বাহুল্যের কোপে ডিএ-ও মহার্ঘ রাজ্যে
টানাটানির সংসারে নির্ধারিত মাস-মাইনে জোগানোই দুষ্কর, বাড়তি তো পরের কথা!
অতএব, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতাতেও ভাটার টান। সেই টান দিন দিন বাড়ছে। সরকারি তথ্য বলছে, রাজ্য-কর্মীদের মহার্ঘভাতা প্রাপ্তির তালিকায় একেবারে পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ!
এমনিতেই আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি, ব্যয়ে আবার বাহুল্যের বহর বিস্তর। তাই রোজগার বাড়লেও রোজের খরচ চালাতেই পশ্চিমবঙ্গের কোষাগারে নিত্য দিন যেন ‘গেল গেল’ রব। নিজস্ব উন্নয়নের কাজ প্রায় শিকেয়, এমনকী বেতন-পেনশনের সংস্থান করতেও ঋণ ছাড়া গতি থাকছে না। তাই মূল্যস্ফীতির মোকাবিলায় মহার্ঘভাতা (ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স, সংক্ষেপে ডিএ) প্রদানের দৌড়েও কেন্দ্র তো বটেই, দেশের অন্য অনেক রাজ্যের সঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গ তাল রাখতে পারছে না।
সাধারণত কেন্দ্র তাদের কর্মীদের যে হারে ডিএ দেয়, রাজ্যগুলো তা অনুসরণ করে। সর্বশেষ পে কমিশনের সুপারিশও তা-ই। অর্থ দফতরের তথ্য: কেন্দ্র এ পর্যন্ত ৭২% ডিএ দিয়ে দিয়েছে। কিছু রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিচ্ছে, কিছু রাজ্য সামান্য কম হারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মীরা ডিএ পাচ্ছেন সাকুল্যে ৪৫%। অর্থাৎ, ২৭% কম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত অগস্টে ঘোষণা করেছেন, আগামী জানুয়ারিতে রাজ্য-কর্মীরা আর এক কিস্তি (৬%) ডিএ পাবেন। মানে ডিএ হবে ৫১%। তবু ফারাকটা কমার বদলে বাড়বে বলে আশঙ্কা অর্থ-আধিকারিকদের। কেন?
ওঁদের বক্তব্য, জানুয়ারিতে কেন্দ্রও আর এক কিস্তি ডিএ (সম্ভবত ৯%) ঘোষণা করবে। সে ক্ষেত্রে তখন কেন্দ্র-রাজ্য ডিএ-ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াবে অন্তত ৩০%।
প্রাপ্য ডিএ সময়ে দিতে না-পারার কারণ হিসেবে চরম আর্থিক সঙ্কট, এবং সেই সঙ্কটের জন্য পূর্বতন বাম জমানার দিকে একাধিক বার আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁদের অভিযোগ: আগের সরকার রাজ্যকে দেউলিয়া করে দিয়ে গিয়েছে। তাই ঋণের সুদ গুনতেই এত টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে যে, পাওনা মেটানোর ‘মানসিক ইচ্ছে’ থাকলেও সব সময় তা পূরণ করা যাচ্ছে না। যদিও অর্থ-সূত্রের খবর: রাজস্ব আয় বেশি হবে ধরে নিয়ে চলতি অর্থবর্ষের বাজেট তৈরির আগে নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, এই অর্থবর্ষে ১৩% ডিএ-র খরচ জুড়েই যেন সব হিসেব-নিকেশ করা হয়। বস্তুত গত সাত মাসে প্রত্যাশা ছাপিয়ে রাজস্ব আদায়ও হয়েছে বলে অর্থ-সূত্রের দাবি। সোমবার বণিকসভার অনু্ষ্ঠানে অমিতবাবু নিজেও বলেছেন, গত অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে রাজস্ব আদায় ৩৫% বেড়েছে। তবু ডিএ কেন মাত্র ৬%?
