বার্ষিক অনুষ্ঠানের জন্য বোর্ড প্রেসিডেন্ট যে এমন ‘মাস্টারস্ট্রোক’ তুলে রেখেছিলেন, কে জানত!
সন্ধে সাড়ে সাতটা। মুম্বইয়ের বিখ্যাত তাজমহল হোটেলের খোলা ছাতে বার্ষিক অনুষ্ঠান সবে শুরু হব-হব। হঠাৎ দেখা গেল, মহম্মদ আজহারউদ্দিন ঢুকছেন! ঢুকছেন বোর্ডের অনুষ্ঠানে, যেখানে কি না গত পাঁচ-ছ’বছর তাঁকে বোর্ডের কোনও অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। ছ’বছর আগে ওয়াংখেড়ের ক্রিকেট সেন্টারের উদ্বোধনের দিন শেষ বার বোর্ডের কোনও অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল আজহারকে। তার পর আবার, বুধবার।
হালফিলে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ককে গড়াপেটা সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ থেকে রেহাই দিয়েছে। কিন্তু তবু প্রশ্ন ছিল, বোর্ড এর পর কী করবে? আজহার-মামলাকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে ফেলবে? নাকি আদালতের রায় মেনে নিয়ে মামলার রাস্তায় আর যাবে না? এমনকী বুধবার ওয়াংখেড়ের ক্রিকেট সেন্টারে বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আজহারের ব্যাপারটা ওঠার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত সেটা ওঠেনি। বোর্ড বরং জানিয়েছে, আজহার-মামলায় চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে তারা এখনও পৌঁছয়নি। কিন্তু এ দিন সন্ধের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ককে দেখার পর কোনও কোনও কর্তা বলেই দিলেন, আজহারকে নিয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসন যা বার্তার দেওয়ার, দিয়ে দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে বল ঠেলার আর কোনও ইচ্ছেই নেই বোর্ডের। |
বোর্ডের হাবভাব বুঝে সিএবিও আসন্ন ইডেন টেস্টে আজহারকে ডাকা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চালু করে দিয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, ইডেনের বাদশাকে ডিসেম্বরে ইডেনে গার্ডেন্সে দেখা যেতে পারে। এ দিন অনুষ্ঠানের ফাঁকে বেশ কিছুক্ষণ সময় সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে দেখা গেল আজহারকে। পরে সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে বলছিলেন, “বোর্ড কী করে না করে, আমরা দেখে নিতে চাইছিলাম। ইডেনে ওঁকে আমন্ত্রণ জানাতেই পারি।”
এবং শুধু আজহারকে নিয়ে আচমকা শোরগোল নয়। সুনীল গাওস্করকে ঘিরে গভীর ‘নস্টালজিয়া’। সচিন তেন্ডুলকরকে নিয়ে আবেগের বিস্ফোরণ। বুধবারের পুরস্কার-বিতরণী মঞ্চে সবই ঘটে থাকল একে একে।
আজীবনের সম্মান হিসেবে গাওস্করের হাতে এ বছর সি কে নাইডু পুরস্কার তুলে দিল বোর্ড। যার উত্তর দিতে গিয়ে গাওস্কর যে হাততালির ঝড়টা পেলেন, সেটা তাঁর চৌত্রিশটা টেস্ট সেঞ্চুরি করার সময়কার কাছাকাছি। “অনেক ছোটবেলায় আমার মামা মাধব মন্ত্রীর বাড়ি গিয়েছিলাম। উনি তখন দেশের হয়ে খেলতেন। জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার ইন্ডিয়া ক্যাপ আর জাম্পারটা আমি পেতে পারি কি না? উনি জবাবে বলেছিলেন, না। ওটা অর্জন করতে হয়। সে দিনই বুঝে যাই, ভারতীয় ক্রিকেটে কিছু পেতে গেলে অর্জন করে নিতে হবে। কিছু না করে কিছু পাওয়া যায় না,” বলছিলেন লিটল মাস্টার। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘আমার ক্রিকেটজীবনে বিশেষ প্রভাবের কথা যদি বলতে হয়, তা হলে বলব ক্রিকেটপ্রেমীদের কথা। ওঁদের অনেক সমালোচনা আমাকে ঠিক সময়ে জাগিয়ে দিয়েছে। যেটা জরুরি ছিল।” |
আর মাস্টার ব্লাস্টার, তিনিও বা কম গেলেন কী সে? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শততম সেঞ্চুরির কৃতিত্বের সিংহভাগ যে সচিন তেন্ডুলকর সবাইকে অবাক করে জন রাইটকে দিয়ে বসবেন, কে ভেবেছিল?
“জনই কথাটা আমাকে প্রথমে বলে,” শততম সেঞ্চুরির সম্মানে বোর্ডের বিশেষ স্মারক হাতে নিয়ে বলছিলেন সচিন। “বলে, তোমার এ বার একশোটা আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির কথা ভাবা উচিত। তখন আমার কাছে ব্যাপারটা এতটাই অবিশ্বাস্য ঠেকেছিল যে, ওকে বলে বসি, তুমি কি আজ কিছু খেয়েছ না কি? কিন্তু আজ তো জনকে আলাদা কৃতিত্ব দিতেই হবে। নিজের প্রথম টেস্ট খেলার সময় তো ভেবেছিলাম, এটাই আমার শেষ টেস্ট বুঝি। সেখান থেকে সামনের ক্রিকেটজীবনের দিকে তাকালে সত্যিই অবিশ্বাস্য লাগে।” সব মিলিয়ে, সুখী পরিবারের ছবি। গাওস্কর-সচিন-আজহার-লক্ষ্মণ-দ্রাবিড় একযোগে সব এক মঞ্চে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জমানার পর বাংলার দুই ক্রিকেটারের (অশোক দিন্দা এবং লক্ষ্মীরতন শুক্ল) আবার জাতীয় মঞ্চে সম্মান। মাঠের তিক্ততা ভুলে অ্যালিস্টার কুকের ইংল্যান্ডকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ এবং পিটারসেনদের হাজির থাকা। কিন্তু তবু বিতর্ককে পুরোপুরি এড়ানো গেল কোথায়? ভারতের প্রাক্তন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার, যিনি পরিষ্কার অভিযোগ তুললেন, বোর্ডের তরফ থেকে কোনও আমন্ত্রণই পাননি। সঙ্গে যা বললেন, সেটা শুনলে ভাল লাগার কথা নয়। “ওরা সানিকে আজীবনের সম্মান দিচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু আমিও বোধহয় দেশের হয়ে কিছু করেছি। আমাকে কি সামান্য ডাকা পর্যন্ত যেত না?”
|