দিকশূন্যপুরেই সুনীলহীন ‘একা এবং কয়েকজন’
করাশ স্মৃতি নিয়ে একাই দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটা।
শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটি ক্যানালের পিছনে ফুলডাঙা। সেখানেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি। রবীন্দ্রনাথের শান্তির নীড়ে বড় যত্নে কবি গড়েছিলেন সেই বাড়ি। সুনীলহীন ‘একা এবং কয়েকজন’ এখন বড় একা। রুক্ষ লালমাটিতে কেবল স্মৃতির দীর্ঘশ্বাস।
অথচ শান্তিনিকেতনের এখনও মনে পড়ে। তখন ১৯৮৩। ফরিদপুর ফেরত কলকাতার ‘রিফিউজি’ সুনীল বাড়ি করলেন ফুলডাঙায়। দোতলা বাড়ি। একপাশে ফুলের বাগান, পুকুর। গরু, হাঁসও। কলকাতা থেকে ঘনঘনই আসতেন। দোতলার একটি ঘরে নীরবে চলত লেখালেখি। বিকেলে নীচে নেমে খোলা বারান্দায় আরামকেদারায়। দেদার আড্ডা চলত। যোগ দিতেন স্থানীয় বন্ধুরা। তাঁদেরই একজন প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “তাঁর কাছ থেকে কেউ পত্রিকার জন্য শুভেচ্ছা নিতাম, কেউ লেখা চাইতাম। এমনও হয়েছে, বায়না মেটাতে গিয়ে সদ্য লেখা কবিতাও ছিঁড়ে দিয়েছেন।” বিরক্ত হতেন না সুনীল।
আড্ডার অন্য সঙ্গী শান্তিনিকেতনের মলয় ঘোষ বলছিলেন, “আড্ডার সঙ্গে ফ্রি ছিল খাওয়া-দাওয়া। বৌদি (স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়) মাছ ভাজা এনে দিতেন!
সঙ্গে চা, বেগুনি তো থাকতোই!” এ ভাবেই ‘একা এবং কয়েকজন’কে নিয়ে বীরভূমের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল সুনীলের। পরে ‘আলোর ভুবন’ নামে একটি বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেওছিলেন, “আমি জন্মসূত্রে না হলেও ভূমি সূত্রে বীরভূমের... মাত্র কয়েক বছর আগে শান্তিনিকেতনের অদূরে এক খণ্ড জমি কিনেছি। ভারতের মাটির সঙ্গে তাতেই আমার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
এখন সুনীলহীন শান্তিনিকেতন হতাশায় ডুবিয়েছে চারুচন্দ্র রায়দেরও। তাই সুনীলের হাত ধরে তৈরি ‘কবিতায়ন’ আর প্রকাশ করবেন না তিনি। “সুনীলদাকে নিয়েই শেষ সংখ্যা।” বললেন আড্ডার পুরনো সঙ্গী চারুবাবু। প্রায়ই সুবর্ণরেখা মোড় থেকে কবিকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন রিকশাচালক রমেন দাস। সুনীলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই মন ভারি রমেনের।
আসলে মন ভারি আর আক্ষেপ তো গোটা শান্তিনিকেতনেই।
প্রতি বছর বসন্ত উৎসবের আগের দিনই শিল্পী যোগেন চৌধুরীর রতনপল্লির বাড়িতে একটি বসন্ত উৎসবের আয়োজন হত। হাজির থাকতেন সুনীল। যোগেনবাবু বললেন, “একদিন শান্তিনিকেতনের বাড়িতে তিনি দোতলার লেখার ঘরে বসেছিলেন। আধ ঘণ্টা আড্ডা দেব বলে গিয়েছিলাম। কী ভাবে জানি না তিন ঘণ্টা কেটে গিয়েছিল। সে দিন দীর্ঘ সময় ধরে ছেলেবেলার ফরিদপুরের গল্প শুনিয়েছিলেন।”
শুধু কী গল্প? হত গানও। প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী মোহন সিংহ খাঙ্গুরা জানালেন, “প্রায় দিন বিকেলে তাঁর বাড়ি পৌঁছে যেতাম। গানের আড্ডায় গলা মেলাতেন সুনীলদাও।” গান শুনতে ডেকে পাঠাতেন স্থানীয় বাউল শ্যামচাঁদ দাসকেও। গান শুনে খুশি হয়ে টাকাও উপহার দিতেন। শ্যামচাঁদও বলেন, “একবার গানের শেষে টাকার বদলে বই উপহার চেয়েছিলাম। ভীষণ খুশি হয়ে তখনই সই করে নিজের বই দিলেন!”
কী হবে এই ‘একা এবং কয়েকজনে’র? জানেন না, বাড়ির দীর্ঘদিনের কেয়ারটেকার দীনবন্ধু গোপও। সুনীল শেষবার শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন গত ২২ সেপ্টেম্বর। দিন সাতেক ছিলেন। বয়সের ভারে উঠতে পারেননি প্রিয় দোতলার ঘরে। লেখালেখির কাজ সেরেছিলেন নীচের ঘরেই।
দীনবন্ধুর আক্ষেপ, “ফেরার সময় আবার আসব বলে গাড়িতে চাপলেন। আর ফিরলেন না।”

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.