|
|
|
|
স্বাগত বিদেশি লগ্নিও |
রেলে সংস্কারের রথ, নয়া নীতিতে অনুমোদন কাল |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
রেল মন্ত্রকে আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়া নেই। বড় কথা হল, কেন্দ্রে দু’দফার ইউপিএ শাসনে এই প্রথম মন্ত্রকটি নিজেদের হাতে নিতে পেরেছে কংগ্রেস। এই পরিবর্তনকে কাজে লাগাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। রেলে এ বার দ্রুত সংস্কার চান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে খবর, রেল পরিকাঠামো নির্মাণে বেসরকারি বিনিয়োগ, এমনকী প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি টানার জন্য নয়া নীতিতে বৃহস্পতিবার অনুমোদন দিতে পারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
প্রস্তাবিত ওই নতুন নীতি অনুযায়ী শুধু পণ্যবাহী করিডর বা বন্দর সংযুক্তিকরণের জন্য নয়, যাত্রী পরিবহণের জন্য নতুন রেলপথ ও আরও দ্রুতগামী ট্রেন চালাতেও বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য দরজা খুলে দেবে সরকার। তা ছাড়া কোনও রাজ্য সরকার চাইলে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগেও এমন পরিকাঠামো নির্মাণ করতে পারবে।
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, এই নীতি চালু করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য হল রেলে অর্থের জোগান বাড়ানো। অনেক দিন ধরেই যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মনটেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ারা বলে আসছেন, নতুন রেলপথ তৈরি বা অন্যান্য রেল প্রকল্পের কাজ টাকার অভাবে এগোচ্ছে না। চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু রেলে বেসরকারি লগ্নির দরজা খুলে দিলে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য অর্থের অভাব হবে না। আখেরে উপকৃত হবেন রেলযাত্রীরা।
রেল বোর্ডের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, বেসরকারি বিনিয়োগ টানার চেষ্টা অবশ্য এই প্রথম নয়। রেলমন্ত্রী থাকাকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে কিছু প্রকল্প গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু মুশকিল হল, সেই নীতি ঘোষণার পাশাপাশি তাঁর সামগ্রিক রেল নীতিতে স্ববিরোধিতা ছিল। প্রথমে লালুপ্রসাদ যাদব, পরে মমতা ও তাঁর উত্তরসূরিরা যে জনমোহিনী রাজনীতি করেছেন, তাতে বেসরকারি লগ্নিকারীরা লাভের তেমন আশা দেখতে পাননি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে কেউ এগিয়েও আসেননি সে ভাবে।
যেমন, বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে কিছু রুটে ঘন্টায় ২০০ কিমি বেগে ট্রেন চালানোর লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। কিন্তু ভোট-রাজনীতির দায়ে তার ভাড়া যদি প্রয়োজনের চেয়ে কম নেওয়া হয়, তাতে প্রকল্পটাই লাভের মুখ দেখবে না। বিপদে পড়বে বেসরকারি লগ্নি।
মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার যে নতুন নীতি অনুমোদন করতে চলেছে, তার প্রেক্ষাপট তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল যোজনা কমিশনের নির্দেশে। মুকুল রায়ের ইস্তফার পর সাময়িক ভাবে রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েই ভাড়া নির্ধারণের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করেন সি পি জোশী। দীনেশ ত্রিবেদী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁকে দিয়ে এই স্বাধীন কর্তৃপক্ষ (রেল ট্যারিফ অথরিটি) গঠন করাতে চেয়েছিলেন মনমোহন-মনটেক। সে কথা শুনতে গিয়েই মমতার কোপে পড়েন দীনেশ। সরকার থেকে তৃণমূল সরে যেতেই ওই কর্তৃপক্ষ গঠনের নির্দেশ দেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। বুঝিয়ে দেন, জনমোহিনী রাজনীতির স্বার্থ মেনে নয়, এ বার থেকে অর্থনীতির সূত্র মেনে স্থির হবে রেলের ভাড়া ও মাসুল। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিদেশি লগ্নিকারীদের উৎসাহ জোগাবে বলে মনে করেন রেল মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তারা। তবে তাঁদের দাবি, রেল পরিকাঠামো নির্মাণে বেসরকারি বিনিয়োগে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও ভাড়া নির্ধারণে বেসরকারি সংস্থার প্রভাব থাকবে না। সেই এক্তিয়ার থাকবে রেল ভাড়া কর্তৃপক্ষেরই হাতে। পণ্যবাহী করিডর বা বন্দর সংযুক্তিকরণ প্রকল্পে বেসরকারি সংস্থা বিনিয়োগ করলেও মাসুল আদায় করবে রেলই। তার একাংশ পাবে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে খবর, প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি টানার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিতে চান প্রধানমন্ত্রী। লক্ষ্য দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে দ্বাদশ যোজনাকালে এক লক্ষ কোটি ডলার লগ্নি টানা। এত দিনের অধরা রেলের দরজা এ বার বেসরকারি ও বিদেশি লগ্নির জন্য খুলে দিতে চলেছেন মনমোহন। |
|
|
 |
|
|