সম্পাদকীয় ২...
বুদ্ধিনাশা প্রযুক্তি
বিজ্ঞান বলিতেছে, মানুষের বুদ্ধি কমিতেছে। আগেকার মানুষের চাহিতে এখনকার মানুষ তুলনায় কম বুদ্ধিমান। মানবশরীরে কয়েকটি জিনের বদলেই নাকি এমন কাণ্ড। তবে বুদ্ধি যে কমিতেছে, ইহা অচিরে সাদা চোখে বড় একটা ধরা পড়িবার উপায় নাই। কারণ প্রযুক্তি। প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত উন্নতিই নাকি আপাতত বুদ্ধির ঘাটতিকে ঢাকিয়া রাখিতেছে। কথাটি ভাবিবার। প্রযুক্তিকে ফেলিয়া দিবার কারণ নাই, প্রযুক্তির উপকারিতাকে অস্বীকার করিবারও উপায় নাই। তাহা বলিয়া প্রযুক্তিকেই যাঁহারা বিজ্ঞান বলিয়া মনে করেন এবং প্রযুক্তিকেই যাঁহারা বুদ্ধির দোসর বলিয়া মনে করেন তাঁহাদের এই মনোভাব বদলাইবার সময় আসিয়াছে। ক্রমশই আমরা প্রযুক্তির উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হইয়া উঠিতেছি। মানবমস্তিষ্ক যাহা একদা সহজে দ্রুত করিয়া ফেলিত এখন বহু ক্ষেত্রে আর তাহা করে না। করিতে দেওয়া হয় না। গোদা বাংলায় বলিলে, প্রযুক্তির কল্যাণে মাথা খাটাইবার দস্তুর ক্রমশ কমিতেছে। চারপাশেই অজস্র হাতে-গরম উদাহরণ। মুখে মুখে যোগবিয়োগ বা হিসাব করিবার আর দরকার নাই, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও অন্যান্য বিপণিতে গণক-যন্ত্র তাহা দ্রুত সমাপন করে। যদি কোনও দিন দৈবাৎ সে যন্ত্র খারাপ হইয়া যায় তাহা হইলে অতীত কালের ন্যায় দোকানদার দ্রুত হিসাব করিতে পারেন না, কারণ অনভ্যাস, দীর্ঘদিন মাথা না খাটাইবার ফল। ইদানীং প্রযুক্তির কুশলতায় হাতে লেখার অভ্যাস ক্রম-অপস্রিয়মাণ। ইহাতে কেবল হাতের লেখার ক্ষতিই হইতেছে না, ‘স্পেলচেকার’ ও অন্যান্য লিখনসহায়ক প্রযুক্তির কুশলতায় বানান মনে রাখিবার ও শিখিবার ইচ্ছা কমিয়া যাইতেছে। এমনতর টাটকা উদাহরণ আরও দেওয়া যায়।
বিশেষ করিয়া উন্নত দেশগুলিতে প্রযুক্তি যে বুদ্ধিবৃত্তিকে কমাইয়া দিয়াছে তাহা খেয়াল করিলেই বোঝা যায়। এই দেশগুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই পড়ুয়াদের মধ্যে শ্রম করিবার ইচ্ছা নাই, মাথা খাটাইবার উৎসাহ নাই, কেবল দ্রুত সহজ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্রমবর্ধমানতা চোখে পড়ে। ভারত প্রথম বিশ্বের উন্নত দেশগুলির ন্যায় প্রযুক্তি ব্যবহারে অগ্রণী নহে। ইহার সুফল মাঝে-মধ্যেই দৃষ্টিগোচর ও কর্ণগোচর হয়। ভারতীয় ছাত্র ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছাত্রদের বিদেশে বিশেষ সুনাম। প্রযুক্তির সহায়তা ভারতীয়রা কম পান। ফলে গণিতে মাথা খাটাইতে তাঁহারা বেশ ভালই পারেন। ইংরেজি বানান প্রতিযোগিতায় ব্রিটেন ও আমেরিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের জয়লাভের খবর প্রায়ই কানে আসে। নাই নাই করিয়াও ভারতের বিদ্যালয় শিক্ষা এখনও যথেষ্ট কাজের। মগজাস্ত্র সঞ্চালনে ভারতীয় ছাত্ররা পটু। ইহার অর্থ এমন নহে যে সেই অরণ্য ফিরাইয়া দাও বলিয়া সভ্যতার বাতায়নে দাঁড়াইয়া ক্রন্দন করিতে হইবে। অরণ্যে উপনীত হইলেই বুদ্ধি ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাইবে। আসলে পিছন দিকে অগ্রসর হইবার কারণ নাই। কেবল সামঞ্জস্যবোধ বিধেয়। মানুষ নির্মিত যন্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার বুঝিয়া শুনিয়া করিতে হইবে। ভারতের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তাহা সহজসাধ্য। অতি উন্নত দেশগুলি কী ভাবে প্রযুক্তির দাস হইয়াছে তাহা বিচার করিয়া এই দেশ প্রযুক্তির চালক হইবার স্বপ্ন দেখিতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.