বাঘিনি তো নয়, যেন সের্গেই বুবকা! মাটি থেকে একলাফে খাঁচার পাঁচিলের উপর দিয়ে সটান ওপাশে! কয়েক ঘণ্টা আশপাশের জঙ্গলে রক্ষীদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে, কয়েকজনের উপর চড়াও হয়ে শেষ পর্যন্ত খাঁচায় ফিরল। তবে ঘুমন্ত অবস্থায়।
কর্তৃপক্ষের গাফিলতি নয়, স্রেফ নিজের ঠ্যাং-এর জোরেই কয়েক ঘণ্টা স্বাধীন হয়ে যায় ‘নাং’। হনুমান নয়, রয়্যাল বেঙ্গলের এমন লাফে হতচকিত অরুণাচল প্রদেশের ইটানগর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে বাঘের খাঁচার উচ্চতা বাড়াচ্ছেন। |
ইটানগর চিড়িয়াখানা, বিশেষ করে বাঘের বাসা ঘিরে ঘটনার ঘনঘটা চলছে তো চলছেই! সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখে নিরাপত্তার বেড়া টপকে ইটানগর চিড়িয়াখানায় ঢুকে বাঘ মেরে গিয়েছিল শিকারিরা। কেবল গুলি করে মারাই নয়, বাঘটিকে কেটেওছিল শিকারিরা। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকেই ধরা যায়নি। এর পর বাঘের খাঁচার আশপাশে আলো বাড়ানো হয়, বাড়ানো হয় পাহারাও। চালু হয় বিস্তর নিয়ম কানুন। কিন্তু তার পরেও, নভেম্বরের ৬ তারিখে সুন্দরবনের দুই যুবক, বাঘ দেখার বাসনায়, দোকোসো নদী পার হয়ে, প্রাচীর টপকে চিড়িয়াখানায় ঢুকেছিল। ‘টাইগার ল্যান্ড’-এর কাছে ঘোরাঘুরির সময় তাদের ধরা হয়। এর আগে ২০০৬ সালে, অরুণাচল প্রদেশের এই রাজ্য চিড়িয়াখানার ভিতরেই, বিষ দিয়ে তিনটি বাঘ ও একটি চিতাবাঘকে হত্যা করা হয়েছিল। এর পর বাঘিনীর খাঁচা টপকানোর ঘটনা। আপাতত, ইটানগর চিড়িয়াখানায় ৫টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। তাদেরই এক সদস্যা, ‘নাং’ গত কাল সকালে খাঁচা টপকে পালায়।
ইটানগর চিড়িয়াখানায় রেঞ্জ ফরেস্ট অফিসার রায়া ফ্লাগো জানান, ঘটনার সূত্রপাত গত কাল সকাল ৭টা নাগাদ। খাঁচা সাফ করার জন্য, প্রতিদিনের মতোই রাতের খাঁচা থেকে নাংকে মুক্ত করে দেন এক চিড়িয়াখানাকর্মী। কিন্তু অন্য দিনের মতো, লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে বাইরের ঘেরা চত্বরে ঘোরাফেরা না করে, ওই কর্মীকে আচমকা বিরাশি শিক্কার থাপ্পড় মেরেই দৌড় লাগায় নাং। কেবল দৌড় নয়, কার্যত ‘রান আপ’-টেনে নিখুঁত গতিতে দৌড়ে এসেই লাফ মারে সে। এক লাফে পার হয়ে যায়, খাঁচার ১০ ফুট উঁচু ঘেরাটোপ। ত্রাহি রব ছড়িয়ে পড়ে চিড়িয়াখানায়। ফ্লাগো ও অন্যান্য রক্ষীরা বাঘের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেন। আবাসিক কর্মীরা ভয়ে ঘরে দোর দেন। |
এর পর, একটি ঝোপের মধ্যে নাং-কে দেখতে পান বনরক্ষী তাজার আনি। কিন্তু দর্শনই কাল হল। তাজারকে ধরাশায়ী করে, ক্ষতবিক্ষত করে পালায় বাঘিনি। বেলা বারোটা নাগাদ, চিড়িয়াখানার লাগোয়া পাহাড়ে ফের তার দর্শন মেলে। ঘুম পাড়ানি গুলি ছোড়া হলেও তা দু’বার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। নাং-এর পাল্টা হানায় জখম হন আরও এক রক্ষী।
এর পর, ফ্লাগো, ইটানগরের ওসি, পোমা ও লোবি রেঞ্জের রেঞ্জার ও উপ প্রধান মুখ্য বনপাল মিলিতভাবে ফের নাং-এর পিছু ধাওয়া করতে থাকেন। বিকেল নাগাদ ঘুম পাড়ানি গুলি তার শরীরে দেগে দেওয়া সম্ভব হয়। টাইগার ল্যান্ডের খাঁচায় ঢুকিয়ে তবে শান্তি ও স্বস্তি।
ফ্লাগো ফোনে বলেন, “পাঁচ বছর চার মাস বয়সী বাঘিনিটির আচরণে কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। আচমকাই এই কাণ্ড। আপাতত সে সুস্থ। তিন বনকর্মী হাসপাতালে ভর্তি। এদের মধ্যে তাজারের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
এই ঘটনার জেরে আজই, বাঘের খাঁচার উচ্চতা দশ থেকে বাড়িয়ে ১৬ ফুট করা হচ্ছে। ফ্লাগো জানিয়েছেন, সান ফ্রান্সিসকো চিড়িয়াখানা থেকেও ১০ ফুটের খাঁচা টপকে বাঘ পালিয়ে গিয়েছিল। তার পর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ খাঁচার উচ্চতা সাড়ে ১৬ ফুট করেন।
|
ছবি: চিড়িয়াখানার সৌজন্যে |