|
|
|
|
বিদায় সেনা-পতি |
‘সরকার’-হীন মুম্বই নয়া ‘সরকারে’র অপেক্ষায় |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • মুম্বই |
একটি যুগের সমাপ্তি।
নিজের হাতে এবং একক দাপটে একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। মহারাষ্ট্রের রাজনীতি করেও ছিলেন জাতীয় স্তরের নেতা। যাঁর কাছে দেশপ্রেমের সংজ্ঞাটা ছিল একেবারে অন্য রকম। সেখানে কোনও সমঝোতা নেই। যতটা আক্রমণাত্মক হতে পারতেন, তার থেকেও বেশি ছিলেন দিলদরিয়া। ফলে বন্ধুত্ব যেমন করতেন হৃদয় দিয়ে, শত্রুতাও করতেন একই ভাবে। এমনই ছিলেন ঠাকরে, তাঁকে পছন্দ হোক বা না হোক, উপেক্ষা করা কারও পক্ষেই সম্ভব ছিল না।
সে রাজনীতির দুনিয়ার ব্যক্তি হোন বা শিল্পপতি অথবা বলিউড! কিংবা আমচি মুম্বইকর।
‘সরকার’কে উপেক্ষা করবে কে?
সেই ‘সরকার’ বালা সাহেবের যুগ শেষ। এ বারে তাঁর সাজানো বাগানের কী হবে? মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতেই বা এর প্রভাব কী? কংগ্রেস-এনসিপি হোক বা বিজেপি-শিবসেনা, সব দলের নেতারাই একবাক্যে স্বীকার করেন, বালা সাহেবের বিকল্প নেই। কালেভদ্রে এমন এক এক জন নেতার আবির্ভাব হয়। কার্টুনিস্ট থেকে শিবসেনার সুপ্রিমো হয়ে ওঠার যাত্রাপথটি মোটেই সহজ ছিল না। ক্যানভাসের মতোই এই যাত্রাপথটি তিনি নিজের মতো করে এঁকেছেন। যখন ইচ্ছা তুলি দিয়ে রং টেনেছেন ক্যানভাসে। যখন যা মনে হয়েছে, সে দিকেই জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন।
এক সময় কংগ্রেসের সাহায্য নিয়েছেন। জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গাঁধীকে সমর্থনও করেছিলেন। মহারাষ্ট্র থেকে বাম শ্রমিক সংগঠনকে উৎখাত করে নিজের শক্তি বাড়িয়েছেন। জোট বেঁধেছিলেন শরদ পওয়ারের সঙ্গেও। কিন্তু পরে আবার কংগ্রেস-এনসিপি-র বিরোধী রাজনীতিতে সওয়ার হয়েছেন। রাজনীতির বিচারধারার মোড়ও নানা সময়ে নানা অভিমুখে বেঁকে গিয়েছে। গোড়ায় দক্ষিণ ভারত-বিরোধী রাজনীতি থেকে কংগ্রেস-বিরোধী হয়ে শেষে ইসলাম-বিরোধী রাজনীতি করে নিজের দাপট ধরে রেখেছেন।
কিন্তু এখন কী হবে? নতুন কেউ কি হতে পারবেন ‘সরকার’?
রাজনীতির কারবারিদের মতে, বালা সাহেবের শূন্যস্থান কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে রাজ ঠাকরে। প্রমোদ মহাজনের মৃত্যুর পরে মহারাষ্ট্রে বিজেপির তেমন কোনও বড় নেতা নেই। নিতিন গডকড়ী ও গোপীনাথ মুন্ডে এই দুই শিবিরে বিভক্ত মহারাষ্ট্র বিজেপি। গডকড়ী সভাপতি হওয়ার পর মুন্ডেকে কোণঠাসা করতে চেয়েছিলেন। এখন নিজেই দুর্নীতির দায়ে কোণঠাসা! দুর্নীতির অভিযোগে গত কয়েক বছরে একাধিক মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে হয়েছে কংগ্রেসের। এনসিপি-তেও এখন শরদ পওয়ারের সঙ্গে অজিত পওয়ারের বিবাদ শুরু হয়ে গিয়েছে।
ফলে বালা সাহেবের প্রয়াণের পরেও শিবসেনার উত্থানের সুযোগ রয়েছে। তবে শর্ত একটাই। উদ্ধব ও রাজকে এক হতে হবে। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, উদ্ধবকে মেনে নিতে হবে, শিবসেনা ছেড়েও অনেক বেশি নজর কেড়েছেন রাজ। বালা সাহেবের ক্যারিশমা রয়েছে রাজের মধ্যেই। তিনি যে ভাবে ভয় ও ভক্তির মিশেলে গোটা মুম্বই ও মহারাষ্ট্রের কিছু অংশকে নিয়ন্ত্রণ করতেন, তেমনটা করার ক্ষমতা রয়েছে এক মাত্র রাজেরই।
লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে যাওয়ার আগে বালা সাহেবের যখন জ্ঞান ছিল, সেই সময় তাঁর পাশে ছিলেন উদ্ধব, রাজ ও শিবসেনা সুপ্রিমোর প্রয়াত পুত্র জয়দেব ঠাকরের স্ত্রী স্মিতা। পুত্রস্নেহে ‘অন্ধ’ ধৃতরাষ্ট্র ছেলে উদ্ধবের হাতে যাবতীয় দায়িত্ব অর্পণ করায় মাতোশ্রী ছেড়েছিলেন রাজ। স্মিতাও। কিন্তু সে দিন বিছানার পাশে তিন জনকে এক সঙ্গে দেখে খুশি হয়েছিলেন বালা সাহেব। স্মিতা শিবসেনা ছেড়ে কংগ্রেসে পা রেখেছেন। রাজ গড়েছেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা। অদূর ভবিষ্যতে শিবসেনার উত্থানের রসায়ন একটাই। যাবতীয় অহং বিসর্জন দিয়ে দুই ভাইয়ের এক ছাতার তলায় আসা। বালা সাহেবও তাই চেয়েছিলেন।
আর তা যদি না হয়?
