|
|
|
|
|
|
|
সঙ্গীত সমালোচনা... |
|
বেভারলি হিলস। বাঙালি গায়িকা। শুচিস্মিতা |
এ আর রহমানের হাত ধরে হলিউডে গিয়েছিলেন চাকদার মেয়ে
শুচিস্মিতা দাস।
এ বার উড়ে যাচ্ছেন ওয়াশিংটন ডিসি-তে ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব
রিলিজিয়ান্স’-এ গান গাইতে। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
কতটা পথ পেরোলে তবে বহুদূর বলা যায়?
হলিউডে প্রথমবারের জন্য একটা ফিল্মে গান গেয়ে এতটাই মাত করেছিলেন, যে এই শীতে শুচিস্মিতার ডাক এসেছে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে।
সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে শুচিস্মিতা দাস। থাকতেন চাকদায়। এখন ঠিকানা মুম্বই। বাবা রেলে চাকরি করতেন। মা শিক্ষিকা।
৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর, ওয়াশিংটন ডিসি-তে বসতে চলেছে ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব রিলিজিয়ান্স ২০১২’। স্বামী বিবেকানন্দের দেড়শো জন্মবার্ষিকীর পূর্তিতে, তাঁরই বাণীর অনুপ্রেরণায় একটি সম্মেলন। যেখানে বক্তব্য রাখবেন আমেরিকার রাষ্ট্রনীতিবিদ ডঃ কনডোলিজা রাইস, আইনজীবী ও সমাজকর্মী মার্টিন লুথার কিং থ্রি-এর মতো মানুষ। এই কংগ্রেসের জন্য নানা দেশের শিল্পীদের নিয়ে যে কয়্যার তৈরি হয়েছে, তাতে ভারতীয় হিসেবে ডাক পেয়েছেন শুচিস্মিতা।
“ছোট্টবেলা থেকে শুনে আসছি, ১৮৯৩ সালে চিকাগোয় ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অফ রিলিজিয়ান্স’-এ স্বামীজির বক্তৃতার কথা। আর আজকে আমার মতো একজন সাধারণ পরিবারের মেয়ে সেই একই কংগ্রেসে গান গাওয়ার সুযোগ পেল,” বললেন শুচিস্মিতা।
কী করে সম্ভব হল এমনটা? শুচিস্মিতা জানালেন কৃতিত্বটাই বলতে গেলে এ আর রহমানের। উনি তাঁকে হলিউডে একটি ছবিতে গান গাওয়ার জন্য সুযোগ করে দেন।
ছবির নাম ‘দ্য বেস্ট এক্সটিক মেরিগোল্ড হোটেল’। পরিচালক জন ম্যাডন। নিউ জার্সির একটা লিফটে শুচিস্মিতার সঙ্গে প্রথম দেখা রহমানের। সেখানেই যাত্রা শুরু। “ভয়ে ভয়ে বলেছিলাম আপনাকে গান শোনাতে চাই, এর পর ওঁর কনসার্টের শেষে দেখা করতে যাই। ল্যাপটপ খুলে সিডিটা বাজিয়ে শোনালাম ওঁকে,” বলছিলেন শুচিস্মিতা। |
|
আমেরিকায় শুচিস্মিতা |
তার ঠিক দশ সেকেন্ড পরে রহমানের প্রশ্ন, “এটা তুমি?” শুচিস্মিতা হ্যাঁ বলতেই বলেন, “লস এঞ্জেলসে আসতে পারবে?” পাল্টা জবাব, “পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে আমি আপনার জন্য গাইতে যেতে রাজি।” এর সাত মাস পরে ‘দ্য বেস্ট এক্সটিক মেরিগোল্ড হোটেল’ ছবিটায় গান গাওয়ার ডাক এল। ছবির সঙ্গীত পরিচালক থমাস নিউম্যান পাঁচখানা গ্র্যামি জিতেছেন। সুর করেছেন ‘আমেরিকান বিউটি’, ‘রেভলিউশনারি রোড’, ‘ফাইন্ডিং নেমো’, ‘রোড টু পার্ডিশন’-এ, এমনকী বন্ড ছবি ‘স্কাইফল’-এও।
“একদিন মুম্বইতে ফোন। এক বিদেশিনী মিনিট দুয়েক ধরে আমার প্রশংসা করতে লাগলেন। তারপর বললেন, ‘এ আর-কে চেনো? উনি আমাদের কাছে তোমার গানের একটা সিডি পাঠিয়েছেন। আমরা চাই তুমি আমাদের ছবিতে গান করো।”’ এ ভাবেই হলিউডের ডাক এসেছিল, বলছিলেন শুচিস্মিতা।
