আমদাবাদে প্রথম টেস্টটা যে রকম গেল তাতে ভারত নিশ্চয়ই খুশি হবে। এখানকার পরিবেশে টস জিতে আগে ব্যাট করাটা যে কত বড় অ্যাডভান্টেজ, সেটা আরও এক বার এই টেস্টের ফল বুঝিয়ে দিল। ভারত যে মুহূর্তে পাঁচশো রানে পৌঁছল, ম্যাচটা একপেশে হয়ে পড়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রথম ইনিংসে ভাল রান করাটা ভীষণ জরুরি। যারা এক বার কম রানে অলআউট হবে, তার পরে তাদের সারাক্ষণ পিছন পড়ে থাকতে হবে লড়াইয়ে। ঠিক যেটা ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে ঘটেছে।
তৃতীয় দিন চায়ের বিরতিতে আমরা যখন কমেন্ট্রি বক্সে বসে আছি, আমাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন ম্যাচের চতুর্থ দিন বাড়ি ফেরার বিমান-টিকিট জোগাড়ের চেষ্টা করছিল। যতক্ষণ না পর্যন্ত কুক একটা ইনিংস খেলল, যেটা আমার দেখা যে কোনও সেরা ইনিংসের মতোই দুর্দান্ত। শেষ পর্যন্ত কুক উপমহাদেশের পিচে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় রানের ইনিংস খেলল। ইংল্যান্ডের এক ঝাঁক বড় নামের পাশে সে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি করার তালিকায় ঢুকে পড়া থেকে কুক আর একটামাত্র সেঞ্চুরি দূরে। এবং মনে রাখবেন, ওর বয়স সবে সাতাশ। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে কুক এখনই একটা স্তম্ভ। এবং ওর ক্ষমতা আছে ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হয়ে ওঠার। তবে আমার অবাক লাগছে কেপি-র ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে। ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। কিন্তু দেখে মনে হল, বাঁ-হাতি স্পিনারের বিরুদ্ধে ও লড়াইটা মানসিক ভাবে হেরে বসেছিল।
ইংল্যান্ডের যদিও সমস্ত নেতিবাচক ব্যাপারের মধ্যেও ওরা তৃতীয়-চতুর্থ-পঞ্চম দিনের জটিল পিচে যে রকম ব্যাট করেছে, সেটা ওদের মুম্বই টেস্টে প্রচুর আত্মবিশ্বাস দেবে। যদি ওরা পরের টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে বড় রান তুলতে পারে, তা হলে হয়তো সিরিজের ওপর বড় ছাপ রাখতেও পারবে। তবে মুম্বই টেস্টে ইংল্যান্ড বেল-কে পাচ্ছে না। সে কারণে আরও বেশি করে ওদের মিডল অর্ডারের অবদান রাখাটা, বিশেষ করে ট্রট, কেপি-র মতো সিনিয়রদের বড় ইনিংস খেলাটা জরুরি। টিম কম্বিনেশনের ব্যাপারেও নজর দেওয়া দরকার। পানেসরকে আমদাবাদে না-খেলানোর ভুলটা ওদের স্বীকার করে মুম্বইয়ে শুধরোনো দরকার।
অন্য দিকে ভারত নিশ্চয়ই সহবাগের ফর্ম দেখে খুশি হবে। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করার পথে ও প্রচুর প্রয়োগ ক্ষমতা দেখিয়েছে। আর বীরু এক বার ফর্ম পেয়ে যাওয়া মানে ইংল্যান্ড বোলারদের সামনে খুব খারাপ সময় আসা। বীরু যখন বড় রান করে, তখন ম্যাচটাকেও রেজাল্ট হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। মোতেরা-পিচে ওঝার বোলিং দেখে আমি উৎফুল্ল। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, ওঝা ভাল উইকেটেও খুব ভাল বোলার। কারণটা হল ওর বাঁ-হাতি স্পিনের গতি আর বৈচিত্র। মোতেরায় ওঝাকে দুর্দান্ত দেখিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটে ও সম্পদ হয়ে উঠবে। আমার চোখে বিদেশের মাঠেও ওঝা আমাদের বোলিং-তাস।
এই টেস্টে যদিও আমার কাছে সেরা প্লেয়ার তরুণ পূজারা। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওকে যা দেখেছিলাম, তার তুলনায় ওর ব্যাটিংয়ে চোখে পড়ার মতো উন্নতি ঘটেছে। পূজারা হল পুরনো দিনের ব্যাটিং-ঘরানার প্লেয়ার। ও যখন স্টেপ আউট করে স্পিনারকে মাঠের বাইরে ফেলে দেয়, সেটা দেখতে ভীষণ ভাল লাগে। আর আধুনিক যুগের ব্যাটসম্যান স্টেপ আউট করে খেললে বলটাকে ছয় হতে দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। |