|
|
|
|
সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন মহকুমাশাসকও |
তেরোয় মা, ধর্ষণ মূক ও বধির প্রতিবন্ধীকে |
নিলয় দাস • শিলবাড়িহাট (আলিপুরদুয়ার) |
হতদরিদ্র পরিবারের মূক ও বধির কিশোরীর বয়স মাত্র ১৩ বছর। ঠিক মতো সে চলাফেরাও করতে পারে না। মেয়েকে বাড়ির বারান্দায় চৌকিতে শুইয়ে রেখে বাবা-মা চলে যেতেন দিনমজুরি করতে। সেই সুযোগে কিশোরীকে ধর্ষণের ফলে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বাড়ির লোকজন প্রথমে ভেবেছিলেন কোনও রোগের কারণে পেট ফুলে চলেছে। কিন্তু, গর্ভাবস্থার বিষয়টি যখন টের পান তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। প্রসব বেদনা ওঠায় বাড়িতেই সুস্থ পুত্রসন্তান প্রসব করে কিশোরীটি। পঙ্গু মেয়ের এমন হাল কে করল তা নিয়ে চেঁচামেচি করে ক্ষোভে-হতাশায় পাগলপারা হয়ে ঘর ছেড়েছেন বাবা। এখন মেয়ে ও নাতিকে দেখাশোনা করতে কিশোরীর মাকেই দিনরাত ঘরে থাকতে হয়। কিশোরীর দাদু কুষ্ঠরোগী। তিনিই দিনমজুরি করে, চেয়েচিন্তে চার জনের সংসার চালাচ্ছেন। ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর পঞ্চায়েতের একটি গ্রামের ঘটনা। ওই কিশোরীর পা দু’টি অশক্ত। ঠিক মতো হাঁটতে পারে না। পরিজনেরা সকালে কাজে বেরিয়ে যেতেন। বিকেলে ফিরতেন। একাই বাড়ির বারান্দায় শুয়ে থাকত মেয়েটি। বাড়ির লোকের সন্দেহ, গত বছর জুন মাসে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। কিশোরীর মা বলেন, “মেয়ে এমনিতে অসুস্থ। পেট ফুলছিল দেখে ভেবেছিলাম এটাও একটা রোগ। কিন্তু, মাসছয়েক আগে মেয়ে পেট ব্যথায় ছটফট করলে পাড়ার সকলে ছুটে আসেন। মহিলারা জানান, ওর বাচ্চা হতে চলেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলে হয়।” রক্তাল্পতায় ভোগার কারণে অসুস্থ কিশোরীকে কোচবিহার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাটি চাউর হতে এলাকার সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য জীবন সরকার বলেন, “শিশু জন্মানোর খবর শুনে চমকে গিয়েছি। কে ওকে ধর্ষণ করেছে তা কিশোরীটি কোনও ভাবেই বোঝাতে পারছে না। আমার মনে হয় বিশেষজ্ঞদের এনে পুলিশি তদন্ত করলে অনেক কিছু স্পষ্ট হবে।” জীবনবাবু জানান, শিশু ও মাকে কোচবিহার হাসপাতালে কিছুদিন রাখা হয়। প্রসূতিকে ২ বোতল রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করানো হয়। তিনি বলেন, “মেয়েটি সুস্থ হয় ১২ কিলোগ্রাম চাল ও বাচ্চাটির জন্য গরম পোশাক ও কম্বল দিয়ে এসেছি।” এমন যখন ঘটছে তখন হঠাৎ ঘর ছাড়েন কিশোরীর বাবা। কিশোরীর মা বলেন, “স্বামী পাগল হয়ে চলে যাওয়ার পরে আমার বাইরে বেরোনো বন্ধ হয়ে গেল। বয়স্ক বাবাকে সংসারের হাল ধরতে হল। জানি না এ ভাবে কত দিন চলবে?” কিশোরীর দাদু জানান, তাঁরা সরকারি সাহায্য পাওয়ার জন্য নানা জায়গায় ঘুরেছেন। কিন্তু কোনও কাজের কাজ হয়নি বলে। তিনি বলেন, “ছেলেটাকে বড় করতে হবে। অনেকে কিনতে চাইছে। কিন্তু, মেয়ে হলে দিতাম। ছেলে বেচব না। ও বড় হয়ে রোজগার করবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পড়শি বলেন, “মেয়েটি কথা বলতে পারে না বলেই ধর্ষণের ব্যাপারটি প্রথমে বোঝা যায়নি। পুলিশের এটা তদন্ত করে দোষীকে বার করা উচিত।” রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় ওই ঘটনার কথা শুনে স্তম্ভিত। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “ওই মূক ও বধির কিশোরীর উপর চরম অত্যাচার করেছে যে বা যারা তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। এ ধরনের ঘটনা ই মেনে নেওয়া যায় না। জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের বিষয়টি দেখতে বলব। ওই পরিবারের পাশে কী ভাবে দাঁড়ানো যায়, সেই ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে।” আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় বলেন, “ওই পরিবারের লোকজনদের সাহায্য করা হবে। বিডিও ওই গ্রামে গিয়ে যাবতীয় ব্যবস্থা করবেন।” আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু জানান, মা-শিশুকে সরকারি হোমে পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|