মহারাষ্ট্রের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত লোকজনের ধারণা, সে ক্ষেত্রে রাজ নিজের শক্তি বাড়াবেন। অচিরেই কালের নিয়মে রাজনীতি থেকে বিলীন হয়ে যাবেন উদ্ধব। এমনিতেই দু’-দু’বার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হওয়ার ধাক্কা এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেননি উদ্ধব। তার মধ্যেই প্রবাদপ্রতিম বাবার মৃত্যু। ফলে শিবসেনাকে বাঁচিয়ে রাখার বড় দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই। কিন্তু তিনি পারবেন কি? বস্তুত বালা সাহেব গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই মাতোশ্রী-র যাবতীয় সিদ্ধান্ত অলক্ষ্যে থেকেও অনেকটাই নিজের হাতে তুলে নেন রাজ। উদ্ধবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও এখন অনেকটাই সহজ। এই অবস্থায় অনেকে এমনও মনে করছেন যে, শিবসেনার সাজানো বাগান রক্ষার দায়িত্ব উদ্ধব নিজেই না রাজের হাতে তুলে দেন।
না হলে এমনিতেই বালা সাহেব-উত্তর মহারাষ্ট্রে রাজ নিজের পরিসর অনেকখানি বাড়িয়ে নেবেন। বলা যায়, শিবসেনাকে ধ্বংস করেই। ভাঙা-গড়ার এই খেলায় শিবসেনার বিরোধীরাও নিজেদের ঘর কিছুটা গুছিয়ে নিতে পারে। বালা সাহেবের উচ্চতা ছিল। কিন্তু রাজ যদি বেশি এগিয়ে থাকার নেশায় শুধুই বাল ঠাকরেকে অনুকরণ করতে চান, কংগ্রেস-এনসিপি সরকার প্রশাসনিক ক্ষমতায় তাঁকে পেড়ে ফেলার চেষ্টা করবে। বালা সাহেবকে তারা যে রেয়াত করত, রাজকে সেটি করার বাধ্যবাধকতা নেই। সেই সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল রাজ। সে কারণে নিজেদের সীমাবদ্ধতা দেখেই দু’ভাই মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের আগে এক জোট হতে পারেন।
বিজেপিও চাইছে, দুই ভাই এক হয়ে লড়ুক। তাতে তেরো বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর রাজ্যে ফের গদির সুখ আসবে। রাজ শিবসেনায় ফিরে না এলে এনডিএ-র পুরনো শরিকের পাশাপাশি রাজের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার সঙ্গেও জোট করতে আপত্তি নেই তাদের। আর তেমনটা হলে কংগ্রেসের কপালেই ভাঁজ পড়বে। কংগ্রেস কিছুতেই দুই শক্তিকে এক করে দেখতে চায় না। বরং সুকৌশলে কোনও এক জনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়। গত নির্বাচনেই রাজের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস। মাতোশ্রীতে বাল ঠাকরের পুত্রবধূ স্মিতার অসন্তোষকে হাওয়া দিয়েও ঠাকরে পরিবারকে দুর্বল করতে চেয়েছে তারা। আবার এনসিপিও রাজের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার সঙ্গে সমঝোতা করতে আগ্রহী।
ফলে বালা সাহেব যুগের অবসানের পর উদ্ধব আর রাজের দিকেই অনেক চোখ চেয়ে রয়েছে। রাজই সেখানে তুরুপের তাস। মুম্বই এখন নতুন ‘সরকারের’ অপেক্ষায়।
|
ঠাকরে স্মরণ |
|
আজ মহারাষ্ট্র সত্যি সত্যিই
অনাথ হয়ে গেল।
লতা মঙ্গেশকর
|
বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল।
মানুষ তাঁকে মনে রাখবে।
সচিন তেন্ডুলকর
|
গেরুয়া কাপড়ে ঢাকা শান্ত, নিথর দেহটার পাশে দাঁড়িয়ে
ছিলাম কয়েক ঘণ্টা আগেই। বিশ্বাস করা শক্ত উনি আর নেই।
অমিতাভ বচ্চন
|
|
ওঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাইনি কখনও। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল ওঁর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|
|