নির্মীয়মাণ বাড়ি ধসে শিল্পতালুকে জখম ৭
রাতভর চলছিল ছাদ ঢালাইয়ের কাজ। আচমকাই সেই ছাদের দক্ষিণ দিকের সদ্য ঢালাই হওয়া একটি অংশ বসে যায়। ওই অংশের কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকলেও চলছিল অন্য অংশের ঢালাই। বুধবার ভোরবেলা ছাদের দক্ষিণ দিকের সেই জায়গায় আবার কাজ শুরু হতেই ফের ধসে যেতে থাকে সেই অংশ। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যে ভেঙে পড়ে পুরো ছাদটাই। বিধাননগরের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুক, পাঁচ নম্বর সেক্টরের এই ঘটনায় আহত হয়েছেন কমবেশি সাত জন শ্রমিক। বুধবার রাত পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে দু’জন বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানায়, ইপি-জিপি ব্লকের জে১/১৩ নম্বর প্লটে একটি বেসরকারি সংস্থার অফিস তৈরির কাজ চলছিল। এ দিন ভোরে নির্মীয়মাণ সেই বাড়িরই একাংশ ভেঙে পড়ে। সে সময়ে সেখানে ১৭ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। বাড়িটির নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে পাঁচ নম্বর সেক্টর থানায় কাজে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন শ্রমিকেরা। তদন্ত শুরু হলেও রাত পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। শিল্পতালুকের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নবদিগন্ত শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কয়েক বছর আগেও পাঁচ নম্বর সেক্টরে নির্মীয়মাণ বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল। সে বারও আহত হন একাধিক শ্রমিক। কিন্তু তাতেও যে কারও হুঁশ ফেরেনি, এ দিনের ঘটনায় ফের তা প্রমাণিত হল।
ছাদ ধসে পড়ায় নির্মীয়মাণ সেই বহুতল যেন ধ্বংসস্তূপ।
বুধবার, সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে। —নিজস্ব চিত্র
ঘটনার সময়ে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করছিলেন নিউ টাউনের বাসিন্দা প্রহ্লাদ মণ্ডল। তাঁর দাবি, মাচা তৈরি করে ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। প্রথমে দক্ষিণ দিকের একটি অংশ আচমকা বসে যায়। তখন বন্ধ রাখা হয় সে অংশের কাজ। কিন্তু অন্য অংশের ঢালাই চলছিল। তখনই মড়মড় করে একটা আওয়াজ পেয়েছিলেন শ্রমিকেরা। ঠিকাদারদের বিষয়টি জানানো হলেও তাতে আমল দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। প্রহ্লাদবাবু বলেন, “ভোরে দক্ষিণ দিকে ফের কাজ শুরু হয়। আমরা তিন জন কাজ করছিলাম। আচমকা দেখি, গোটা ছাদটাই এক দিকে কাত হয়ে যাচ্ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাচাসুদ্ধ ধসে গেল। তার পরে আর কিছু মনে নেই।” শ্রমিকদের কারও মাথা ফেটেছে, কারও হাতে-পায়ে, কারও বা কোমরে চোট। প্রহ্লাদবাবুর চোখে সিমেন্ট-বালির গুঁড়ো ঢুকে যায়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, মাচা তৈরির জন্য পুরনো লোহার পাইপ ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রথম থেকেই তাই মাচা খুব পোক্ত ছিল না বলে নির্মাণকারী সংস্থাকে জানানো হয়েছিল। উপরন্তু হেলমেট, জাল-সহ শ্রমিকদের সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না সেখানে। ইমারতি দ্রব্যের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শ্রমিকেরা।
এ দিন ঘটনাস্থলে যান নবদিগন্ত শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষের এগ্জিকিউটিভ অফিসার বদ্রিনারায়ণ কর-সহ একাধিক আধিকারিক। পরে বদ্রিনারায়ণবাবু বলেন, “কুড়িতলা ভবন তৈরি হওয়ার কথা। এই বাড়ির নির্মাণ সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তবে নবদিগন্ত সূত্রে খবর, প্রাথমিক রিপোর্টে ইমারতি দ্রব্যের গুণমান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি আধিকারিকদের ধারণা, তিনতলা পর্যন্ত শুধুই বিভিন্ন স্তম্ভ উঠেছে, তার উপরেই ছাদ তুলতে যে মাচা তৈরি হয়েছিল, তা পোক্ত ছিল না। ফলে মাচায় ভার পড়তেই ধসে পড়ে।
ঘটনার সুয়োমোটো করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এ দিন দুপুরে শ্রমিকদের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিধাননগরের অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার রণেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গাফিলতির অভিযোগ এসেছে। ঘটনার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” নবদিগন্ত শিল্পনগরীর চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। তারা আমাদের সহযোগিতা চাইলে নিশ্চয়ই করব।”
তবে বুধবার রাত পর্যন্ত সেই বেসরকারি সংস্থা বা অফিস তৈরির বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব মেলেনি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.