শপথ আজ
পঞ্চায়েতের আগে গ্রামে চোখ, মন্ত্রিত্বে নতুন মুখ
রকারের দেড় বছর পূর্ণ করে তাঁর মন্ত্রিসভায় আরও ৮ নতুন মুখ আনছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন মন্ত্রীদের সম্ভাব্য তালিকায় গ্রামবাংলার প্রাধান্যই উল্লেখযোগ্য। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন সদ্য কংগ্রেসত্যাগী দুই বিধায়ক। তৃণমূল শিবিরের ব্যাখ্যায়, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের দিকে নজর রেখেই মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজভবনে আজ, বুধবার দুপুরে নতুন মন্ত্রীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা।
নতুন মন্ত্রী নেওয়ার পাশাপাশিই মন্ত্রিসভার পুরনো সদস্যদের মধ্যে পাঁচ জনের পদোন্নতি ঘটছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। এর মধ্যে মদন মিত্র, অরূপ বিশ্বাস, সুব্রত সাহা ও মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর পূর্ণমন্ত্রী পর্যায়ে উন্নীত হতে পারেন। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী করার কথা। সরকারি সূত্রে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত যা খবর, নতুন মন্ত্রী হিসাবে আসছেন হাওড়ার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্টুরাম পাখিরা ও গিয়াসুদ্দিন মোল্লা, বর্ধমানের স্বপন দেবনাথ, নদিয়ার পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা, হুগলির বেচারাম মান্না, মালদহের কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী এবং মুর্শিদাবাদের হুমায়ুন কবীর। শেষ দু’জন এ দিনই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য কংগ্রেসের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। নবাগতদের মধ্যে কৃষ্ণেন্দু ও রাজীবের পূর্ণমন্ত্রী হওয়ার কথা। মন্টুরাম হচ্ছেন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী।
বাম আমলে মন্ত্রিসভায় ‘কাজের লোকে’র বদলে জেলার কোটা পূরণ বেশি গুরুত্ব পেত বলে বিস্তর সমালোচনা হত। তৃণমূলের শাসনে দেড় বছরের মাথায় নতুন মুখ অন্তর্ভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পুরনো মন্ত্রীদের মধ্যে যাঁদের মর্যাদা বাড়ানো হচ্ছে, তাঁদের কয়েক জনের পারফরম্যান্স নিয়ে জনমানসেই প্রশ্ন আছে। আবার নতুন মুখদের মধ্যে কয়েক জনের এলাকায় ভাবমূর্তি স্বচ্ছ নয়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে তিনি গ্রামের প্রতিনিধিদেরই গুরুত্ব দিয়েছেন। নতুন ৮ জনের মধ্যে আবার সংখ্যালঘু দু’জনও রয়েছেন। এমনিতেই বিধানসভা ভোটের আগে ছোট মন্ত্রিসভা গড়ার ঘোষণা করে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক মন্ত্রীই নিয়েছিলেন মমতা। এ বারের সম্প্রসারণেও পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের রাজনৈতিক তাগিদই গুরুত্ব পাচ্ছে। ফলে, এই সম্প্রসারণ এবং রদবদলে সরকারি কাজে কাঙ্খিত গতি আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে প্রশাসনিক মহলে।
এরই মধ্যে ফের এক প্রস্ত বিভ্রান্তি এবং নাটক হয়েছে উত্তর কলকাতার তৃণমূল বিধায়ক শশী পাঁজাকে ঘিরে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিনও দলীয় মহলে প্রস্তাবিত যে নতুন মন্ত্রীদের নাম বলেছিলেন, তাতে শশীদেবী ছিলেন। তখন নতুন মন্ত্রীর তালিকা ছিল ৯ জনের। পরে রাতে সরকারি স্তরে যে তালিকা মোটামুটি চূড়ান্ত হয়েছে, তাতে শশীদেবীর নাম নেই বলেই সরকারি সূত্রের খবর। এর আগেও এক বার স্রেফ কলকাতায় উপস্থিত না-থাকায় তাঁর নাম উঠেও কাটা গিয়েছিল! শেষ মুহূর্তে শপথের সময় ঠিক হয়েছিল, যখন শশীদেবী কলকাতায় ছিলেন না! এক বাম বিধায়কের কটাক্ষ, “সরকার হওয়ার পরে প্রথম শপথের দিনই কাশীনাথ মিশ্রের নাম ঘোষণা করেও বাতিল হয়েছিল। এখনও সেই ট্র্যাডিশন চলছে! শপথ না-নেওয়া পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়, কে মন্ত্রী হচ্ছেন!”
