গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
মানুষ প্রকৃতির উপর নির্মম আর রুষ্ট হচ্ছে। এই বিরূপতার প্রতি পুজো উদ্যোক্তা, শিল্পী তাঁদের মননে প্রকৃতির প্রতি তত করেই সচেতনতার বীজ বুনতে চাইছেন। প্রাচীন ফরাসি জনপদ চন্দননগরে উৎসবের আবহে জগদ্ধাত্রীর মণ্ডপে মণ্ডপে যেন সেই প্রতিধ্বনিরই অনুরণন ফিরে ফিরে আসছে। নতুন তেলিঘাট সর্বজনীন। চার দশকেরও বেশি সময় জুড়ে এই পুজো চলছে। এ বার অন্তত ৬শো তির আর ১০ হাজারেরও বেশি পাতার বাকল দিয়ে মণ্ডপ বুনেছেন তমলুকের শিল্পীরা। মণ্ডপের আদল হুবহু একটি পাখির মতো। সেই ভাবনায় পাখি না মারার আর্তি স্পষ্ট। তিরের ফলায় সারসের মুখের আদল। আলোর মায়াজালে মায়াবী আবেশ। শিল্পী নারায়ণ হাজরা বলেন, “৩০ জন শিল্পী কয়েক মাস ধরে মণ্ডপটি তৈরি করেছেন। এক সময় হয়তো পাখিকে আমরা ছবিতেই দেখব। পাখি যাতে হারিয়ে না যায়, সেই আর্জি জানানো হয়েছে।” নারায়ণবাবুর বক্তব্য, “এই প্রজন্ম যাতে প্রকৃতিকে ভুলে না যায়, সে জন্য বিশালাকার ঘুরি, সুতোভর্তি লাটাইও মণ্ডপসজ্জায় স্থান পেয়েছে।”
মরাণ রোড সর্বজনীনে প্রকৃতি ধরা দিয়েছে অন্য আঙ্গিকে। মণ্ডপ হিসেবে একটি নৌকার অবয়ব তৈরি হয়েছে কাঠের পাটাতন দিয়ে। তাতে দুধসাদা বিশাল জাল। বড় বড় ঝিনুক দিয়ে মাছ তৈরি হয়েছে হরেক রকমের। যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে মাছগুলো। মণ্ডপ ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আলোকসজ্জা। মণ্ডপশিল্পী গৌরাঙ্গ কুইলা বলেন, “আলো এখানে অবশ্যই বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।” চার দশকেরও পুরনো অম্বিকা অ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজো। এ বার এই পুজোর থিম, উষ্ণায়ন। নতুনপাড়া সর্বজনীন সম্পাদক সুকুমার সাহা জানান, তাঁদের পুজোয় এ বার উঠে এসেছে মানব ক্লোনের বিরূপ প্রভাব।
ষষ্ঠীতে যদি চন্দননগরে জনতার ঢল নেমে থাকে, তা হলে মঙ্গলবার সপ্তমীর সন্ধ্যায় ছিল জনজোয়ার। এ দিন চন্দননগরের পুজোয় মুখ্যমন্ত্রী আসায় দুপুর থেকে উৎসাহের পারদ আরও চড়ে গিয়েছিল। ভিড় সামলাতে তটস্থ থেকেছেন পুজোকর্তা এবং পুলিশকর্মীরা। চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী, মেয়র-ইন-কাউন্সিল (স্বাস্থ্য) পার্থ দত্ত বলেন, “এই ভিড়ে বাবা-মায়ের হাত ধরে প্রচুর বাচ্চা আসছে। এই ফাঁকে আমরা বাচ্চাদের পোলিও খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করেছি।”
অন্য দিকে, সিঙ্গুরের রতনপুর আলুর মোড়ে উদয় সঙ্ঘের পুজো হচ্ছে ধুমধাম করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র ওই পুজোয় যান। তিনি বলেন, “সিঙ্গুরের মানুষ উৎসবে মেতেছেন। এই সময় এখানে আসার অনুভূতি অন্য রকম।” |