স্বপ্ন হলেও সত্যি
সিরাজুল ইসলাম
যেই পড়েছে সবুজ ঘাসে পা
অমনি আমার ছোট্টবেলার গাঁ
আঁচল পেতে বললে, এ বার ঘুমো
বলেই আমার গালে দিল চুমো।
সূর্য তখন মুচকি হেসে সদ্য
পাতার ফাঁকে ছড়িয়ে দিল পদ্য
একটু দূরে পাঠশালাটা দেখি
এখনও যে আমায় চেনে এ কী!
বললে, খোকন, কেমন আছ, ভাল
তোমরাই তো চিরদিনের আলো
যেমনি বলা বুকটা দুরুদুরু
গুনগুনিয়ে নামতা পড়া শুরু।
সামনে তখন শুধুই ধারাপাত
পিঠের ওপর গিরিন স্যরের হাত
ভাবছি তখন স্বপ্ন, নাকি সত্যি
আমি কি আর এখনও একরত্তি!
ওই তো ঘরে দোলনাখানা দোলে
বুঝতে পারি দুলছি মায়ের কোলে। |
মজার লোক
কাজী মুরশিদুল আরেফিন
লোকটার বাড়ি আগে
ছিল নাকি ঝরিয়ায়,
কালো হোক মোটা হোক
খুব দিল দরিয়াই।
মাঝ রাতে এলে চোর
খুলে দেয় ঘর দোর,
ডেকে বলে কী কী নিবি
মাল সব ধরি আয়।
লোকটার কাকা থাকে
নদিয়ার ফুলিয়ায়,
দস্যুরা এলে বলে
ফুলগুলো তুলি আয়।
ডাকাতির পরে রাতে
ফিরে যাবি ফুল হাতে,
তার আগে ছাদে গিয়ে
দোলনাতে দুলি আয়।
লোকটার জ্যাঠা থাকে
দক্ষিণ কোরিয়ায়
কানাডায় যাবে বলে
হয়ে ওঠে মরিয়াই।
যেতে যেতে খিদে পেলে
মুড়ি ভেজে খায় তেলে,
ফতুয়ার উপরেতে
বলে টাই পরি আয় |
|
শীতে
মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ
শীতে লেপের ভিতর মুড়ি
শীতে বন্ধ ওড়াউড়ি
শীতে রোদ্দুর কোথা খোঁজ
শীতে পায়েস-পুলির ভোজ...
শীতে খেজুর রসের হাঁড়ি
শীতে বনভোজনে পাড়ি
শীতে জড়ভরত, চুপ...
শীতে বরফকণা টুপ! |
|
তুমি বললে
শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ
বন্ধুনদীর পুবের চরে
পাতায় ছাওয়া মাঝির বাড়ি
তুমি বললে শালিক হয়ে
তার বাড়িতে থাকতে পারি।
পশ্চিমে যে পাহাড় আছে
তার সঙ্গে আলোর আড়ি
তুমি বললে সূর্য হয়ে
তার পিছনে নামতে পারি।
সেখানে যে গ্রামটি আছে
তার নামটি আঁধারঝারি
তুমি বললে স্বপ্ন হয়ে
সেই গ্রামটায় থামতে পারি
স্বপ্নে যদি দুঃখী দুখন
সুখের খোঁজে জমায় পাড়ি
তুমি বললে মশাল হাতে
তার সমুখে থাকতে পারি। |
সোনা রোদের গানে
দেবাশিস বসু
হাততালি দেয় ভোরের বাতাস
বলছে হেসে শিশির
আমার সঙ্গে বন্ধু পাতাস
ঝরব ফিসির ফিসির
সবুজ-অবুঝ ধানের চারা
বলছে যেন ডেকে
খোকাখুকু দাও গো সাড়া
সঙ্গে যাবে কে কে?
ডাক পেয়েছি গাঁয়ের মায়ের
ডাকছে ঝিলিক নদী
ডাকছে আকশ নূপুর পায়ে
জ্বালিয়ে আকাশপ্রদীপ।
গাঁয়ের বাড়ি দিচ্ছি পাড়ি
ডাকছে মাঠের ধানে
মেঘের সঙ্গে আজকে আড়ি
সোনা রোদের গানে। |
|
পড়ার ছুটি
শিশির সাঁতরা
পড়ার ছুটি শেষ
বইটা ছিল বেশ,
তাকের উপর বসে।
আবার তাকে টেনে
আদর করে এনে,
অঙ্ক রাখি কষে।
শরৎ গেল ঘরে
হিমেল এল ভোরে,
শিশির ঢাকা রেখে,
শীত বুড়িটা যায়
র্যাপার দিয়ে গায়
দুপুরে রোদ মেখে। |
|