|
|
|
|
উপদেষ্টাদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করেই সুদ কমাননি সুব্বারাও |
সংবাদসংস্থা • মুম্বই |
শুধু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম নন। গত অক্টোবরে ঋণনীতি ঘোষণার আগে ডি সুব্বারাওয়ের কাছে সুদ কমানোর জন্য সওয়াল করেছিলেন খোদ তাঁর উপদেষ্টারাও। সাত জন পরামর্শদাতার মধ্যে পাঁচ জনেরই মত ছিল, বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে সুদ ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটুক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু সেই পরামর্শ উপেক্ষা করে সুদ না-কমানোর অবস্থানেই অনড় থেকেছিলেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর। বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন মূল্যবৃদ্ধির অসুর দমনকে। শিল্পমহল তো বটেই, এই সিদ্ধান্ত অখুশি হন অর্থমন্ত্রীও।
গত ৩০ অক্টোবর ঋণনীতি ঘোষণার সময় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আশ্বাস ছিল, মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা সম্ভব হলে
|
ডি সুব্বারাও |
জানুয়ারিতে সুদ কমানোর কথা ভাববে তারা। কিন্তু সম্প্রতি সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও (৭.৪৫%), এখনও তা যথেষ্ট চড়া। তাই আগামী বারও শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ কমাতে কতটা রাজি হবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
তবে নাছোড় মূল্যবৃদ্ধি এবং তা যুঝতে সুদের চড়া হার যে বৃদ্ধির গতি ঢিমে হওয়ার অন্যতম কারণ, তা এ দিন মেনে নিয়েছেন ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর কে সি চক্রবর্তী। তাঁর মতে, চড়া সুদ বৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার একমাত্র কারণ নয়। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দাম ও সুদ না-কমিয়েও সেই সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতা বাধা হয়েছে বৃদ্ধির পথে।
শুধুমাত্র মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে সুদ না-কমানোর একবগ্গা নীতি আঁকড়ে থাকার জন্য এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদ জগদীশ ভগবতীও। তবে যে ভাবে কেন্দ্রের চাপের সামনে নতি স্বীকার না-করে সুব্বারাও ব্যাঙ্কের স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রেখেছেন, তার প্রশংসা করেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক।
শুধু কেন্দ্র নয়। উপদেষ্টারাও যে কতটা জোরালো ভাবে সুদ কমানোর পক্ষে ছিলেন, তা স্পষ্ট এ দিন ব্যাঙ্কেরই প্রকাশিত আলোচনার খুঁটিনাটিতে। সেখান থেকে জানা গেছে, অক্টোবরে ঋণনীতি ঘোষণার আগে নিয়ম মেনে বাইরে থেকে আসা (এক্সটার্নাল) উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সুব্বারাও। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ছয় পরামর্শদাতা। এঁদের মধ্যে পাঁচ জনেরই রায় ছিল সুদ কমানোর।
তিন উপদেষ্টার পরামর্শ ছিল, রেপো রেট (স্বল্পকালীন মেয়াদে ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে যে সুদে ঋণ পায়) ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর। বাকি দু’জন ছিলেন তা ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পক্ষে। আবার এক জন বলেন, রেপো রেটের পাশাপাশি নগদ জমার অনুপাতও (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) ছাঁটাই করা জরুরি। দু’টিই কমানো উচিত ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে। সুদ অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন শুধু এক জনই।
এই বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, মূল্যবৃদ্ধির হার চড়া হলেও তা বাড়তি চাহিদার কারণে নয়। তাই সুদ চড়িয়ে রেখে লাভ কী? বরং অবিলম্বে বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরানো জরুরি। কারণ এক দিকে, ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে দেশের শিল্প বৃদ্ধির হার। তার উপর শিয়রে শমন ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট। অবস্থা ভাল নয় আমেরিকা, চিনেরও। তাই তাঁরা চেয়েছিলেন, অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে রেপো রেট ছাঁটাই করে সুদ কমানোর ব্যবস্থা করুক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু উপদেষ্টাদের পরামর্শ শুনলেও, তা মানতে বাধ্য নয় শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এ বিষয়ে চূড়ান্ত ক্ষমতা গভর্নরেরই হাতে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের মতামত অগ্রাহ্য করেই সুদ না-কমানোর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তিনি। শুধু সিআরআর কমান ২৫ বেসিস পয়েন্ট।
এই সিদ্ধান্তে সে দিন হতাশা বা অসন্তোষ গোপন করেননি চিদম্বরম। তাঁর মন্তব্য ছিল, “চড়া মূল্যবৃদ্ধির মতো ঢিমে আর্থিক বৃদ্ধিও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে প্রয়োজনে একাই চলতে তৈরি কেন্দ্র।” |
|
|
|
|
|