গরিব মানুষের জন্য সরকারি প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার তৈরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল দাঁইহাট পুরসভার বিরুদ্ধে। অভিযোগ তুলেছে পুরসভায় কংগ্রেসের শরিক দল তৃণমূল। সরব হয়েছে বিরোধী সিপিএম-ও। তৃণমূল নেত্রী তথা উপ-পুরপ্রধান স্বাধীনা নন্দী মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে পুরো ঘটনার তদন্তের আবেদন করেছেন। মহকুমাশাসকের নির্দেশে কাটোয়া ২ ব্লক অফিসের এক আধিকারিক তদন্ত শুরু করেছেন।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সভায় এই দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের ৫ নম্বর আলোচ্য বিষয়ে জানানো হয়েছে, শৌচাগার তৈরি নিয়ে বেশ কিছু ‘ত্রুটি’ উঠে এসেছে। এমন ত্রুটি কেন হল তা জানার জন্য তদন্ত কমিটি গড়া দরকার। সে দিনই পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা বিদ্যুৎবরণ ভক্ত-সহ চার জনের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সেই কমিটি এখনও তদন্ত শুরুই করেনি বলে অভিযোগ সিপিএমের। এ নিয়ে বিদ্যুৎবাবু সোমবার পুরসভার নির্বাহী আধিকারিককে চিঠিও দিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, আইএলসিএস (ইন্টিগ্রেটেড লো কস্ট স্যানিটারি ল্যাট্রিন) কর্মসূচিতে ৪৬৬টি শৌচাগার তৈরির অনুমোদন আসে। ২০১০ সালে সিপিএমের দখলে থাকা পুরবোর্ড আইএলসিএস কর্মসূচিতে শৌচাগার তৈরির জন্য উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করে। সেই সময়ে প্রায় পঞ্চাশ জনের জন্য রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর শৌচাগার তৈরির প্রথম পর্যায়ের টাকা অনুমোদন করে। রাজ্যে পালাবদলের পরে বাকি উপভোক্তাদের জন্যও টাকা অনুমোদন হয়।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, উপভোক্তা পিছু শৌচাগার তৈরির খরচ দশ হাজার টাকা। তার মধ্যে কেন্দ্র ছ’হাজার, রাজ্য সরকার তিন হাজার ও উপভোক্তা নিজে এক হাজার টাকা দেবেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম পর্যায়ে রাজ্য সরকার দু’দফায় তার ভাগের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। পুরসভাও সেই টাকা উপভোক্তাদের মধ্যে বিলি করে দিয়েছে। বছর পেরিয়ে গেলেও ৪৬৬ জন উপভোক্তার মধ্যে মাত্র ৯৮ জন শৌচাগার তৈরি করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী সময় মতো ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ (ইউসি) দিতে না পারায় উপভোক্তা পিছু কেন্দ্রীয় সরকারের ৬০০০ টাকা পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তৃণমূলের অভিযোগ, শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিজনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় শৌচাগার তৈরির অনুমোদন পেয়েছিলেন। গত ৫ মার্চ উপভোক্তার নামে ৪০০০ টাকা অনুমোদন হয়েছে বলে একটি রসিদে দেখানো হয়েছে। উপ-পুরপ্রধান স্বাধীনা নন্দীর অভিযোগ, “বাস্তবে ওই রসিদ থেকে বিয়েবাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য টাকা জমা পড়েছিল। অথচ তা থেকে শৌচাগার তৈরির জন্য টাকা উঠে গেল।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২ নম্বর ওয়ার্ডের নিতাই চৌধুরীকে শৌচাগার তৈরির টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনিই আবার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি রয়েছে দেখিয়ে শৌচাগার তৈরির অনুমোদন পেয়েছেন। এ ছাড়াও গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার তৈরির টাকা স্থানীয় একটি ক্লাবকে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্বাধীনাদেবী ও বিদ্যুৎবরণবাবুর অভিযোগ, “নানা রকম কারচুপি হয়েছে বলে পুরপ্রধান উপভোক্তাদের তালিকা প্রকাশ করছেন না। কংগ্রেস কাউন্সিলরও তদন্ত করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।”
কংগ্রেস কাউন্সিলর অজিতবাবু অবশ্য বলেন, “পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে কিছু দিন কলকাতায় ছিলাম। তাই তদন্তের কাজ শুরু করা যায়নি।” পুরপ্রধান সন্তোষ দাস বলেন, “কিছু ত্রুটি রয়েছে। তাই বিরোধী দলনেতাকে রেখে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলেই উপভোক্তাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।” তাঁর দাবি, “আমাদের সৎ উদ্দেশ্য আছে বলেই বিরোধী নেতাকে সামনে রেখে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তা ছাড়া সিপিএম ক্ষমতায় থাকাকালীন যে উপভোক্তা কমিটি পাঠিয়েছিল, তার থেকে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ অবান্তর।” |