পুলিশি ঘেরাটোপে স্বাভাবিক হচ্ছে তেহট্ট
ড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ইটের টুকরো, ভাঙা কাচ। ক্ষতবিক্ষত রাস্তায় পোড়া ডিজেল। ‘রণক্ষেত্র’ হাউলিয়া মোড়ের সেই সব টুকরো স্মৃতি টপকে ভাইফোঁটার বাজার আর বাসি-দীপাবলির রেশ নিয়ে বৃহস্পতিবার স্বাভাবিক নদিয়ার তেহট্ট।
অবরোধকারীদের হটাতে পুলিশের গুলি এবং স্থানীয় আটপৌরে এক কাঠ ব্যবসায়ীর মৃত্যুর চব্বিশ ঘণ্টা পরে, এ দিন স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেছে তেহট্ট। ঘটনাস্থল হাউলিয়া বাজার, সকাল থেকেই স্তুপীকৃত সব্জি কিংবা চড়া দামের মুরগির মাংস নিয়ে সরগরম করে রেখেছিল ভাইফোঁটার বাজার। গজ বিশেক দূরে, তেহট্ট বাস স্ট্যান্ডের গায়ে সার দেওয়া মিষ্টির দোকানগুলিতে চাক বাঁধা ভিড়। সন্ধ্যায় করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কের দু-পাশের দোকান ফের সেজে উঠেছে টুনি-বাতির আলোর মালায়। রাস্তায় দেখা মিলিছে বাস এমনকী ট্রেকারেরও।
এই আলো, শোরগোল, রিকশার হুড়োহুড়ির মধ্যেও কিন্তু চাপা অস্বস্তি ছিল দিনভর। হুটার বাজিয়ে পুলিশের টহলদারি গাড়ি পেরিয়ে যেতেই চায়ের দোকান থেকে গলির মোড়, জটলায় ঘুরে ফিরে এসছে প্রশ্নটা—‘গুলিটা না চালালে চলছিল না!’ প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশি ‘অত্যাচার’ নিয়েও।

ছন্দে ফিরছে নদিয়ার মহকুমা সদর তেহট্টে।
হাউলিয়া মোড়ের লাগোয়া বর্গিপাড়া, গোপালপুরে বুধবার রাত থেকেই এলাকার বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশির নামে কার্যত ঘরবাড়ি ‘তছনছ’ করেছে পুলিশ। এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। রামপ্রসাদ ভৌমিক পেশায় ভ্যানচালক। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তাঁর মা স্নেহলতা ভৌমিক বলেন, “চোখের সামনে ছেলেকে যে ভাবে মারছিল থাকতে পারিনি। আমি ওঁদের হাত জোড় করে মারতে বারণ করেছিলাম। ওরা আমাকে সপাটে বুটের লাথি মারল।” গৌতম বিশ্বাস জানান, তল্লাশির নামে পুলিশ তাঁর বর্গিপাড়ার এক চিলতে ঘরে দরজা ভেঙেই ঢুকে পড়ে। তারপর ভেঙেচুড়ে ঘর তছনছ করার ফাঁকে হাত ধরে টানাটানি করে তাঁর স্ত্রীর-ও। সনকা হালদার ছেলে অরূপ চোখে ভাল দেখতে পান না। গলির মোড়েই দাঁড়িয়ে ছিলেন। সনকাদেবী বলেন “অন্ধ ছেলেটাকে লাথি মারতে মারতে হিঁচড়ে টেনে গাড়িতে তুলল। তারপর আমাকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে দিল কয়েক ঘা।”
পুলিশ এমন ‘অত্যাচারের’ কথা মানতে চায়নি। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার তেহট্টের মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের বাড়ি ও দফতরে চড়াও হওয়া এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া-সহ বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজত দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে একটি পিস্তল-সহ দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র। একটি তাজা বোমাও। আজ, শুক্রবার তেহট্ট মহকুমা জুড়ে বন্ধ ডেকেছে সিপিএম ও সিপিআই (এমএল)। রাজ্য জুড়ে ‘কালা দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির শুক্রবার তেহট্টে যাওয়ার কথা। তবে জেলা প্রশাসন যেতে দেবে কি না, সংশয় আছে।

ভেঙে পড়েছে ধৃত রামপ্রসাদ ভৌমিকের পরিবার
এ দিন সকাল থেকেই রাজনৈতির দলের নেতা-কর্মীদের তেহট্টে প্রবেশের উপরে ফতোয়া জারি করে জেলা প্রশাসন। পিডব্লুডি মোড় থেকে কৃষ্ণনগরের দিকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার আগেই রাজ্য সড়কের উপরে এ দিন সকাল থেকে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ। তেহট্টগামী সব গাড়ির উপরেই চলেছে নজরদারি।
সকালে সেখানেই থামিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের। দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে মানবাধিকার রক্ষা কমিটির সদস্যদেরও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য সেখানেই থমকে গিয়ে বলেন, “মৃত অশোক সেন আমাদের কর্মী ছিলেন। তাই চেয়েছিলাম তাঁর বাড়ি গিয়ে শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে।” কিন্তু অশোকবাবুর পরিবার জানিয়েছে, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিল না তাঁর? শমীকবাবু অবশ্য সে প্রশ্নের উত্তর দেননি।
ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত, দোষী পুলিশের শাস্তি এবং হতাহতদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাহুল সিংহ, তথাগত রায়-সহ বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। রাহুলবাবু বলেন, “পরিস্থিতি ভয়ানক। গুলি চালানোর পরে রাতে পুরুষশূন্য বাড়িতে ঢুকে পুলিশ অত্যাচার করেছে।” সিপিএমের প্রতিনিধি দলকে আটকে দেওয়া হয় কৃষ্ণনগরেই। আনিসুর রহমান বলেন, “তদন্ত হচ্ছে হোক। কিন্তু তেহট্টের ঘটনার মধ্যে যেন তৃণমূল আবার চক্রান্ত না দেখে। ওখানে শান্তি ফিরুক, এটাই চাই।”

ছবি: কল্লোল প্রামাণিক



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.