গল্প বলতেন তিনি, শুনে হাসত মাঠভর্তি লোক
প্রথাগত শিক্ষা ছিল না তেমন। কিন্তু, গল্পের ঢংয়ে যখন কথা বলতেন তখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনত মাঠভর্তি লোক। ভাষার উপরে দখল ছিল অনেকের চেয়ে বেশি। তাঁর তীক্ষ্ন শ্লেষ শুনে হাসিতে ফেটে পড়তেন মানুষ। কখনও নির্বাচনে লড়েননি। কিন্তু, এক সময়ে রাজ্য সরকারের ‘রিমোট কন্ট্রোল’ ছিল তাঁর হাতে। এমনই বৈপরীত্যে ও বিতর্কে ভরা জীবন বালাসাহেব কেশব ঠাকরের। সমর্থক বা সমালোচক, বালাসাহেবকে অবজ্ঞা করার ক্ষমতা ছিল না কারও।
১৯২৬ সালের ২৩ জানুয়ারি পুণেতে জন্ম বালাসাহেবের। বাবা কেশব সীতারাম ঠাকরে ছিলেন সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী। মুম্বইকে রাজধানী করে মরাঠিভাষীদের জন্য রাজ্য গড়ার সংযুক্ত মহারাষ্ট্র আন্দোলনের অন্যতম কর্মী ছিলেন তিনি। তাই মরাঠি আবেগ নিয়ে রাজনীতির সঙ্গে অল্পবয়সেই পরিচয় হয়েছিল বালাসাহেবের।
ম্যাট্রিক পরীক্ষাতেও পাশ করেননি মহারাষ্ট্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ নায়ক। কিন্তু, ভাষার উপরে দখলের প্রথম পরিচয় ফুটে বেরোয় ফ্রি প্রেস জার্নালে প্রকাশিত তাঁর ব্যঙ্গচিত্রগুলির তীক্ষ্ন ক্যাপশনে। পরে নিউজ ডে নামে একটি সংবাদপত্রে কাজ করেছিলেন কিছু দিন। কিন্তু, সংবাদপত্রটি বেশি দিন টেকেনি।
১৯৬০-এর দশকে মুম্বই তথা মহারাষ্ট্রে বহিরাগতদের নিয়ে বাড়ছিল অসন্তোষ। বাইরের রাজ্য থেকে আসা মানুষের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছিল মরাঠিদের। মরাঠি মধ্যবিত্তের মুখপাত্র হয়ে ওঠার এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি বালাসাহেব। ১৯৬০ সালে শুরু করেন নিজের সাপ্তাহিক মার্মিক। মরাঠি মানুষের দাবি নিয়ে তীব্র প্রচার শুরু করে সাপ্তাহিকটি।
প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের পথ বেছে নেন বালাসাহেব। ১৯৬৬ সালে তৈরি হয় শিবসেনা। শিবাজি পার্কে প্রথম জনসভা মাতিয়ে দিয়েছিলেন শীর্ণকায় বালাসাহেব। প্রয়োজনে হিংসার পথ নিতে কখনই পিছপা হয়নি শিবসেনা। ধীরে ধীরে বলিউড-সহ বিভিন্ন শিল্পের কর্মী সংগঠন দখল করতে শুরু করে তারা। এই পর্যায়ে বামেদের সঙ্গে বার বার সংঘর্ষ হয়েছে শিবসেনার।
প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের দায়ে এক বার গ্রেফতার হন বালাসাহেব। মুম্বই জুড়ে তাণ্ডব শুরু করে শিবসৈনিকরা। শেষ পর্যন্ত বালাসাহেবই তাদের থামান। বিশেষজ্ঞদের মতে, বালাসাহেবকে গ্রেফতার করার অর্থ তখনই বুঝে যায় অন্য রাজনৈতিক দলগুলি।
বিজেপি-র সঙ্গে জোট গড়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান বালাসাহেব। মরাঠি আবেগ ছেড়ে হিন্দুত্বের আরও বড় পরিসরে রাজনীতি শুরু করেন তিনি। মুসলিম-বিরোধী বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর বিভিন্ন মন্তব্যে বার বার বিতর্ক হয়েছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে মুম্বইয়ে দাঙ্গায় বালাসাহেবের বিশেষ ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছিল শ্রীকৃষ্ণ কমিশন। ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ছ’বছর ভোটাধিকারও খুইয়েছিলেন শিবসেনা প্রধান।
১৯৯৫ সালে প্রথম মহারাষ্ট্রের তখত দখল করে বিজেপি-শিবসেনা জোট। বালাসাহেব কখনওই মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেননি। কিন্তু, সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা যে তাঁর হাতে তা জানাতে কোনও কুণ্ঠা ছিল না বালাসাহেবের।
কখনও সংখ্যালঘুদের নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করেছেন, কখনও বিহারিদের অন্য রাজ্যে বোঝা বলেছেন। তাঁর আদেশে শিবসেনা ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ ভন্ডুল করে দিতে নেমেছে। শাহরুখ খান আইপিএলে পাক ক্রিকেটারদের আনার পক্ষে সওয়াল করলে তাঁর ছবির প্রদর্শন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন শিবসেনা প্রধান। কিন্তু, বিহারে উন্নয়ন করায় নীতীশ কুমারের প্রশংসা করেছেন সেই বালাসাহেবই। বলেছেন, সব মুসলিমের তিনি বিরোধী নন। ভারতে থেকেও যে সব মুসলিম এ দেশের আইন মানেন না তাঁদের সঙ্গেই তাঁর বিরোধ। তাঁর মৃত্যুর পরে পাকিস্তানি ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদ জানিয়েছেন, বালাসাহেবের বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। মাতোশ্রীতে গিয়ে শিবসেনা প্রধানের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেছিলেন। সেই মিয়াঁদাদ, যাঁর পুত্রবধূ পাকিস্তানে আশ্রিত ভারতের ‘ওয়ান্টেড নং ওয়ান’ দাউদ ইব্রাহিমের মেয়ে। খুবই সম্ভব। কারণ, বৈপরীত্যের আর এক নাম বালাসাহেব ঠাকরে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.