আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠনকে ছাপিয়ে গেল চড়া সুরের রাজনীতি! এ বার কলকাতার বেনিয়াপুকুর এলাকার মিল্লি আল আমিন কলেজে।
কলেজের এক শিক্ষিকার অভিযোগ, শনিবার পরিচালন সমিতির বৈঠকে যোগ দিতে গেলে সমিতির সম্পাদক মহম্মদ জাহাঙ্গির তাঁকে ধাক্কা মারেন। তাঁকে বৈঠক ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। আর এই ঘটনা ঘটে সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের উপস্থিতিতে এবং তাঁরই প্রশ্রয়ে। অন্য দিকে, সাংসদের অভিযোগ, ওই শিক্ষিকা-সহ তিন জন সিপিএম সমর্থক। তাঁরা কলেজে আসেন না, ক্লাস করেন না। শিক্ষিকারা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, কলেজে রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করেছেন সুলতান আহমেদ।
ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামের নাম কিছু দিন আগেই খবরের শিরোনাম হয়েছে। তখনও প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষার সঙ্গে যাঁদের যোগাযোগ নেই, এমন ব্যক্তিদের কেবল রাজনীতির সুবাদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথায় বসানো হবে কেন। এ দিনের ঘটনায় আরও এক বার সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য এ দিন বলেন, “কে কোন দলের সমর্থক, এ ক্ষেত্রে সেটা বিচার্য হতে পারে না।”
ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনীতি দূর করাই হবে তাঁর সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু সিংহভাগ কলেজেই পরিচালন সমিতির মাথায় তৃণমূলের নেতানেত্রীরা।
শনিবার ছিল মিল্লি আল আমিন কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠক। সেই বৈঠক অবৈধ বলে অভিযোগ জানান জারিনা খাতুন নামে এক শিক্ষিকা। তাঁর অভিযোগ, সরকার মনোনীত সদস্যদের আমন্ত্রণ না জানিয়েই পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হচ্ছে। এটা অবৈধ এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে সম্প্রতি কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন উচ্চশিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান। সেই চিঠি দেখিয়েই জারিনা এ দিনের বৈঠকটি অবৈধ বলে দাবি করেন।
ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, চিঠিটির কথা বলতে গেলে তাঁকে ধাক্কা মারেন জাহাঙ্গির। তিনি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান বলে জারিনার দাবি। অবশ্য পরে নিজের আইনজীবীর হস্তক্ষেপে বৈঠকে যোগ দেন তিনি।
সুলতান আহমেদ বলেন, “ওই শিক্ষিকারা সিপিএম করেন। নিয়মিত ক্লাস নেন না। এমনকী প্রত্যেক দিন কলেজেও উপস্থিত হন না।” সিপিএম করা কি অন্যায়? সাংসদ বলেন, “তা কেন হবে! কিন্তু কলেজের কাজে গাফিলতি করবেন, ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকাকে মানবেন না, সে সব তো মেনে নেওয়া যায় না।”
কিন্তু পরিচালন সমিতির বৈঠকে সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত প্রতিনিধিদের ডাকা হচ্ছে না কেন? সুলতান আহমেদ বলেন, “এই কলেজ একটি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বাছাইয়ের বিশেষ নিয়ম রয়েছে।” সুলতানের দাবি, বর্তমান প্রতিনিধিদের এই বিশেষ নিয়মে মনোনীত করা হয়নি। তাই তাঁদের বাদ দিয়ে বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে বেআইনি নেই। ব্রাত্যবাবুর বক্তব্য, “সরকারি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে পরিচালন সমিতির বৈঠক করা সম্পূর্ণ বেআইনি। অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |