|
|
|
|
|
অধিবেশন চালু রেখে বিল পাশ
করানোই মাথাব্যথা সরকারের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলে তা পর্যুদস্ত করার মতো সংখ্যা হয়তো সরকারের রয়েছে। কিন্তু শাসক ও বিরোধী জোটের চাপানউতোরের জেরে শীতকালীন অধিবেশনই যদি অচল হয়ে পড়ে, তা হলে জমি অধিগ্রহণ বা খাদ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি পাশ হবে কী ভাবে? সংসদের অধিবেশনের আগে এই উদ্বেগ মাথায় নিয়ে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছেন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, বিশেষ করে আর্থিক সংস্কার সংক্রান্ত বিলগুলি নিয়ে সুষমা স্বরাজ-অরুণ জেটলিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে সংসদের সম্মতি পাওয়ার পথ যে মসৃণ নয়, তা প্রধানমন্ত্রী তথা সরকার এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা সকলেই জানেন। আর সেই কারণেই খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি বা ডিজেল ও রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের মতো সিদ্ধান্ত আগে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ এই পদক্ষেপের জন্য সংসদের সম্মতির প্রয়োজন নেই, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই তা করা যায়। সে সব হয়ে যাওয়ার পর এ বার সংসদের সম্মতি নিয়ে সংস্কারের পথে এগোনোর চেষ্টা করে দেখতে চান মনমোহন। সেই কারণেই এ বার ফরওয়ার্ড চুক্তি বিল, পেনশন, বিমা, ব্যাঙ্কিং ও কোম্পানি বিল সংসদে পেশ ও পাশ করানোর জন্য তালিকাভুক্ত করেছে সরকার।
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, যে হেতু পেনশন ও বিমা বিলের ব্যাপারে অতীতে এনডিএ সরকারের আমলেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তাই ওই বিলগুলি পাশের জন্য বিজেপির সাহায্য চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে বিজেপির সাহায্য নিশ্চিত করতে যশবন্ত সিন্হার নেতৃত্বাধীন অর্থ মন্ত্রক সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সুপারিশই মেনে নিয়েছে সরকার। আবার রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসের আগ্রহ রয়েছে, জমি অধিগ্রহণ বিল ও খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে। কারণ এই বিল দু’টি পাশ করাতে পারলে কংগ্রেস আগামী লোকসভা নির্বাচনে এগুলোকে তার রাজনৈতিক অস্ত্র করে তুলতে পারবে।
এখন বড় প্রশ্ন হল, বিজেপি কি আদৌ সরকারকে সাহায্য করবে? প্রধান বিরোধী দল সূত্রে বলা হচ্ছে, কোনও ভাবেই তাঁরা সরকারকে কৃতিত্ব নেওয়ার সুযোগ দিতে চান না। সে কারণে সংশোধিত পেনশন বিল বা বিমা বিল প্রসঙ্গে বিজেপি সুকৌশলে তাদের মত প্রকাশ করা থেকে বিরত রয়েছে। বরং বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, আসন্ন অধিবেশনে এনডিএ-র কোনও শরিক কিংবা তৃণমূলের মতো দলকে দিয়ে উপর্যুপরি নানা বিষয় উত্থাপন করিয়ে সংসদ অচল রাখারই চেষ্টা করবেন তাঁরা। তা ছাড়া গুজরাতের নির্বাচন আসন্ন। ফলে সংসদ অচল রেখে গুজরাতে ভোট প্রচার নিয়েই অনেক বেশি আগ্রহী থাকবে বিজেপি।
বিজেপির কৌশল আঁচ করে চুপ করে নেই কংগ্রেসও। বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরাতে এখন আদা-জল খেয়ে নেমে পড়েছে তারা। সংসদ যাতে দিনের পর দিন অচল না থাকে, সে জন্য বাম এমনকী সংযুক্ত জনতার মতো এনডিএ-র শরিকদের দিয়েও দাবি তোলাতে চাইছে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে সিপিএম এবং জেডিইউ উভয়ে ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছে। তবে রাজনীতির কারবারিদের মতে, কংগ্রেস যতই আগাম ঘুঁটি সাজানোর চেষ্টা করুক, অধিবেশনের গতিপ্রকৃতি কী হবে, তা প্রথম কয়েক দিন সভা চলার পরেই স্পষ্ট হবে। সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে, সংসদে আচমকা এমন সব বিষয় উঠে এসেছে, যার জেরে সংসদ অচল হয়ে গিয়েছে। তাই প্রয়োজনীয় বিলগুলি সরকার এ বারও পাশ করাতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। |
|
|
|
|
|