তার পর নিউম্যানের ফোন। তবু বিশ্বাস হয়নি। বলিউডে একটাও সেরকম গান নেই। কলকাতার সঙ্গীত রিসার্চ অকাদেমির থেকে অজয় চক্রবর্তীর কাছে গান শিখেছেন, এই যা। তার পর অমেদাবাদের সপ্তক ফেস্টিভ্যাল থেকে নিউ ইয়র্ক পিস কনভেনশন, ‘রাখি কা স্বয়ম্বর’ বা ‘পলকো কি ছাঁও’-এর মতো সিরিয়ালের টাইটেল ট্র্যাক থেকে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে পোলিও অভিযানের জন্য গাওয়াএ সব করেছেন। “আইপিএল টু-এর টাইটেল ট্র্যাকে শঙ্কর মহাদেবনের সঙ্গে ডুয়েট গেয়েছি। ‘চাঁদনি চক টু চায়না’ ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে গেয়েছি। কিন্তু হলিউড তো অন্য ব্যাপার,” শুচিস্মিতা বললেন।
রেকর্ডিং হল ৭ জুলাই, ২০১১। কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ১১টার সময় একটা লিমুজিন এসে শুচিস্মিতাকে হোটেল থেকে তুলে নিয়ে গেল। রেকর্ডিংয়ের সময় কোনও টেনশন নেই। পরিচালক জন ওঁকে গল্পটা বললেন। জানালেন, উনি ছবিটা রাজস্থানে শু্যট করেছেন। এর পর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে কোথায়, কী ভাবে ছবির গানে ব্যবহার করা হবে তা থমাস পুরো ছেড়ে দিলেন শুচিস্মিতার ওপরে। রেকর্ডিং করলেন ল্যারি মা। |
|
(বাঁ দিক থেকে) হলিউডের সংগীত পরিচালক থমাস নিউম্যান,
শুচিস্মিতা দাস, রেকর্ডিস্ট ল্যারি মা এবং চিত্র পরিচালক জন ম্যাডন |
“আমি বিভিন্ন রাগের ছোট ছোট বন্দিশ গেয়েছিলাম। ছবি রিলিজ হতে দেখি সেই ট্র্যাকগুলোই গোটা সিনেমা জুড়ে ব্যবহার করা হয়েছে। অভিনেত্রী জুডি ডেঞ্চের অভিনয়ের সঙ্গে পিকচারাইজ করা আমার গান,” বলছিলেন শুচিস্মিতা।
এখন শুচিস্মিতা থাকেন মুম্বইতে। সেখানে শ্রেয়া ঘোষাল আর সুনিধি চহ্বানের মতো গায়িকাদের মাঝে কী ভাবে নিজের জায়গাটা তৈরি করছেন তিনি? উত্তরে জানালেন, তিনি যখন ২০০৮-এ মুম্বইতে চলে যান তখনও ভাবেননি কারও জায়গা ওঁকে নিতে হবে। শাবানা আজমি কলকাতায় শুচিস্মিতার গান শোনেন। বলেন মুম্বইয়ে গেলে যোগাযোগ করতে। রেকর্ডিং-এর জন্য মুম্বই গিয়ে ওঁর সঙ্গে দেখা করেন শুচিস্মিতা। “উনি ওঁর বাড়িতে একটা পার্টিতে ডাকলেন। দেখি সেখানে গোটা বলিউড হাজির। শঙ্কর মহাদেবন থেকে সস্ত্রীক জাকির হোসেন। কে নেই? শাবানাজি আমাকে একটা গান গাইতে বললেন। মীরের একটা গজল গাইলাম। শঙ্করজি এগিয়ে এসে আলাপ করে নিজের নাম্বারটা দিলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কোথায় থাকি। বললাম, কলকাতায়। তারপর বলেন, ‘তুমি তো গান শিখেছ...।’ ভয়ে ভয়ে বললাম, হ্যা।ঁ তারপর বললেন, তুমি মুম্বই-এ এসে স্ট্রাগল করো,” বলছিলেন শুচিস্মিতা।
দিনের পর দিন এক বেলা খেয়ে কাটিয়েছেন মুম্বইতে। লাঞ্চ কিনতেন আর সেটাই রেখে দিতেন ডিনারের জন্য। একদিন রাত দুটোয় বাড়ি ফিরে দেখেন রুটিগুলো পিঁপড়ে খেয়ে নিয়েছে। সে রাতে শুধু জল খেয়ে শুয়ে পড়তে হয় তাঁকে।
শুধু একটাই অভিমান- এখনও টলিউড থেকে ডাক আসেনি। “আমার ব্যাডলাক। আমি ‘সা রে গা মা পা তুমি না আমি’ হোস্ট করেছি, যদিও বাংলায় বেসিক অ্যালবাম রেকর্ড করিনি। আমি চাইব দেবজ্যোতি মিশ্র, জয় সরকার, শান্তনু মৈত্র, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর সঙ্গে কাজ করতে.” বলেন শুচিস্মিতা।
হলিউড থেকে যে পথ চলা শুরু, সেটা টলিউড ছুঁয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় তিনি। |
|
|
|
|
|