|
|
|
|
বরাদ্দ মিলল না দু’বছর |
প্রশাসনিক গড়িমসিতে বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া গ্রাম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
জেলার নামের সঙ্গেই জুড়ে গিয়েছে ‘পিছিয়ে পড়া’ শব্দটা। ২৯টি ব্লকের মধ্যে মাওবাদী অধ্যুষিত ১১টি ব্লকই সরকারি ভাবে চিহ্নিত পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে। তার মধ্যে ৬৩১টি গ্রাম আরও বিশেষ ভাবে চিহ্নিত পিছিয়ে পড়া গ্রাম হিসেবে। পানীয় জল থেকে শুরু করে রাস্তা, সেচ-ব্যবস্থা এ ধরনের ন্যূনতম সুবিধাটুকুও নেই সেখানে। অথচ এই গ্রামের উন্নয়নেও রাজ্য সরকারের বরাদ্দ টাকা পরপর দু’বছর পেল না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। অভিযোগ, প্রশাসনিক উদাসীনতায় নির্দিষ্ট সময়ে উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচ করতে পারেনি প্রশাসন। দিতে পারেনি হিসেবও। আর তাতেই দু’বছর মিলল না টাকা। বঞ্চিত হলেন এই প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা।
কিন্তু এ বার অর্থাৎ ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ২০১১-১২-র বরাদ্দ টাকা ফের পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। সেই টাকা খরচের জন্য ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এমনকী ২০১২-১৩ আর্থিক বছরেও যাতে বরাদ্দ মেলে তার জন্য পরিকল্পনা তৈরির কাজ প্রায় শেষ বলে জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা উন্নয়ন ও পরিকল্পনা আধিকারিক প্রণব ঘোষ। কিন্তু এ তো কী হবে তার কথা। গত দু’বছর অর্থাৎ ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯-এর বরাদ্দ অর্থ খরচ করা গেল না কেন? কোনও মন্তব্য করতে নারাজ প্রণববাবু। তাঁর কথায়, “নতুন করে টাকা আসছে। সেই টাকায় দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে প্রতি বছরেই জেলা প্রাপ্য টাকা পায় সে জন্য এ বার আগে থেকেই প্রকল্প তৈরি করা হবে এবং সময়ে অর্থ খরচ করে তার হিসাবও দেওয়া হবে।” |
অর্থবর্ষ |
বরাদ্দ |
খরচ হয়নি |
২০০৭-০৮ |
১ কোটি ৫২ লক্ষ |
৭ লক্ষ ৭ হাজার |
২০০৮-০৯ |
১ কোটি ৮ লক্ষ |
৫ লক্ষ ৯ হাজার |
পরপর দুই অর্থবর্ষে বরাদ্দ টাকা খরচ করতে না পারায় ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবর্ষে টাকা মেলেনি।
এর ফলে বঞ্চিত ৬৩১টি গ্রামের ২ লক্ষ ৭ হাজার ৫০৮ জন বাসিন্দা। |
|
জেলার ২৯০টি পঞ্চায়েতে ৭ হাজার ৫৮০টি গ্রাম রয়েছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে জঙ্গল ও লাল কাঁকড়ে মাটি। নেই সেচেরও ব্যবস্থা। ফলে চাষের জন্য বর্ষার উপরেই নির্ভর করতে হয় বহু গ্রামের মানুষকে। ভারী বর্ষা হলে ধান চাষ হয়, নতুবা খরচ করে চাষ করা ধান মাঠেই শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব-সমস্যার শেষ নেই। জঙ্গলের কাঠ, পাতা কুড়িয়ে সংসার চালান বহু মানুষ। কয়েক বছর আগেই এই ধরনের গ্রামগুলিকে চিহ্নিত করে সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬৩১টি গ্রাম রয়েছে ‘চূড়ান্ত পিছিয়ে পড়া’ অবস্থায়। এই গ্রামগুলির জনসংখ্যা ২ লক্ষ ৭ হাজার ৫০৮ জন। এই গ্রামগুলির উন্নয়নেই ২০০৭-০৮ আর্থিক বছর থেকে অর্থ বরাদ্দ শুরু করে রাজ্য সরকার। ওই বছর জেলাকে দেওয়া হয় ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। পরের বছরে অর্থাৎ ২০০৮-০৯ আর্থিক বছরে ওই প্রকল্পেই জেলা পায় ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু সেই টাকা খরচ করতে করতে ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ দু’-দুটো আর্থিক বছর গড়িয়ে যায়। তাই শুধু নয়, এখনও প্রথম বছরের ৭ লক্ষ ৭ হাজার ও দ্বিতীয় বছরের ৫ লক্ষ ৯ হাজার টাকা খরচ করতে পারেনি প্রশাসন। আর সময়ে অর্থ খরচ না করতে পারা ও খরচের হিসেব না দিতে পারার জন্য ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ আর্থিক বছরের টাকাও পায়নি জেলা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, নির্দিষ্ট সময়ে ওই টাকা খরচ করে যদি সঠিক প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করা যেত তাহলে আরও বেশি টাকাও পেতে পারত জেলা। যে টাকায় অনেক গ্রামেই রাস্তা, বিশুদ্ধ পানীয় জল, সেচের ব্যবস্থা, কৃষিসামগ্রী দেওয়া, প্রাণিপালন করা প্রভৃতি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামগুলির সার্বিক উন্নতি ঘটানো সম্ভব হত। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান (আইএপি), ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্রান্ট ফান্ড (বিআরজিএফ)-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে জঙ্গলমহল ও পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলিতে। তারই সঙ্গে রাজ্য সরকারও এই ৬৩১টি গ্রামের উন্নয়নে অর্থ দিয়েছিল।
কিন্তু প্রাশাসনিক উদাসীনতায় দু’বছরের উন্নয়নের টাকা পাওয়া গেল না। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, এ বারের টাকায় গরিব মানুষদের ছাগল, মুরগি ও শুয়োর কিনে দেওয়া হবে। কিনে দেওয়া হবে চাষের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম অর্থাৎ ধান বোনা, ধান ঝাড়াইয়ের যন্ত্র, আলু ও বাদাম লাগানোর যন্ত্র-সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। এ ছাড়া সেচের জন্য চেক বাঁধ, ঢল বাঁধ তৈরি করা হবে। পানীয় জলের জন্য মার্ক-২ টিউবওয়েল ও সাব-মার্সিবল বসানোর কাজ করা হবে। প্রশাসনের আশা, এ ভাবেই ফের ধীরে ধীরে উন্নয়ন হবে এই গ্রামগুলির। আর তার সঙ্গে প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদেরও আশা, প্রশাসনের ‘সুমতিতে’ এ বারের বরাদ্দে হয়তো সত্যিই উন্নয়নের পথে হাঁটবেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|