কিষেণজির শূন্যস্থান পূরণ হতে চলেছে জঙ্গলমহলে। পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে তাদের এক প্রথম সারির সদস্যকে দায়িত্ব দিয়েছে সিপিআই (মাওবাদী)-এর সেন্ট্রাল রিজিওন্যাল ব্যুরো (সিআরবি)। কাদ্রি সত্যনারায়ণ রাও ওরফে ‘কোসা’ নামে ওই শীর্ষনেতাই জঙ্গলমহলের দায়িত্ব সামলাবেন বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও বিহারে কোসার গতিবিধির খবর পাওয়া গিয়েছে। আগামী ২৪ নভেম্বর কিষেণজির মৃত্যুর এক বছরের মাথায় কোসার ছক অনুযায়ী এ রাজ্যে মাওবাদীরা বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে বলে সতর্ক করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, মাও-বাহিনীর কমান্ডার কোসা গেরিলা হামলার নেতৃত্বে দক্ষ। তাঁর ছবি-সহ সতর্কবার্তাটি সোমবার সন্ধ্যায় জঙ্গলমহলের পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে এসে পৌঁছয়। তারপরই মঙ্গলবার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন থানার প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষ। ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসেই বৈঠক হয়। তবে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে “কিছু বলব না” বলে এড়িয়ে যান ভারতীদেবী।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বছর বাহান্নর কাদ্রি সত্যনারায়ণ রাও মাওবাদী সংগঠনে ‘সাধু’ ও ‘গোপান্না’ নামেও পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহারের মতো রাজ্যে (যেখানে সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলাতেন কিষেণজি) মাওবাদী সংগঠন ঢেলে সাজার দায়িত্ব বর্তেছে তাঁর উপর। ইতিপূর্বে ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য বিশেষ জোনাল কমিটির সম্পাদকের পদ সামলেছেন তিনি। ২০১০ সালে দন্তেওয়াড়ায় ৭৬ জন সিআরপি জওয়ানের মৃত্যুর ছকও কষেছিলেন কোসাই। কিছুদিন আগে ঝাড়খণ্ড ও বাংলার সীমানায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন তিনি। জঙ্গলমহলেও কয়েকবার ঘুরে গিয়েছেন।
গত বছর ২৪ নভেম্বর জামবনির বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর গুলিতে কিষেণজি নিহত হওয়ার পর এ রাজ্যে একের পর এক শীর্ষ মাওবাদী নেতা-নেত্রী আত্মসমর্পণ করেন। অনেকে ধরাও পড়েন। ‘উন্নয়ন দিয়ে সন্ত্রাস মোকাবিলা’ করতে উদ্যোগী হয় তৃণমূল সরকার। গত এক বছরে কোনও বড় ধরনের নাশকতা ঘটেনি। জনসংযোগ বাড়াতে ফুটবল প্রতিযোগিতা, তিরন্দাজি, ক্লাবগুলিকে অনুদান-সহ নানা কর্মসূচি নিয়েছে যৌথ বাহিনী। তবে তার মধ্যেও যে মাওবাদীরা তলে তলে সংগঠনের কাজ করে গিয়েছে, তা এই গোয়েন্দা-বার্তা থেকেই স্পষ্ট।
কিষেণজি’র মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ১৯-২৫ নভেম্বর ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালন করছে মাওবাদীরা। গত কয়েকদিনে জামবনি ও বিনপুরে পোস্টার-ব্যানার দেওয়া হয়। যৌথ বাহিনী দ্রুত সেগুলি সরিয়ে দেয়। প্রতি বছর ২-৮ ডিসেম্বর সিপিআই (মাওবাদী) তাদের সশস্ত্র গেরিলা বাহিনী (পিএলজিএ)-র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এ বছর সেই কর্মসূচি এগিয়ে আনা হচ্ছে। ২ ডিসেম্বরের পরিবর্তে তা শুরু হবে কিষেণজির মৃত্যুবার্ষিকী ২৪ নভেম্বর থেকেই। এই পরিস্থিতিতে কোসার আগমনবার্তা জঙ্গলমহলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়াল পুলিশ-প্রশাসনের।
|