নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন প্রশিক্ষিত প্রার্থীরা।
৪০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকার সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে। সুজাতা খাতুন নামে এক মহিলা-সহ প্রায় ৩০০ জন প্রশিক্ষিত প্রার্থী ওই মামলা করেছেন। আবেদনকারীদের বক্তব্য, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই-র নিয়ম মেনে তাঁরা দু’বছরের ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রম পাশ করেছেন। অথচ রাজ্য সরকার তাঁদের এবং প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের একই পরীক্ষায় বসাতে চাইছে। আইন অনুযায়ী এটা করা যায় না। এই ব্যাপারে বিহারের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরছে বাদী পক্ষ। মামলার ফয়সালা না-হওয়া পর্যন্ত পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার আবেদনও জানিয়েছে তারা।
শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপনটি দিয়েছে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এনসিটিই-র নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষককে অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। সেই সঙ্গে পাশ করতে হবে এনসিটিই অনুমোদিত দু’বছরের ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমও। কিন্তু ২০১০ সালে এ রাজ্যে ওই ধরনের পাঠ্যক্রম পড়ানোর ব্যবস্থা খুব বেশি প্রতিষ্ঠানে ছিল না। তাই রাজ্য কিছু দিনের জন্য ওই নিয়ম শিথিল করার আবেদন জানায়। এনসিটিই তখন জানায়, ওই প্রশিক্ষণ না-থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হওয়া যাবে। তবে ২০১৪ সালের মধ্যে ওই ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রম পাশ করতে হবে। |
আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ডিপ্লোমাধারী প্রার্থী পাওয়া গেলে আগে তাঁদের সরাসরি নিয়োগ করতে হবে। যদি দেখা যায়, ডিপ্লোমাধারীর সংখ্যার থেকে শূন্য পদ কম, তা হলে শুধু তাঁদের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। তা না-হলে সরাসরিই নিয়োগ করতে হবে ডিপ্লোমাধারীদের। সুব্রতবাবুর দাবি, বর্তমানে রাজ্যে দু’বছরের ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমে উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকের শূন্য পদ ৪০ হাজারের কিছু বেশি। এই অবস্থায় সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ডিপ্লোমাধারী প্রার্থীদের সরাসরি নিয়োগ করতে হবে।
এই প্রসঙ্গেই বিহারের একটি মামলার কথা ওঠে। বিনোদ কুমার বনাম বিহার সরকারের ওই মামলায় পটনা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশিক্ষিতদের সরাসরি নিয়োগের নির্দেশ দেয়। বিহার সরকার সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। তার পরেও বিহার সরকার সরাসরি নিয়োগ করেনি। শেষ পর্যন্ত নন্দকিশোর ওঝা নামে এক ব্যক্তি বিহার সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন সর্বোচ্চ আদালতে। ২০০৬ সালে বিহার সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, তারা আদালতের রায় মেনে প্রশিক্ষিতদের সরাসরি নিয়োগ করছে।
কলকাতা হাইকোর্টের মামলায় আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় অনুসারে পশ্চিমবঙ্গেও প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগের দাবি জানান। তাঁদের আবেদন, মামলা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হোক। শুক্রবার মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা। |