|
|
|
|
পূর্ব মেদিনীপুর |
সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রস্তুতি শুরু |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রস্তুতি শুরু করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা খাদ্য দফতর। গত বছরের তুলনায় আরও বেশি ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে এ বার। বাড়ানো হয়েছে দামও। তবে, রাজ্য সরকার আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে ধান কেনা শুরু করার কথা ঘোষণা করলেও পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকাংশ এলাকায় এখনও আমন ধান ওঠেনি। কিছু এলাকায় উচ্চফলনশীল ধান তোলার কাজ শুরু হয়েছে সবে। জেলা খাদ্য দফতরের বক্তব্য, মাঠ থেকে ধান ওঠার পরেই চাষিদের দ্রুত সহায়ক মূল্যে তা বিক্রির সুযোগ করে দিতে চায় প্রশাসন। ধানের অভাবী বিক্রি রুখতে এ বার দ্রুত ধান কেনার কাজ শুরু করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি গান্ধী হাজরা বলেন, “জেলায় সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রস্তুতি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে আরও ১০ শতাংশ বেশি ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। এতে জেলার কৃষকরা বেশি ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন।”
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে ধান কেনার সরকারি সহায়ক মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এতে চাষিদের ধান বিক্রির আগ্রহ বাড়বে বলে আশা খাদ্য দফতরের। গত বছর মোটা ধানের দাম ছিল কুইন্ট্যাল প্রতি ১১০০ টাকা। এ বছর তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২৫০ টাকা। সরু ধানের দাম গত বছর ছিল ১১৪০ টাকা, এ বছর তা হয়েছে ১২৮০ টাকা। গত বছর জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৩ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ৮২ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন। জেলা খাদ্য নিয়ামক নবরাজ বড়ুয়া বলেন, “গতবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছু কম চাল সংগ্রহ হলেও তা আগের বছরের চেয়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন বেশি। এ বার ১ লক্ষ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা নেওয়া হয়েছে।” ধান কেনার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী বুধবার জেলা প্রশাসনিক অফিসে বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।
ধান কেনার জন্য বিভিন্ন বেনফেড, কনফেড, নাফেড এর মত সমবায় সংস্থা ও রাইস মিলগুলিকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে শিবির করে ধান কেনা হয়। জেলা খাদ্য দফতরের জানায়, পূর্ব মেদিনীপুরে ৩৪টি রাইস মিল রয়েছে। ৭টি বড়, বাকি ২৭টিই ছোট। ফলে বেশি চাল তৈরির ক্ষমতা নেই এই জেলায়। আবার ৩৪টি রাইস মিলের মধ্যে ২৮টি কাঁথি মহকুমায়, ৩টি তমলুক মহকুমায়, এগরায় ২টি ও হলদিয়া মহকুমায় মাত্র ১টি রাইস মিল আছে। খাদ্য নিয়ামকের মতে, এগরা, তমলুক ও হলদিয়া মহকুমায় আরও রাইস মিল তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির জন্য চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ধানের দাম ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেওয়া হয়। গত বছর সময়মত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। তাই চলতি বছর যে সব চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই তাদের অ্যাকাউন্ট খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলার কৃষকদের অবশ্য অভিযোগ, গত বছর ঘোষণা সত্বেও সরকারি মূল্যে ধান বিক্রির যথেষ্ট সুযোগ ছিলনা। বিশেষত রাইস মিলগুলি ধান কেনা নিয়ে নানাভাবে হয়রানি করেছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি গান্ধী হাজরা এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “রাইস মিলগুলি ধান কেনা নিয়ে আগ্রহ দেখায় না বলে অভিযোগ এসেছে। রাইস মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়েছে। তাঁরা ধান কেনার জন্য পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।”
সারা ভারত কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনের জেলা সম্পাদক নন্দ পাত্রের অভিযোগ, “প্রতি বছর সরকার ধান কেনার ঘোষণা করে কিন্তু উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। ফলে কৃষকরা ধান বিক্রির সুযোগ পাননা।” তাঁর দাবি, “সহায়ক মূল্য আরও বাড়াতে হবে। শিবির করতে হবে প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায়। ধানের সহায়ত মূল্যসহ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এখন থেকেই চাষিদের জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।” |
|
|
|
|
|