রাজ্যের মোট ২৯৪ জন বিধায়কের মধ্যে নিয়মানুযায়ী ১৫%-কে মন্ত্রী করা যায়। সেই হিসাবে রাজ্যে সর্বাধিক ৪৪ জন মন্ত্রী হতে পারেন। কংগ্রেস সরে আসার পরে মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা এখন ৩৬। এর সঙ্গে নতুন ৮ জন যোগ হলে হলে সর্বোচ্চ সীমার ৪৪ জনই মন্ত্রী হবেন। নতুন মুখ নেওয়ার পাশাপাশিই সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডলের মতো কেউ মন্ত্রিসভা থেকে বাদ যেতে পারেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে প্রশাসনিক মহলে। যে হেতু দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকেই আরও দু’জন নতুন মন্ত্রী আসছেন, তাই শ্যামলের উপরে কোপ পড়তে পারে বলে তৃণমূলেরও একটি সূত্রের অভিমত।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন মহাকরণ থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় মদন ও অরূপের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন। যার ব্যাখ্যায় পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “ধরে নিন যাঁদের মাথায় হাত রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী, তাঁরা পূর্ণমন্ত্রী হচ্ছেন!”
প্রসঙ্গত, এ দিনই বিধানসভায় গিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিধায়ক-পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রেজিনগরের হুমায়ুন ও ইংরেজবাজারের কৃষ্ণেন্দু। কংগ্রেস নেতৃত্বের উপরে ক্ষোভ অভিমানেই তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য হলেন বলে আরও এক বার দাবি করেছেন তাঁরা। কিন্তু কংগ্রেস ভাঙিয়ে মন্ত্রী করার ঘটনায় অন্য রকম প্রতিক্রিয়াও তৈরি হচ্ছে।
দুই পদত্যাগী বিধায়ককে নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে না-চাইলেও কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার প্রশ্ন, “কংগ্রেস-তৃণমূল জোট বেঁধে রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরে যে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অনাস্থায় সমর্থন চাইতে আলিমুদ্দিনে যাওয়ার কথা বলেন, তাঁদের কাছে কী নীতি-দর্শন প্রত্যাশা করা যায়?”

ওঁরা মন্ত্রী হলেন
নাম: হুমায়ুন কবীর ডাকনাম: খবির
বয়স: ৪৯ শিক্ষা: মাধ্যমিক পাশ
পেশা: কখনও ইটভাটা, কখনও বা ‘ট্রান্সপোর্টের কারবার’। বেশ চলছে।
কী ভাবে রাজনীতিতে: দাদা গোলাম মৌলা ছিলেন পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থী। পরে অতীশ সিংহের হাত ধরে ১৯৭৭-এ কংগ্রেসের মিছিলে। বেলডাঙার কংগ্রেস বিধায়ক নূরুল ইসলাম ‘রাজনৈতিক গুরু’। কংগ্রেসের টিকিটে ৯৩-এ সোমপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে দাঁড়িয়ে হার। তারপর কখনও কংগ্রেস কখনও বা তৃণমূলের টিকিটে পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ। সুবিধে হয়নি তেমন। শেষতক অধীর চৌধুরীর বদান্যতায় দেড় বছর আগে কংগ্রেসের টিকিটে রেজিনগরের বিধায়ক।
সম্পত্তি: নিজের আর ছেলের নামে রেজিগরে দু’টি বাড়ি। পিতা-পুত্রের দু’টি বাজখাই গাড়ি— স্করপিও আর হুন্ডাই। রয়েছে খান কতক বাইকও।
প্লাস পয়েন্ট: সবার সঙ্গে মেলামেশা করেন।
মাইনাস পয়েন্ট: বড্ড বেশি ডাকাবুকো!
জনশ্রুতি: ঘন ঘন দল-বদল করতে ওস্তাদ।
প্রতিশ্রুতি: “এখনই কিছু বলছি না। আগে দেখি কী দফতর পাই।”



নাম:
পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। ডাক নাম: নন্দদা।
বয়স: ৫৮। শিক্ষাগত যোগ্যতা: বি.কম।
পেশা: রাজনীতি, রাজনীতি এবং রাজনীতি।
কী ভাবে রাজনীতিতে: ঠাকুর্দা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ছাত্রজীবন থেকেই ‘পলিটিক্সে’। সত্তরের দশকে কংগ্রেসে হাতেখড়ি। তৃণমূল গঠনের শুরু থেকেই মমতার আস্থাভাজন। দলের ইচ্ছায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর। ২০০১ সালে নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। সিপিএমের প্রভাবশালী নেতা বিশ্বনাথ মিত্রকে হারান। সেই শুরু। তারপরে এক টানা ০১, ০৬ এবং ১১, তিন বারের বিধায়ক। ২০০৫-২০০৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নবদ্বীপের পুরপ্রধানের দায়িত্বে। এখনও তিনি নবদ্বীপ পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর।
সম্পত্তি: ব্যক্তিগত কোনও সম্পত্তি নেই। পৈতৃক বাড়িতে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে বসবাস। বিধায়ক ভাতা হিসেবে যা পান তাতেই চলে।
প্লাস পয়েন্ট: সৎ ও সংযমী মানুষ হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
মাইনাস পয়েন্ট: অসম্ভব রাশভারি।
জনশ্রুতি: গোঁফ দিয়ে যায় চেনা!
প্রতিশ্রুতি: আগে তো মন্ত্রী হই!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.