এত দিন সীতাভোগ আর মিহিদানার শহরের বদনাম ছিল ‘প্রাচীনপন্থী’ বলে। মিষ্টি প্রস্তুতকারকেরা না কি শুধু একঘেয়ে সন্দেশ, রসোগোল্লা, পান্তুয়া, মালপোয়া বানিয়ে চলেছেন, আর ‘বাজার নেই’ বলে হা-হুতাশ করছেন। কিন্তু ভাই ফোঁটার সকালে ১০টা বাজতে না বাজতেই পসার ফাঁকা হয়ে গেল বর্ধমান শহরের মিষ্টির দোকানগুলির। সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। দেখে এক মিষ্টান্ন বিক্রেতার গলায় আনন্দের সুর, “ হবে না কেন! এ বার তো মেমারি আউশগ্রাম, পানাগড়, বোলপুর, গুসকরা, গলসি, ভাতার সহ অসংখ্য এলাকা থেকে মানুষ ভাল মিষ্টির খোঁজে বর্ধমানে এসেছিলেন। তাঁরা কালীপুজোর দিন থেকেই মিষ্টি কিনছেন। থাকবে কী করে?”
প্রদীপ ভকত। পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির বর্ধমান জেলার সম্পাদক। বিবি ঘোষ রোডের এই মিষ্টি ব্যবসায়ী এবং অনিরুদ্ধ নাগের নেতৃত্বে বর্ধমানের মিষ্টান্ন শিল্প এ বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতটাই যে, গত তিন দিন গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের হাত জোড় করে লাইন দিতে বলতে হয়েছে তাঁদের। |
প্রদীপবাবু জানালেন, এবারের আর্কষণ ছিল পাঁচ টাকা করে খেজুর গুড়ের চিত্তরঞ্জন, ১৬ টাকা করে জলভরা মনোরঞ্জন, আর স্পেশাল কাশ্মীরি পোলাও। সেটি অবশ্য সীতাভোগেরই এক ধরনের উন্নত সংস্করণ। প্রতি কিলোগ্রাম বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২৪০ টাকা দরে। ছিল কাজু আর কেশর দিয়ে তৈরি বসন্তবাহার, দাম ১২টাকা মাত্র। এ ছাড়াও বিশেষ ভাবে ছানা আর কাজু বাদাম দিয়ে তৈরি বর্ধমানবাহারও এবারের ভাই ফোঁটায় ‘সুপার-হিট’। দাম মাত্র ১৬ টাকা করে।
তবে বর্ধমানের অনেকেই দেরিতে বাজারে গিয়ে মিষ্টি পাননি। তাঁদেরই একজন, টাউনহলের বাসিন্দা রমেন হাজরা। তাঁর কথায়, “দোকানে দোকানে লাইন! কাউন্টারে পৌঁছোনোর আগেই বর্ধমানবাহার, বসন্তবাহার ফুরিয়ে গিয়েছিল। লাইনে দাঁড়িয়ে মিষ্টির জন্য অপেক্ষা একটা নতুন অভিজ্ঞতা।” বোরহাটের বাসিন্দা দেবাশিস নন্দীর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম শহরের ভাল দোকান থেকে ভাঁইফোটার মিষ্টি কিনবো। কিন্তু খালি হাতে ফিরতে হল। সামনের বার আগের দিন মিষ্টি কিনে রাখব। এ বার শুনেছি, নতুন ধরনের মিষ্টি তৈরি হয়েছিল।”
এক কর্মীর কথায়, “গ্রাহকেরা মিষ্টি কিনতে এসে লাইন দিতে না চাইলে পুলিশ ডেকে দোকানের ‘শো-কেস’ বাঁচাতে হোত।” প্রদীপবাবুর কথায়, “আমার বরাবরই নতুন মিষ্টি তৈরির দিকে ঝোঁক। একঘেয়ে মিষ্টিতে আর লোকজনের আকর্ষণ নেই। এ বার তাই হাজার হাজার পিস নতুন মিষ্টি অনায়াসে বিক্রি হয়েছে।”
বর্ধমানের বিসি রোডের মিষ্টি ব্যবসায়ী সৌমেন দাস বলেন, “বর্ধমানের বাইরের বেশ কিছু জনপদ থেকে নতুন ধরনের মিষ্টি কিনতে এবার প্রচুর লোক এসেছিলেন শহরে। এঁদের কথা ভেবে আমরা ম্যাঙ্গো-চকলেট সন্দেশ তৈরি করেছিলাম। ১০ থেকে ১৫ টাকা দিয়েও মানুষ আনন্দের সঙ্গে তা কিনেছেন।”
তবে নতুন মিষ্টির সঙ্গে পিছিয়ে থাকেনি সীতাভোগ-মিহিদানার মতো পুরনো মিষ্টান্নও। এই দু’টির আবিষ্কারক ভৈরব নাগের বংশধর অনিরুদ্ধ নাগ ও প্রসোনজিৎ দত্ত বলেন, “নতুন মিষ্টির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লড়ে গিয়েছে দুই ‘হেরিটেজ’ মিষ্টি। বিক্রিও কম হয়নি।” পাশাপাশি, বিহার থেকে গুড় আনিয়ে তৈরি করা জলভরা সন্দেশ বা ২০০ টাকা কেজি দরে কাশ্মিরী পোলাও বিক্রি করেছেন অনিরুদ্ধবাবু। তাঁর কথায়, “নতুন কিছু পেলে মানুষ সাগ্রহে কিনবেন তা।” |