এ জন্য কার্যত বাহুল্যের ব্যয়কেই দায়ী করছে সরকারি মহলের একাংশ। প্রশ্ন উঠছে পরিকল্পনা-বহির্ভূত বিপুল বরাদ্দ নিয়ে। এক কর্তার কথায়, “এখন অগ্রাধিকারের তালিকায় মূলত উৎসব-অনুষ্ঠান। উন্নয়ন-পরিষেবায় যুক্ত বিভিন্ন দফতর পরিকল্পনা খাতে বাজেট বরাদ্দের টাকা পাচ্ছে না। অথচ পরিকল্পনার বাইরে প্রচুর টাকা যাচ্ছে।” ফলে ডিএ সম্পর্কে প্রাক-বাজেট পরিকল্পনার প্রতিফলনও বাস্তবে পড়ছে না বলে মনে করছে এই মহল। উদাহরণও দিচ্ছেন তাঁরা। কী রকম?
যেমন ইমাম-ভাতা, বিষ-মদে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ও চলচ্চিত্র উৎসবের পিছনে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর, মেলা, উৎসব, সংবর্ধনা, উদ্বোধন, শিলান্যাস ইত্যাদিতে অন্তত ২৫ কোটি। তার উপরে মনীষীদের জন্মদিন পালন, রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন ক্লাবকে আর্থিক অনুদান প্রভৃতি। হিসাব-বহির্ভূত খরচের অতি সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হিসেবে রবীন্দ্র সরোবরে সরকারি উদ্যোগে দুর্গামূর্তি সংরক্ষণের সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গও তুলেছেন কেউ কেউ। এ বারের বাজেটে পরিকল্পনা-বহির্ভূত খরচ ধরা হয়েছিল ৮২ হাজার কোটি। ইতিমধ্যে তিনশো কোটি বাড়তি গলে গিয়েছে।

ভাতার খাতা
রাজ্য ডিএ*
রাজ্য ডিএ*
পঞ্জাব ৭২ ওড়িশা ৬৫
গুজরাত ৭২ ঝাড়খণ্ড ৬৫
কেরল ৭২ মধ্যপ্রদেশ ৬৫
বিহার ৭২ পশ্চিমবঙ্গ ৪৫
অসম ৭২ কেন্দ্র ৭২
উত্তরপ্রদেশ ৭২ * হিসেব শতাংশে

সব মিলিয়ে আয় ছাপিয়ে ব্যয় বহুগুণ। ফলে ফি মাসে বাজার থেকে টাকা ধার করতে হচ্ছে রাজ্যকে। কিন্তু কর্মী ইউনিয়নগুলোর প্রশ্ন: কেন্দ্র হোক, বা রাজ্য সব সরকারই ঘাটতিতে চলে। অন্য রাজ্য পারলেও পশ্চিমবঙ্গে কেন মহার্ঘভাতায় কোপ?
অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু শুধু বলেছেন, “এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”
অর্থ-সূত্রের খবর: বাম সরকার যখন বিদায় নেয়, তখন কেন্দ্রীয় মহার্ঘভাতার সঙ্গে রাজ্যের ফারাক ছিল ১৬%। তা এতটা বেড়ে যাওয়ার পিছনে বর্তমান সরকারের ‘বেহিসেবি’ অভ্যাসের পাশাপাশি বিগত সরকারের শেষের ক’বছরে ডিএ দেওয়ার ‘অনীহা’কেও দায়ী করছে কর্মী ইউনিয়নগুলির একাংশ। তাদের মতে, অনীহার সেই ট্র্যাডিশন আজও চলছে। কংগ্রেস প্রভাবিত কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের নেতা মলয় মুখোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কোনওটাই রক্ষা করছেন না।” উপরন্তু মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন কর্মী ইউনিয়নের সঙ্গে তিন মাস অন্তর বৈঠকে বসার প্রতিশ্রুতি দিলেও গত অগস্ট পর্যন্ত সাকুল্যে দু’টো বৈঠক হয়েছে। ক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, ডিএ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তোষের মুখোমুখি হতে চান না বলেই আলোচনা এড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নিজের দলের কর্মী ইউনিয়ন কী বলে?
তৃণমূলের ইউনাইটেড স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের নেতা মৃগেন মাইতি বলেন, “কর্মীদের ক্ষোভ থাকতেই পারে। তবু উন্নয়নের কাজ দেখে তাঁরা কষ্টটা মেনে নিয়েছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.