বাসের বর্ধিত ভাড়া নিয়ে দুই মন্ত্রীর দুই বক্তব্য। পরিবহণ দফতরের তালিকা এক, শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্য আর এক। ফলে ভাড়া নিয়ে যাত্রীরা বিভ্রান্ত। বিভ্রান্ত বাসকর্মীরাও। দুইয়ের মাঝে পড়ে যাত্রীদের হাতে প্রায়ই নিগৃহীত হতে হচ্ছে অভিযোগ তুলেছেন বাসকর্মীরা। হাওড়া, হুগলিতে এই নিয়ে বাস বন্ধের কারণে ইতিমধ্যেই বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। এ বার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটেও সেই ছবি। বাস ভাড়া নিয়ে বিভ্রান্তিতে বাসকর্মীদের নিরাপত্তার দাবিতে বসিরহাট মহকুমার অধিকাংশ রুটের বাস বন্ধ রেখে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন বাস শ্রমিক এবং মালিকেরা।
|
বাস বন্ধ করে কর্মীদের বিক্ষোভ। |
গত শনিবার থেকে বসিরহাট, হাসনাবাদ এবং গাদিয়াড়া-কলকাতা রুটের প্রায় ৭০টি বাস বন্ধ। মঙ্গলবার বসিরহাটের ইছামতী সেতুর কাছে ইটিন্ডা রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান আইএনটিইউসি সমর্থিত সংগঠনের সদস্যেরা। বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “বাস বন্ধ করায় যাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে।
সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আরটিওকে জানানো হয়েছে।”
শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৭ নভেম্বর থেকে কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা ভাড়া বাড়িয়ে পরিবহণ দফতর থেকে ভাড়ার তালিকা পাঠানোর পর তা কার্যকর করা হয়। তার দিন তিনেক পর ১০ নভেম্বর শিল্পমন্ত্রী এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানান, যাত্রীভাড়া আগের থেকে ১ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এরপর ভাড়া কত হবে তা নিয়ে শুরু হয় যাত্রী এবং বাস শ্রমিকদের বিবাদ। শিল্পমন্ত্রী বলার পর যাত্রীরা পরিবহণ দফতরের দেওয়া ভাড়ার তালিকা মানতে না চাওয়ায় বিবাদ চরমে ওঠে। কয়েকদিন আগে এমনই এক বচসায় জড়িয়ে পড়েন বসিরহাট, হাসনাবাদ থেকে কলকাতাগামী একটি রুটের বাস শ্রমিকেরা। তাঁদের প্রচণ্ড মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। |
রাস্তায় বেরিয়ে বিপাকে যাত্রীরা। |
কয়েকজন বাসকর্মী গাড়ি নিয়ে থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রতিবাদে গত শনিবার থেকে ওই রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বসিরহাট, হাসনাবাদ থেকে ধর্মতলা, হাওড়া, শ্যামবাজার, গড়িয়া, গাদিয়াড়া এবং তারকেশ্বরের ৮টি রুটের বাস বন্ধ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠকে বসিরহাট মহকুমা বাস মালিক সিন্ডিকেটের যুগ্ম সম্পাদক প্রভাস দাস বলেন, “পরিবহণ দফতর না শিল্পমন্ত্রী, কার কথা মেনে ভাড়া নেওয়া হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। প্রথমে পরিবহণ দফতরের তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নেওয়া হচ্ছিল। শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্যের পর যাত্রীরা সরকারি তালিকা মানতে চাইছেন না।
বাসকর্মীরা যাত্রীদের রোষের শিকার হচ্ছেন তাঁদের মারধর করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।”
মহকুমা আইএনটিইউসি পরিচালিত সংগঠনের সভাপতি মোহন বসু বলেন, “দুই মন্ত্রীর দু’রকম বক্তব্যে মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছেছে। শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্যের পর যাত্রীরা সরকারি তালিকা দেখতে চাইছেন না। কিছু বলতে গেলে বাসকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে।” মোহনবাবুর কথায়, “সরকারি তালিকা মেনে আমরা ভাড়া নিতে ইচ্ছুক। কিন্তু নিরাপত্তা দেবে কে? অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীকে সঠিক ভাড়ার তালিকার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করছি।” |