ভোরের দুর্ঘটনার জেরে দুপুর পর্যন্ত যানজটে আটকে রইল শহরের একটি বড় অংশ। ছাড় পেল না হাওড়াও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বিকেল গড়িয়ে যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ট্র্যাফিক বিভাগে ট্রেলার সরানোর মতো বড় ক্রেন না থাকার ফলেই এই বিপর্যয়।
পুলিশ জানায়, শনিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ বিদ্যাসাগর সেতুর উপর কন্টেনারবোঝাই দু’টি ট্রেলারের সংঘর্ষে আড়াআড়ি ভাবে উল্টে যায় একটি ট্রেলার। গুরুতর জখম হন চালক। তাঁকে এসএসকেএম-এ ভর্তি করানো হয়েছে। অন্যটিও রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে পড়ে। গাড়ি দু’টি রাস্তা আটকে দেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় হাওড়ামুখী যান-চলাচল।
যানজটে আটকে পড়া গাড়ি চালকেরা জানিয়েছেন, সকাল ছ’টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। কন্টেনার সরানোর জন্য নিয়ে আসা হয় পাঁচটি ক্রেন। কিন্তু লাভ হয়নি। দু’টি গাড়িতে ১০০ টনের বেশি মালপত্র ছিল। ছোট ক্রেন দিয়ে তা সরানো যায়নি। এর পরে খবর যায় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরে (ডিএমজি)। সকাল দশটায় কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্যাস ও বৈদ্যুতিক ‘কাটার’ দিয়ে কন্টেনারগুলি আলাদা করার কাজ শুরু করেন। তত ক্ষণে কলকাতার বিরাট এলাকা যানজটের কবলে পড়ে গিয়েছে। গ্যাস ‘কাটার’ দিয়ে কন্টেনারগুলি আলাদা করার পর বন্দর থেকে বড় ক্রেন এনে ট্রেলারগুলি সেতু থেকে নামিয়ে আনা হয়। |
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় বিকেলে। বিদ্যাসাগর সেতু আটকে পড়ার ফলে এজেসি বসু রোড উড়ালপুল, পার্কসার্কাস, খিদিরপুর, হেস্টিংস রোড, স্ট্র্যান্ড রোডে যানজট হয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতার বেলভেডিয়ার রোড, ডায়মন্ড হারবার রোড, হরিশ মুখার্জি স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন রাস্তাতেও গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। সকাল ন’টার পর থেকে হাওড়া থেকে কলকাতায় আসার রাস্তা দিয়ে হাওড়ামুখী গাড়িগুলিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর ফলে টোলপ্লাজার সামনে যানজট সৃষ্টি হয়। কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। যানজট হয় হাওড়ার ফোরশোর রোডেও। অনেকেই বাস থেকে নেমে হেঁটে কলকাতার দিকে রওনা দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাওড়া কমিশনারেটের কর্তারাও ঘটনাস্থলে হাজির হন। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, হাওড়া থেকে কলকাতামুখী গাড়ি পুরোপুরি আটকে রাখা হয়নি। সেতুর এক দিকের রাস্তা দিয়ে দু’দিকের গাড়ি চালানো হয়েছে। তাই হাওড়ার দিকে যানজট ছড়িয়ে পড়েছিল।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত দু’টি ট্রেলারই কলকাতা বন্দর থেকে মালপত্র নিয়ে হাওড়ার দিকে যাচ্ছিল। রেষারেষির ফলেই এই দুর্ঘটনা ট্রেলার সরাতে কেন এত ক্ষণ সময় লাগল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “ওই ট্রেলার সরানোর জন্য যে ক্রেন দরকার তা আমাদের কাছে ছিল না। পরে গ্যাস ‘কাটার’ দিয়ে কন্টেনার কেটে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।” ডিএমজি-কে আগে খবর দেওয়া হল না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “আমাদের ক্রেন দিয়ে কাজ হয়ে যাবে মনে করা হলেও তা হয়নি। তাই ডিএমজি-কে ডাকা হয়।” |