নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্য সরকার কলকাতা ও শহরতলির বাসের ভাড়া যে-ভাবে সংশোধন করেছিল, তা বাস-মালিকদের খুশি করতে পারেনি।
আর মঙ্গলবার দূরপাল্লার বাসের ভাড়া যে-ভাবে সংশোধন করা হল, তাতে এই শিল্পটাই শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না, বাস-মালিকেরা তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
প্রতি স্টেজে এক টাকা করে বাড়িয়ে কলকাতা ও শহরতলির বাসভাড়া সংশোধন করেছিল রাজ্য।
কিন্তু দূরপাল্লার বাসের ভাড়া সংশোধনের ক্ষেত্রে সরকার সে-পথে হাঁটেনি। ৬ নভেম্বর দূরপাল্লার বাসের ভাড়ার যে-তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে ভাড়া বৃদ্ধির হার সরাসরি অর্ধেক করে দিল রাজ্য। দূরপাল্লার বাসে গত ১৫ দিন প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা হারে বর্ধিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছিল। তা সংশোধন করে প্রতি কিলোমিটারে পাঁচ পয়সা করে দেওয়া হয়েছে।
সরকার কলকাতা ও শহরতলিতে সংশোধিত ভাড়া ঘোষণা করার পরে অনেক মালিকই বাস বসিয়ে দিয়েছিলেন। এ ভাবেই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তাঁরা।
আর দূরপাল্লার বাসের ভাড়া যে-ভাবে বাড়ল, তাতে মালিকদের মনে হয়েছে, তাঁদের পক্ষে এই ভাড়ায় বাস চালানো সম্ভব নয়। তাঁদের কারও কারও মন্তব্য, “বাসভাড়া বাড়ার দাবিটা আমাদের কেন ছিল, রাজ্য সরকার সেটা বুঝতেই পারল না। এটা হাস্যকর ব্যাপার। রাজ্য সরকার এ বার পরিবহণ শিল্পটাকেই তুলে দেওয়ার পাকা ব্যবস্থা করে দিল।”
কলকাতা ও জেলা শহরগুলিতে যে-সব বাস ২৪ কিলোমিটারের বেশি চলে, সেগুলিতে সংশোধিত ভাড়া কী হবে, তা নিয়েও বিভ্রান্তি ছিল চরমে। এ দিন পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, ২৪ কিলোমিটারের পরে চার কিলোমিটার অন্তর বাসভাড়া এক টাকা করে বেড়ে যাবে। আগে তিন কিলোমিটার অন্তর এক টাকা করে বাড়ত। ভিন্ রাজ্যের যে-সব বাস এ রাজ্যে চলে, তাদেরও ভাড়া বাড়বে দূরপাল্লার বাসের সংশোধিত ভাড়া বৃদ্ধির হিসেব মেনেই। |
সাংবাদিক বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মদন মিত্র। —নিজস্ব চিত্র |
ভাড়ার সংশোধিত হারে অসন্তুষ্ট বাস-মালিকেরা ২৩ নভেম্বর বৈঠকে বসছেন। সেখানে তাঁরা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন বলে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস সূত্রের খবর। আর সরকার তাদের ভাড়া বৃদ্ধির দাবি না-মানায় ২৯ এবং ৩০ নভেম্বর ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে লাক্সারি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক সৈকত পাল এ দিন মহাকরণে বলেন, ‘‘পরিবহণমন্ত্রী ভাড়া বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তা পূরণ না-হওয়ায় আমরা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হচ্ছি।” এখন লাক্সারি ট্যাক্সিতে প্রথম ১০ ঘণ্টার জন্য ৪৬৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়। সংগঠনের দাবি, সেটা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করতে হবে।
কলকাতা ও শহরতলিতে সংশোধিত বাসভাড়ার তালিকা নিয়ে ঝামেলা চলছেই। সংশোধিত বাসভাড়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল গত শুক্রবার। কিন্তু চার দিনেও সেই ভাড়ার তালিকা বাস-মালিকদের হাতে পৌঁছয়নি। ওই তালিকা না-থাকায় যাত্রীদের সঙ্গে বাসকর্মীদের বচসা, হাতাহাতি হচ্ছে। তার জেরে বেশ কয়েকটি রুটে বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন মালিকেরা। দূরপাল্লার বাসের মালিকেরাও একই ভয় করছেন। তাঁদের বক্তব্য, নতুন ভাড়ার তালিকা না-আসা পর্যন্ত পুরনো হারে ভাড়া নিতে দেওয়া হোক। নইলে তালিকা না-পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাতে পারবেন না।
বাসভাড়ার বিজ্ঞপ্তি ও তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি কেন?
এর দায় বিগত বামফ্রন্ট সরকারের উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর দাবি, “বাম আমলে বাসভাড়ার সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞপ্তির কোনও সম্পর্ক থাকত না। তখন থেকেই ভাড়া নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গিয়েছে। আমরা তা কাটানোর চেষ্টা করছি।” কী ভাবে সেই বিভ্রান্তি কাটানোর চেষ্টা হচ্ছে, বাস-মালিক ও যাত্রীরা তা বুঝতে পারছেন না। কবে সংশোধিত ভাড়ার তালিকা পাওয়া যাবে, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
পার্থবাবু বলেন, “আরটিও যে-তালিকা তৈরি করবে, আমরা দেখে চূড়ান্ত সিলমোহর দেওয়ার পরেই তা প্রকাশ করা হবে।” কবে আরটিও তালিকা তৈরি করবে, তার দিনক্ষণ জানাতে পারেননি শিল্পমন্ত্রী।
এই বিভ্রান্তির মধ্যেই বাস-মালিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, ভাড়া নিয়ে সরকারের ভূমিকা পরিবহণ শিল্পকে আরও পিছিয়ে দেবে। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতা দীপক সরকার বলেন, “ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে তো ২০১০ সালে বামফ্রন্ট সরকার থাকার সময়েই আলোচনা হয়েছিল। তার পরে কত বার ডিজেলের দাম বেড়েছে! অথচ ভাড়া কি সেই হারে বাড়ল? বাস-মালিকদের আখেরে কোনও লাভই হল না।” এক দফা ভাড়া বাড়ার পরে তা কমিয়ে দেওয়ায় মালিকেরা ক্ষুব্ধ। দীপকবাবু বলেন, “ভাড়া বাড়ার পরে কোথাও কোনও গণ্ডগোলের খবর এল না। অথচ বলা হল, মানুষ অসন্তুষ্ট। তাই ভাড়া কমানো হচ্ছে।”
একই সুর জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতা সাধন দাসের। তিনি বলেন, “আমাদের দারুণ ক্ষতি হল। আমরা ২৩ তারিখে বৈঠকে বসে পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।” |