ব্যাঙ্কে কমছে গরিব মেয়েদের সঞ্চয়, ঋণও মিলছে কম
ক্ষ্মীর ঝাঁপিতে কড়ি কি এসে ঠেকেছে তলানিতে?
সঞ্চয় আর ঋণ, গ্রামের মেয়েদের এই দুইয়েরই দিশা দেখিয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী। তবে পশ্চিমবঙ্গে মেয়েরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে বরাবরই ব্যবহার করেছে প্রধানত সঞ্চয়ের জন্য। সঞ্চয়ের অঙ্কে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষে থেকেছে বেশ কয়েক বছর।
নাবার্ডের ‘মাইক্রোফিনান্স ইন ইন্ডিয়া ২০১১-১২’ রিপোর্ট অন্য ছবি দেখাচ্ছে। গত বছরও ব্যাঙ্কের খাতায় এক একটি গোষ্ঠীর (সদস্য ১০-১৩ জন) গড় সঞ্চয় ছিল ১২ হাজার টাকার কিছু বেশি। এ বছর তা নেমে এসেছে ৫৪৯৯ টাকায়। কেমন করে দ্রুত কমে গেল সঞ্চয়ের পরিমাণ? সমীক্ষার সংখ্যায় গোলযোগের সম্ভাবনা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিলেন না নাবার্ডের কর্মকর্তা এস পদ্মনাভন। বললেন, ‘‘হয় ব্যাঙ্কগুলো আগে জল-মেশানো হিসেব দিত। না হলে পশ্চিমবঙ্গের মেয়েরা ৪% সুদে ব্যাঙ্কে টাকা না রেখে বাজারে টাকা খাটাচ্ছে।’’
কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে এক বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়ের পরিমাণে সামান্যই হেরফের হয়েছে প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশায় গোষ্ঠী পিছু কমেছে ৯১ টাকা, অন্ধ্র প্রদেশে বেড়েছে ১০৪২ টাকা। পশ্চিমবঙ্গেই কেন জাতীয় ব্যাঙ্কগুলো এত ভুল তথ্য দিল, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। পঞ্চায়েত দফতরের নিজস্ব পরিসংখ্যানও দেখাচ্ছে একই ছবি। পঞ্চায়েত দফতরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিতোষ রায় জানালেন, ২০১০-১১ সালে বিপিএল মেয়েদের (SGSY) গোষ্ঠীগুলোর মোট সঞ্চয় ছিল ১৯৮ কোটি টাকা, ’১১-১২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি টাকা।

কোথায় কী হাল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর
গোষ্ঠী প্রতি
সঞ্চয়*
গোষ্ঠী প্রতি
ঋণ*
যত গোষ্ঠী ঋণ
পেয়েছে (শতাংশ)
অন্ধ্রপ্রদেশ ৯৯৬২ ২১৫,৮৭৫ ২৫
তামিলনাড়ু ৮৫৪১ ১০৭,৪৪৩ ১৯
পশ্চিমবঙ্গ ৫৪৯৯ ৫৫,৪৮১ ১৪
ভারত ৮২৩০ ১৪৪,০৪৬ ১৪

(* টাকার অঙ্কে)

সঞ্চয় কমছে ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতেও। রাজ্য সরকারের স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিক মোবাস্সের আলি বৈদ্য জানালেন, কিষান বিকাশ পত্র তুলে দেওয়ায়, আর জনপ্রিয় সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে কমিশন, বোনাস ছেঁটে ফেলায়, ডাকঘরে সঞ্চয় দ্রুত কমছে। ‘‘তবে সর্বোপরি দায়ী চিটফান্ডের মতো সংস্থাগুলি, যারা ডাকঘরের এজেন্টদের এবং গ্রাহকদের প্রভাবিত করছেন,’’ বললেন তিনি। এজেন্টদের ২০-২৫ শতাংশ কমিশন দিয়ে এরা গ্রাহক আকর্ষণ করছে। যে হেতু রাজ্যে মাত্র পাঁচটি নন-ব্যাঙ্কিং সংস্থার অনুমোদন রয়েছে আমানত সংগ্রহের, তাই দিনমজুর, খেতমজুররা অত্যন্ত ঝুঁকি নিচ্ছেন, বলে মনে করেন তিনি।
ব্যাঙ্ক থেকে মেয়েদের ঋণগ্রহণের হারও কমেছে, দেখাচ্ছে নাবার্ডের রিপোর্ট। রাজ্যে ২০১০-১১ সালে যত গোষ্ঠী ঋণ নিয়েছিল, পরের বছর নিয়েছে তার চাইতে ৩৩ হাজার কম গোষ্ঠী। বিপিএল মেয়েদের গোষ্ঠী কমেছে ৭ হাজার, বলছে পঞ্চায়েত দফতর। রাজ্যের গোষ্ঠীগুলিকে দেওয়া ঋণের মোট অঙ্ক কমেছে ২৪ কোটি টাকা।
রাজ্যে যাঁরা ঋণ পেয়েছেন, তাঁদের প্রতি করুণা জাগে যদি দেখা যায় ভারতের প্রেক্ষিতে। অন্ধ্র প্রদেশে একটি মেয়ে বছরে গড়ে ২১ হাজার টাকা ঋণ পেয়েছে, উত্তরাখণ্ডে ১৪ হাজার টাকা, তামিল নাড়ুতে ১০ হাজার টাকা। পশ্চিমবঙ্গে জুটেছে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সমবেত মঞ্চ ‘সেল্ফ হেল্প গ্রুপ প্রোমশনাল ফোরাম’-এর তরফে তরুণ দেবনাথ বলেন, ‘‘আমাদের মঞ্চের নিজস্ব সমীক্ষাও ইঙ্গিত দিচ্ছে, ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ, বাজার তৈরির চেষ্টায় ঘাটতি রয়েছে।” রাজ্য সরকারের নানা দফতরের কিছু কর্তাও স্বীকার করলেন, গরিব মেয়েদের গোষ্ঠী তৈরি করা, উৎসাহিত করায় ভাটা পড়েছে।
আশঙ্কা কেবল সঞ্চয়ের নিরাপত্তা নিয়েই নয়। নব্বইয়ের দশকের শেষে এ রাজ্যের গ্রামে মেয়েদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল। পঞ্চায়েতে নিয়মিত মিটিং, প্রশিক্ষণ শিবির, ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ, গ্রাম সভার বৈঠকে যোগদান, এই সবই মেয়েদের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে বদলের সূচনা করেছিল। মেয়েদের দল মদের ভাটি ভেঙ্গে, পারিবারিক নির্যাতনের সমবেত প্রতিবাদ করে গ্রাম সমাজের পরিচিত নকশা পাল্টে দিয়েছিল। স্বনির্ভর গোষ্ঠী আন্দোলন স্তিমিত হয়ে এলে পুরনো নকশায় ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.