শেষ দিনের পিচেও অভাবনীয় ব্যর্থ বাংলার বোলিং |
রাকেশ ধ্রুবর ব্যাটের কানা ছোঁয়া বল যখন ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে নিলেন ঋদ্ধিমান, ঠিক তখনই রোদে ঝলমল করে উঠল ইডেন। বাংলা দলটাও। এতক্ষণ এই রোদটাই তো ছিল না কোথাও। ঘন্টাখানেকের মধ্যে রোদও যেমন উধাও, তেমনই উধাও মনোজদের সাত পয়েন্টের আশাও। তখন যেন সেই কালজয়ী বাংলা গানটা লক্ষ্মী-দিন্দাদের শোনার পক্ষে উপযুক্ত “এ সুযোগ পাবে না ভাই, বল ভাই কী দাম দেবে...”। এই সুযোগ নষ্টের জন্য বোধহয় ভালই দাম দিতে হবে বাংলাকে।
ইনিংস হার বাঁচাতে ২৬৬-র লক্ষ্যে নামা গুজরাতের স্কোরবোর্ডে ১৮-৫ লিখে দেওয়ার পরও বাংলার বোলারদের দৈন্যদশা ফুটে উঠল ম্যাচ শেষে সেই স্কোরবোর্ডেই লেখা সংখ্যাগুলোয়। ২৭২-৮। প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসা সাত পয়েন্টের মধ্যে চার পয়েন্ট ততক্ষণে ছিনতাই করে নিয়েছেন আমদাবাদের ২৬ বছর বয়সি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রুজুল ভট্ট। মঙ্গলবার বাংলার আত্মসমর্পণের বহর দেখে কে বলবে, এই দলের বোলারাই আগের দিন মাত্র ৯ ওভারে বিপক্ষের ব্যাটিংয়ের মুণ্ডচ্ছেদ করে দিয়েছে?
|
দিন্দা মাটিতে। বাংলাও। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
মঙ্গলবারও দিনের প্রথম বলেই বেণুগোপাল রাওকে ফিরিয়ে দিয়ে গুজরাতের ব্যাটিং অর্ডারে ফের কোপ বসিয়েছিলেন সৌরভ সরকার। কিন্তু মুণ্ডহীন গুজরাতি ব্যাটিংয়ের ধর ও লেজের ঝাপটাতেই যে বাংলার বোলিং এমন ধরাশায়ী হবে, তা এক কথায় অভাবনীয়। তাই খেলার পর যখন গুজরাত অধিনায়ক পার্থিব বলছিলেন, “ওদের বোলিং আক্রমণ এখন পর্যন্ত এ বারের রঞ্জিতে আমার দেখা সেরা”, তখন অবাক লাগছিল বই কী। যাঁর সেঞ্চুরির দাপটে শুয়ে পড়ল বাংলা, সেই রুজুল ভট্ট বলছিলেন, “সারা দিন ব্যাট করার পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছিলাম। সেঞ্চুরি-টেঞ্চুরি অত মাথায় ছিল না।”
সৌরভ, সামি, দিন্দা, ইরেশদের কাছ থেকে সেই ‘সাহায্য’টুকু পেয়ে নিশ্চয়ই খুশি তিনি। তবু দিন্দাদের অধিনায়ক মনোজ বলছেন, “আমাদের বোলাররা ভালই বল করেছে। যথেষ্ট চেষ্টা করেছে ওরা। সরাসরি জয় এল না তো আর কী করা যাবে? ওরা এত ভাল ব্যাটিং করল।” এমন অপ্রত্যাশিত ব্যর্থতার পরও যে এমন ঠান্ডা থাকা যায়, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো দলের দোষীদের আড়াল করা যায়, তা বাংলা অধিনায়ক দেখিয়ে দিলেন। বিদ্যেটা বোধহয় ক্যাপ্টেন কুল ধোনির কাছ থেকে শেখা।
শুধু মনোজ কেন, নির্বিকার নির্বাচকরাও। চার দিন ধরে বাংলার ক্রিকেটারদের কাণ্ডকারখানা দেখার পর তাঁদের সিদ্ধান্তটাও বেশ অদ্ভুত। মোহালিতে বাংলার তরী ডুবিয়েছিলেন ব্যাটসম্যান, বোলাররা সবাই মিলে। এই ম্যাচে ডোবালেন বোলাররা। সেই ম্যাচের পর দল থেকে চার জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এই ম্যাচের পর কিন্তু আগামী তিনটি ম্যাচের জন্য একই দল রাখা হল। শুধু জুড়ে দেওয়া হল বাঁহাতি স্পিনার অরিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। নির্বাচকদের প্রধান দীপ দাশগুপ্তর ব্যাখ্যা, “বাইরের ম্যাচ বলে অরিত্রকে ব্যাক-আপ স্পিনার হিসেবে রাখা হল। বাংলার ছেলেরা এই ম্যাচে যে খারাপ খেলেছে, তা বলা যায় না। সে জন্যই একই দল রেখে দেওয়া হল।”
|
বাংলা এখন |
• পঞ্জাব ৩ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট, কোশেন্ট ২.০৭৭
• সৌরাষ্ট্র ২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট, কোশেন্ট ১.৬১০
• মুম্বই ২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট, কোশেন্ট ১.২২০
• বাংলা ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট, কোশেন্ট ০.৮৯১
• মধ্যপ্রদেশ ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট, কোশেন্ট ১.১০১ |
|
তিন ম্যাচে দশ পয়েন্ট পেয়ে যেখানে গ্রুপ ‘এ’-র লিগ তালিকায় দু’নম্বরে উঠে পড়ার কথা ছিল বাংলার, সেখানে এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকায় মাত্র তিন পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের। থাকতে হচ্ছে পঞ্জাব, সৌরাষ্ট্র ও মুম্বইয়ের পর, চার নম্বরে। পরের তিনটি ম্যাচই প্রতিদ্বন্দ্বীর ডেরায়। যথাক্রমে মধ্যপ্রদেশ, মুম্বই ও সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। যেখানে ন’দলের গ্রুপ থেকে প্রথম তিন দল পাবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার টিকিট। সামনের সেই কঠিন লড়াইয়ের আগে অবশ্য মনোজ একটুও না ঘাবড়ানোর ভঙ্গিতে বললেন, “আগের বারও তো আমরা বেশ কয়েকটা বাইরের ম্যাচ থেকে পয়েন্ট নিয়ে এসেছি। এ বারও আশা করি পারব।”
মোহালির হারের পর যে প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল সিএবি কর্তাদের মধ্যে, তাও নেই এ দিন। নির্বাক কোচ, বাকরুদ্ধ যুগ্মসচিবরা। ভাবখানে, এটা তো নৈতিক হার, সত্যিকারের হার তো নয়। তা ছাড়া তাঁদের মাথায় এখন ইডেন টেস্ট। বাংলা নিয়ে ভাবার এখন সময় কোথায়?
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গুজরাত ২৬০ ও ২৭২-৮ (রুজুল ১০২ অপরাজিত,
রাকেশ ধ্রুব ৮৩, সৌরভ ২-২৯, দিন্দা ২-৮২)
বাংলা ৫২৬-৭। |