কসাবকে নিয়ে ছবি বানালেই কি ব্যবসা সুনিশ্চিত? ২৬/১১-র জঙ্গিকে নিয়ে পরিচালকদের অত্যুৎসাহ সে দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মুম্বই হামলা নিয়ে রামগোপাল বর্মা ইতিমধ্যেই বানিয়ে ফেলেছেন ‘দ্য অ্যাটাকস অফ ২৬/১১’। কিন্তু বুধবার সকালে কসাবের ফাঁসির পরে এখন ছবির শেষটা বদলে ফেলতে চান তিনি। নিয়ে আসতে চান ফাঁসির দৃশ্যটি। বললেন, “অনেক গবেষণা করে ছবিটি বানিয়েছি। যে নৌকো করে সন্ত্রাসবাদীদের ভারতে আনা হয়েছিল, সেখানে কী ঘটেছিল, সেই সব কিছু আমি দেখাতে চেয়েছি। কসাবের স্বীকারোক্তি পড়েছি। তাকে যাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, তাঁদের নোটও দেখেছি।”
ছবিতে মুম্বই পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) রাকেশ মারিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নানা পটেকর। আর কসাব থিয়েটার কর্মী সঞ্জীব জয়সওয়াল। আক্রান্ত লিওপোল্ড ক্যাফের মালিক ফারজাদও অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। পরের বছর গোড়ার দিকে মুক্তি পাবে ছবিটি। তবে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে ছবিটির একটি ১৫ মিনিটের ঝলক দেখাবেন পরিচালক। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মুম্বই হামলায় জঙ্গিদের মোকাবিলা করেছিলেন, এমন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মীও। |
কসাবের ফাঁসিকে কি তিনি ছবির বাণিজ্যের খাতিরে ভাঙাতে চাইছেন? রামগোপালের দাবি, “মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখ বেঁচে থাকার সময় থেকে শুনে আসছি, আমি নাকি তাজ হোটেলে ‘টেরর ট্যুরিজম’ করেছি। এমনও অভিযোগ উঠেছে, রীতেশ দেশমুখকে আমার ছবিতে একটি চরিত্র দেব বলে ঠিক করেছিলাম। সব ভুল তথ্য।” পরিচালক বলেন, “বিলাসজি জানতেনও না যে, আমি ঘটনার পরে তাজ হোটেলে গিয়েছিলাম। আমি তখন ছবির কথা ভাবিওনি। রীতেশ আমার বন্ধু। ও নিজেও ভাবেনি, ব্যাপারটি নিয়ে এত জলঘোলা হবে।”
২৬/১১-র ঘটনাকে ভিত্তি করে ২৬ নভেম্বরই মুম্বইতে মুক্তি পাচ্ছে ‘অপারেশনস মুম্বই’। শু্যটিঙের সময় ছবিটিতে কসাবের ফাঁসি দেখানো হয়েছিল। তবে দৃশ্যটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পায়নি। কসাবের ভূমিকায় ছিলেন অজিত বর্মা। “কাকতালীয় ভাবে ছবিটি মুক্তির দিন কয়েক আগে কসাবের ফাঁসি হল। কিন্তু এখন আর ফাঁসির দৃশ্যটি জোড়া যাচ্ছে না”, বললেন অজিত।
এরই মধ্যে উরভাজি ইরানি নামে মুম্বইয়েরই এক চিত্র পরিচালক দশ মিনিটের একটি ছবি তৈরি করেছেন। নাম, ‘দ্য কে ফাইল’। ছবিতে দেখানো হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কসাবের (ছবিতে চরিত্রটির নাম আসভ) বিচারের দেরি নিয়ে কী ভাবে উভয়সঙ্কটে পড়েছেন। আজ কসাবের ফাঁসির পরে উরভাজি বললেন, “সাত তাড়াতাড়ি ফাঁসির পেছনে কি কোনও গল্প আছে? রাষ্ট্রপতির ফাঁসি মকুবের আবেদন নাকচ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ও তার ঠিক পরেই কসাবকে ফাঁসি দেওয়া নিয়ে ছবির কথা ভাবছি। এটাই ‘দ্য কে ফাইল টু’র বিষয় হতে পারে।” ‘দ্য কে ফাইল’ ছবিতে সন্ত্রাসবাদীর ভূমিকায় রয়েছেন সঞ্জয় পাঠক। তাঁর কথায়, “ফাঁসি দেওয়ার পদ্ধতিটা বেশ নাটকীয়। এই মামলার প্রত্যেকটা ঘটনাই বেশ সিনেমাটিক। সেই কারণেই ‘দ্য কে ফাইল টু’ তৈরি করার একটা বড় সম্ভাবনা দেখছি।”
কসাবকে নিয়ে বিশাল সবন্তের ছবিতে সঞ্জয় এক ইন্সপেক্টরের ভূমিকায় অভিনয়ের করার অফার পেয়েছিলেন। বিশাল ছবিটি বানাচ্ছেন না। আরেক পরিচালক মণীশ গুপ্ত কসাবকে নিয়ে তাঁর ছবিতে সঞ্জয়কে বেছেছিলেন কসাবের বাবার ভূমিকায়। মণীশের ছবিও আপাতত স্থগিত। “আমার ছবির বিষয়বস্তু ছিল, কেন কসাব এ পথ বেছে নিয়েছিল। তবে এখন আমি একটি অন্য ছবির জন্য ব্যস্ত। তা ছাড়া রামুজি ২৬/১১ নিয়ে ছবিটি বানিয়েছেন,” বললেন মণীশ।
কমল আর খানের পরবর্তী ছবি ‘দেশদ্রোহী টু’তেও কসাব চরিত্রটি রয়েছে। এখানে কসাব হয়েছেন আসলাম খান। তিনি বললেন, “ফাঁসির খবর পাওয়ার পরে ছবির শেষটা বদলানো হচ্ছে।” কমল ছবিটিতে অমিতাভ বচ্চন বা অনুপম খেরের মতো কাউকে চাইছেন। ওঁদের ডেটের অপেক্ষায় আছি।”
কলকাতায় কসাবকে নিয়ে ছবি বানাতে উৎসাহী পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। “চে গেভারা যদি বিপ্লবী হন, তা হলে কসাবের বেলায় মৃত্যুদণ্ড কেন? এই বিতর্কটা নিয়েই ছবি করতে চাই। প্রযোজক পাওয়া শক্ত। ছোট ক্যামেরায় আমি অন্তত একটা ছবি বানিয়ে আপলোড করার কথা ভাবছি,” বললেন অনিকেত।
কসাবকে নিয়ে এত ছবি! প্রত্যেকটিরই কি বক্স অফিস সাফল্য নিশ্চিত? বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ তরণ আদর্শ মানতে নারাজ। জানালেন, “ছবির পেছনে বিশদ গবেষণার ছাপ থাকলেই দর্শক আগ্রহী হবেন।” |