সাত তাড়াতাড়ি ঘর সাফ করে চেয়ার-টেবিল ঢোকান হয়েছিল। বেশ কয়েকটি আলমারিও এসে গিয়েছে। কেনা হয়েছে কম্পিউটারও। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজও সারা হয় সময় মতো। কিন্তু লাখ খানেক টাকা খরচ হওয়ার পরে বছর ঘুরে গেলেও চালু হল না বিষ্ণুপুরের সহকারী আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকের (এআরটিও) দফতর। প্রশাসন সূত্রের খবর, কর্মী নিয়োগ না হওয়াতেই ওই দফতর চালু করা যাচ্ছে না।
নতুন গাড়ি কেনা কিংবা গাড়ির মালিকানা বদল করার মতো নানা কাজে তাই বিষ্ণুপুর মহকুমার বাসিন্দাদের ভোগান্তি কিছুমাত্র কমেনি। বাঁকুড়া সদরে জেলার একমাত্র আরটিও-র দফতর। সেখানেই তাঁদের দৌড়তে হচ্ছে। বিষ্ণুপুর শহর থেকেই বাঁকুড়ার দূরত্ব কমবেশি ৩২ কিলোমিটার। কোতুলপুর, জয়পুর, সোনামুখী, ইন্দাস, পাত্রসায়র ব্লকের গ্রামগুলি থেকে সেই দূরত্ব আরও বেশি। প্রশাসন সূত্রের খবর, এই অসুবিধার কথা ভেবে জেলা প্রশাসন ২০১১ সালের ৯ জুন বিষ্ণুপুরে অ্যাসিস্ট্যান্ট রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিস (এআরটিও) খোলা হবে বলে ঠিক করেছিল। বিষ্ণুপুরের মহকুমা প্রশাসনকে এআরটিও-র অফিস তৈরি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। বরাদ্দ করা হয় কয়েক লক্ষ টাকাও। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসকের দফতরের নীচের তলায় এআরটিও-র অফিস তৈরির জন্য সব কাজ সারা হয়ে যায়। কিন্তু কর্মী নিয়োগ না করায় সেই অফিস এখনও চালু করা যায়নি। এ রকম একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দফতর খুলতে দেরি কেন? বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অদীপ রায় বলেন, “কাজ এগোচ্ছে। কম্পিউটার, আসবাবপত্রও কেনা হয়েছে। অফিসের পরিকাঠামোও তৈরি। অফিসার-সহ ৯ জন কর্মীর দরকার। তাঁদের নিয়োগ করা হলেই অফিসটি চালু করা হবে।” কর্মী নিয়োগ কবে হবে, তাঁর নিশ্চয়তা দিতে পারেন নি বাঁকুড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক দেবাশিস বৈদ্য-ও। তাঁর কথায়, “পরিবহণ দফতরে কর্মী চেয়ে পাঠানো হয়েছে। দফতর থেকে কর্মী পেলেই বিষ্ণুপুরের এআরটিও-র দফতর চালু করা হবে।” |
এই নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনিক গড়িমসির কারণে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বিষ্ণুপুর মহকুমার বাসিন্দাদের মধ্যেও। বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা দু’চাকা গাড়ির মালিক শিবাশিস দত্ত বলেন, “মোটরবাইক কিনলাম বিষ্ণুপুর থেকে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বার-বার দৌড়তে হচ্ছে বাঁকুড়ায়। বছর খানেক আগেই শুনেছিলাম বিষ্ণুপুরে এআরটিও অফিস হচ্ছে। কিন্তু কোথায় কী! অবস্থা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে।” আর এক বাসিন্দা অনুপম বিশ্বাস বলেন, “শুধু কি গাড়ি কেনার পর রেজিস্ট্রেশনের জন্য আরটিও-র দফতরে যেতে হচ্ছে? গাড়ির মালিকানা বা ঠিকানা বদলের জন্যও বাঁকুড়ায় যেতে হয়।” এ ছাড়া গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষা দিতেও বাঁকুড়া যাওয়া ছাড়া এলাকার বাসিন্দাদের আর কোনও উপায় নেই।
বাঁকুড়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক দীপক সুকুল বলেন, “গাড়ির পারমিট বা গাড়ি ঠিকঠাক আছে কি না তা দেখাবার জন্যও অর্থাৎ ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতেও বিষ্ণুপুর মহকুমার বাস মালিকদের বাঁকুড়ায় আসতে হয়। বিষ্ণুপুরে এআরটিও-র দফতর চালু হলে সেখানেই গাড়ির কর জমা করা যেত।”
বাঁকুড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকও স্বীকার করেছেন, “গ্রামাঞ্চলে অনেকেই গাড়ির কর ফাঁকি দেন। কিন্তু বিষ্ণুপুরে এআরটিও-র দফতর চালু হলে ওই কর ফাঁকি অনেকটাই ঠেকানো যেত।” অর্থাৎ, রাজস্ব বৃদ্ধির সুযোগ থাকলেও, কয়েক জন কর্মী নিয়োগ না করায় সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারছে না পরিবহণ দফতর। |