|
|
|
|
বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু, খুনের অভিযোগ বাবার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট |
শ্বশুরবাড়িতে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল মায়ের। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মা-মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন বাদুড়িয়ার রাজবেড়িয়া গ্রামের ওই পরিবারের সদস্যেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় হবিবা বিবির (২০)। তাঁর বাপের বাড়ির লোকের অভিযোগ, যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় হবিবাকে মুম্বইয়ে অবৈধ কাজে নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন তাঁর স্বামী-শাশুড়ি। তাতে রাজি না হওয়ায় হবিবাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। এ দিকে, মেয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সাহিদা বিবি (৪২)। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় ধান্যকুড়িয়া প্রাথমিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে বুধবার সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এরপরেই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে হবিবার শ্বশুরবাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান প্রতিবেশীরা। বাদুড়িয়া থানার পুলিশ জানায়, হবিবার বাবা সফিকুল ইসলাম মুন্সির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁর স্বামী আমিনুর মোল্লা, শাশুড়ি রেজিনা বেগম এবং মাসিশাশুড়ি তসলিমা বিবিকে গ্রেফতার করেছে। আরও এক অভিযুক্ত কেরামত আলির খোঁজ করছে পুলিশ। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার ধৃতদের বসিরহাট এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হেফাজতের নিদের্শ দেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক বছর আগে বাদুড়িয়ার পান্তাপাড়ার আমিনুর মোল্লার সঙ্গে বিয়ে হয় হবিবার। জামাইয়ের চাহিদামত বিয়েতে নগদ ২০ হাজার টাকা, গয়না এবং অন্য জিনিস দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, বিয়ের পরে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে হবিবার উপর নির্যাতন চালাতেন শ্বশুরবাড়ির লোক। এ নিয়ে গ্রামে সালিশি হয়। তাতে কোনও সুরাহা হয়নি। উল্টে হবিবার উপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়।
মঙ্গলবার গুরুতর অসুস্থ হবিবাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোককে খবর দেওয়া হয়। হবিবার কাকা সহিদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের একবার ফোন করে বলা হয় মেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ পরে জানানো হয়, পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। আমরা যেন হাসপাতালে যাই। হাসপাতালে গিয়ে দেখি ভ্যান রিকশায় পড়ে রয়েছে মেয়ের দেহ। গলায় কাপড়ের ফাঁসের দাগ। আমাদের দেখে জামাই এবং শাশুড়ি পালাতে গেলে ওদের আটকে রেখে পুলিশে খবর দিই।” এ দিকে, সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হবিবার মৃত্যুর খবর পেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সাহিদা বিবি। বুধবার সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত্যু হয়।
সফিকুল বলেন, “কোনও রকমে সংসার চালাই। তবু জামাইয়ের চাহিদা পূরণের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম। সামান্য কিছু বাকি ছিল। ধীরে ধীরে সে সবও দিয়ে দেব বলেছিলাম। তা সত্ত্বেও আরও টাকা চেয়ে মেয়ের উপর অত্যাচার চালায়। জামাই প্রায়ই মেয়েকে মারধর করত। টাকা দিতে না পারায় মেয়েকে মুম্বইয়ে নিয়ে গিয়ে খারাপ কাজে লাগাতে চেয়েছিল। প্রতিবাদ করায় মেয়েকে মেরে ফেলল।” আমিনুরের মামা কেরামত আলির কথায়, “হবিবা খুব জেদি। বাপের বাড়িতে কিছুদিন পরে যাওয়ার জন্য বলায় বাথরুমে ঢুকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।” এ দিকে, পান্তাপাড়ার বাসিন্দা নুর হোসেন মণ্ডল, সিদ্দিক হোসেন বলেন, “হবিবা আমিনুরের তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী। এর আগের পক্ষের দুই বউ কোথায় আছে, কেউ জানে না। আমরা চাই সঠিক তদন্ত করে দোষীদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক।” |
|
|
|
|
|