। ওই জলাধার আড়াল করে বসে গেছে কয়েকটি দোকান। রাতেও ওই জলাধার এলাকায় জ্বলে না আলো। স্থানীয় বাসিন্দা রতন নন্দী, আদিত্য মণ্ডলদের ক্ষোভ, “এই জলাধারে নামার জন্য কয়েকটি সিঁড়ি ছিল। দেখতে আসতেন পর্যটকেরা। কিন্তু এখন প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। জলাধারটা কেন ক্ষটির হাত থেকে বাঁচাতে পারছি না, তা নিয়ে অনেক সময় পর্যটকদের প্রশ্নের সামনে পড়তে হয়। লজ্জা লাগে তখন।” এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পর্যটকেরা উঁকি মেরে জলাধার দেখতে গিয়ে জমা জঞ্জালের দুর্গন্ধে সরে যাচ্ছেন। কলকাতা থেকে আসা সুদীপ্ত রায় বলেই ফেললেন, “প্রাচীন স্থাপত্যের এই দশা! আমাদের দেশেই সম্ভব।” মদনমোহন উৎসব ও সেবা পুজো কমিটির সহ সভাপতি অশোক কর্মকার বলেন, “আমরা মহকুমা প্রশাসন ও পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের স্থানীয় অফিসে জলাধার সংরক্ষণের আবেদন জানিয়েছি বহুবার। লাভ হয়নি। একটা আলোর ব্যবস্থাও কেউ করেনি। পুরসভার দেওয়া একটা টিমটিমে আলো এখানে জ্বলে।”
কে নেবে এই উদ্যোগ?
মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অদীপকুমার রায় বলেন, “ওই এলাকাটি বিষ্ণুপুর পুরএলাকার মধ্যে রয়েছে। তাই পুরসভার জলাধারের আবর্জনা সাফ করা উচিত।” অন্য দিকে, বিষ্ণুপুরের উপ পুরপ্রধান তৃণমূলের বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ মন্দিরটি সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে। তাই মন্দির লাগোয়া জলাধার পরিষ্কারের কাজ তাদেরই করা উচিত।” পুরাতত্ত্ব বিভাগের বিষ্ণুপুরের কর্মীরা অবশ্য চুপ। তাঁরা বলেন, “যা বলার কর্তৃপক্ষ বলবেন।” |