|
|
|
|
জাতের ছোঁয়া সরিয়ে রেখে বাড়ছে ভিড় |
শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল • রঘুনাথপুর |
প্রশাসনের আপ্রাণ চেষ্টায় ফল মিলছে।
পুরুলিয়ার লালডাঙ্গা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রান্না করা খাবার শনিবারের মতো সোমবারও খেয়েছেন বাউরি সম্প্রদায়ের মা ও শিশুরা। তাতে যোগ দিয়েছেন গ্রামের কিছু রুইদাস সম্প্রদায়ের মা-শিশুরাও। জাতপাতের ব্যাধি অন্তত তাদের ছোঁয়নি।
কিন্তু, জাতপাতের সেই এক গোঁ ধরে পাবড়া গ্রামের ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা সন্ধ্যারানি রুইদাসের হাতের রান্না খেতে বাড়ির ছেলেমেয়েদের পাঠাননি মল্লিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা ‘উঁচু জাত’। আর সন্ধ্যারানিদেবী ‘নিচু জাত’। তাঁ তাঁর হাতের রান্না খেলে ‘জাত যাবে’। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির কর্মী চৈতালী মণ্ডল জানান, শনিবার ১০-১২টি পরিবার খেয়েছিল। সোমবার সংখ্যা কিছু বেড়েছে। কিন্তু, মল্লিকদের কেউই আসেননি।
প্রশাসন জাতপাত রুখতে অনমনীয় মনোভাব নিয়েছে। বলা হয়েছে, লালডাঙ্গা এলাকার ওই অঙ্গনওয়ানি কেন্দ্রে রান্না আর বন্ধ করা হবেনা। বরং ওই গ্রামে আরও নিবিড় ভাবে সচেতনতা প্রচার করতে চাইছে প্রশাসন। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “সমস্যাটি সামাজিক। তাই জোর করে কিছু করা সম্ভব নয়। আমরা চাইছি, ওই কেন্দ্রে সবলার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকল্প দ্রুত শুরু করে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সঙ্গে গ্রামবাসীর নিবিড় যোগাযোগ ঘটাতে। রাজনৈতিক দলগুলির সাহায্যও নেওয়া হবে।”
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নিলডি পঞ্চায়েতের পাবড়া গ্রামে জাতপাতের কারণে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে দু’বছর কোনও হাঁড়ি চাপেনি। সহায়িকা জাতে ‘মুচি’স্রেফ এই অজুহাতে তাঁর হাতের রান্না খেতে অস্বীকার করেছিলেন গ্রামের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দারা। বিষয়টি নজরে আসার পরে শনিবার গ্রামে সচেতনতা শিবির করে ব্লক প্রশাসন। ওই দিন গ্রামে গিয়ে সন্ধ্যাদেবীর রান্না করা খাবার খেয়েছিলেন বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পাড়া কেন্দ্রের বিধায়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনেতিক দলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু যাঁদের জন্য এই উদ্যোগ, সেই মল্লিকরাই খাবার খাননি।
এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে ওই কেন্দ্রে দীর্ঘ সময় পরে রান্না শুরু করানো এবং গ্রামের কিছু শিশু ও প্রসূতিকে খাবার খাওয়ানো শুরু করতে পারাটাকে ইতিবাচক দিক হিসাবে দেখছে প্রশাসন। প্রধানকে জাতপাতের ব্যাধি দূর করতে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতি সপ্তাহে কেন্দ্রের কাজের রিপোর্ট দেবেন বিডিও-কে। এ দিনও রান্নার সময়ে কেন্দ্রে ছিলেন প্রধান ঠাকুরদাস রজক ও অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের সুপারভাইজার ফাল্গুনী চক্রবর্তী।
ঘটনা হল, দেরিতে হলেও লালডাঙ্গা গ্রামে দলগতভাবে সচেতনতা শিবির করে মল্লিকদের রাজি করানোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। কংগ্রেসের রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ চারের দাবি, “শনিবারের পরেই ওই গ্রামে আমাদের দলের কর্মীরা সচেতনতা প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছে। পরে বড় আকারে শিবির করার পরিকল্পনা রয়েছে।” এলাকার অন্য মল্লিকদের সাহায্য নিয়ে লালডাঙ্গা গ্রামের মল্লিকদের বোঝানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। তৃণমূলের নেতা বিষ্ণু মেহেতা বলেন, “ওই ব্লকের অন্য অনেক গ্রামেও মল্লিকরা আছেন। সেখানে কিন্তু এ ধরনের সমস্যা নেই। আমরা চাইছি, এই মল্লিকরা বোঝান লালডাঙ্গার মল্লিকদের।”
লালডাঙ্গার মল্লিকরা বরাবর সিপিএমের সমর্থক হিসাবেই পরিচিত। ফলে তাঁদের দায়িত্ব বেশি বলে মেনে নিয়ে সিপিএমের স্থানীয় চেলিয়ামা জোনাল কমিটির সম্পাদক শক্তি বাউরি জানান, ওই পঞ্চায়েতে তাঁদের দলের প্রধান আগে থেকেই চেষ্টা করছেন। এবার আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। শক্তিবাবুর কথায়, “ব্লক এলাকার অন্য গ্রামে মল্লিকরা রয়েছেন। কিন্তু সেখানে লালডাঙ্গার মতো সমস্যা নেই। আমরা জানার চেষ্টা করছি, এ ক্ষেত্রে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না।” |
|
|
|
|
|