সম্পাদকীয় ২...
অ-শাসন
ফেসবুক-বার্তা প্রেরণের অপরাধে দুই তরুণীকে গ্রেফতার করিতে মুম্বই পুলিশ যতখানি তৎপর হইল, তাহা নিন্দার অতীত। এই দুই তরুণীর এক জনের কাকার হাসপাতালে শিবসৈনিকরা বাহুবল প্রদর্শন করিয়াছিল। সেই গৈরিক গুণ্ডাবাহিনীর এক জনও অবশ্য হাজতের মুখ দেখে নাই। যে ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র প্রয়োজন ছিল না, তাহাতে প্রবল তৎপরতা, এবং যে ঘটনায় অতি দ্রুত কাজে নামা প্রয়োজন ছিল তাহাতে সম্পূর্ণ গয়ংগচ্ছ মনোভাব মুম্বই পুলিশ উভয় অপরাধেই অপরাধী। রাজনীতিকদের খুশি করিবার অভ্যাসটি দৃশ্যতই পুলিশের মজ্জাগত হইয়া গিয়াছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুশি করিতে অম্বিকেশ মহাপাত্রকে বাঁধিয়া আনা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের নেকনজরে থাকিবার বাসনায় অসীম ত্রিবেদীর কোমরে দড়ি পড়ে। ‘হিন্দু হৃদয়সম্রাট’-এর প্রয়াণে বিষণ্ণ শিবসৈনিকদের মন ভাল করিতেই কি দুই তরুণীকে গ্রেফতারে মুম্বই পুলিশের এমন তৎপরতা? অপরাধটি কী, আদৌ তাহা কোনও অপরাধ কি না, সেই বিবেচনার শক্তি অতীত হইয়াছে। পুলিশ এখন রাজনীতিকদের মনোরঞ্জনের রাষ্ট্রীয় উপকরণমাত্র।
তবে শুধুমাত্র পুলিশকেই দোষী সাব্যস্ত করিলে অর্ধভাষণ হইবে। যে আইনটির দৌলতে পুলিশ এই অন্যায় গ্রেফতারির সুযোগ পায়, প্রশ্ন সেই তথ্যপ্রযুক্তি আইন (২০০৮) লইয়াই। মুম্বইয়ে জঙ্গি হানার পরে এই আইনটিতে বেশ কিছু দাঁত-নখ যোগ করা হয়। আইনটি প্রহেলিকাময়। জনসমক্ষে এমনকী ছাপার অক্ষরে যে কথাগুলি বলা সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধ, ইন্টারনেটে ঠিক সেই কথা বলাই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হইতে পারে। এমন আইন প্রণয়নের হেতু কী? অনুমান করা চলে, ইন্টারনেটের দুনিয়া আইনপ্রণেতাদের নিকট সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল। নেতারা পরিচিত হইতে চাহেন নাই, অপরিচিতকে ঠেকাইয়া রাখিয়া ‘সমস্যা’ মিটাইতে আগ্রহী হইয়াছিলেন। তাহা হয় না। ফলে এই তথ্যপ্রযুক্তি আইনটি পুলিশ-প্রশাসনের হাতে এক বিপজ্জনক অস্ত্র হইয়া উঠিয়াছে। কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা মুম্বইয়ের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জানাইয়াছেন, তিনি এই আইনটির বাহুল্য সম্বন্ধে অবহিত এবং তাহা মেরামত করিতেও আগ্রহী। দেখা যাউক, মন্ত্রী কথা রাখেন কি না।
ভারতীয়রা আইন ভাঙিতে যতখানি পারদর্শী, কঠোর হইতে কঠোরতর আইন নির্মাণেও ঠিক ততখানিই আগ্রহী। আগ্রহটি বিপজ্জনক। কঠোর আইনের কঠোরতর প্রয়োগের প্রবণতা আরও বিপজ্জনক। পৃথিবীর বহু দেশেই কিছু আইন বর্তমান, যাহা আজকের দুনিয়ায় আর ব্যবহার্য নহে। বহু ক্ষেত্রে আইনসভা সেই আইন রদ করিয়া দেয়। আর, রদ না হইলেও কেহই সেই আইন প্রয়োগ করেন না, ফলে আইনটি কার্যত রদ হইয়াই থাকে। ভারতে পরিস্থিতি ভিন্ন। বিনায়ক সেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগই হউক বা মুম্বইয়ে সাইবার অপরাধের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের উৎসাহ দেখিবার মতো। এই উৎসাহের কারণেই ভারতে আইন বিষয়ে আরও সংবেদনশীল হওয়া কর্তব্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.