|
|
|
|
অবৈধ নির্মাণে মদত নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে |
প্রশ্নের মুখে পুর-ভূমিকা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের ভবনটিকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের জন্য সংস্কার কাজের অনুমতি দিতে মেয়রের কাছে ‘নোট শিট’ পাঠিয়েছিলেন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা। এ ব্যাপারে কংগ্রেস কাউন্সিলর সবিতা অগ্রবালের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ওই ভবনের কোনও নকশাই নেই। কোনও বিল্ডিং প্ল্যান যেখানে নেই, সেই ভবনকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের আবেদমন কোন স্বার্থে গ্রাহ্য করে ‘নোট শিট’ দেওয়া হবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের অনেকেই। ‘নোট শিট’ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডেপুটি মেয়র নিজেও। তিনি বলেন, “আদর্শ মহাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছিলেন এখানে বাণিজ্যিক ভবন করে আয়ের টাকা থেকে তারা একটি মহিলা কলেজ তৈরি করবেন। সেই মতো বিষয়টি নিয়ম মেনে করার জন্য মেয়রের কাছে তা পাঠিয়েছিলাম।” কিন্তু, কেউ যদি বিনা নকশায় বাণিজ্যিক ভবন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য টাকা সংগ্রহ করতে চাইলে তা পুরবিধি অনুযায়ী দেওয়া যায় না। বিধি অনুসারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য থাকা কোনও ভবনকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপান্তর করতে গেলে নতুন করে নকশা তৈরি করা বাধ্যতামূলক। সে কথা জেনেও ডেপুটি মেয়র কেন নির্মাতা সংস্থার আবেদনপত্র বিবেচনার জন্য মেয়রের কাছে পাঠিয়েছেন তা নিয়ে পুর মহলে চলছে নানা আলোচনা। এ ব্যাপারে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ডেপুটি মেয়রের নোট শিট সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। কারণ, এটা পুরসভার আভ্যন্তরীণ ব্যাপার।” পুরসভারই একটি সূত্র জানিয়েছে, সবিতা দেবীই মেয়র এবং ডেপুটি মেয়রকে ওই ভবনটি যে ট্রাস্টের অধীনে তার লোকদের পুর কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে যান। মেয়র এবং ডেপুটি মেয়রকে বারবার অনুরোধ করেন ওই ভবনটি সংস্কারের অনুমতি দেওয়ার জন্য। সবিতাদেবীর বারবার অনুরোধ করায় ডেপুটি মেয়রও বিষটি দেখার জন্য মেয়রকে অনুরোধ করেন। তার পরেই ট্রাস্টের সদস্যদের আবেদন পত্রের ওপর ‘নোট’ লিখে পাঠান রঞ্জনবাবু। সবিতা দেবী অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে সুপারিশের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “তাঁরই সমাজের পরিচিত লোক হিসাবে তারা ভবন সংস্কারের অনুমতির জন্য মেয়র, ডেপুটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। সেই মতো মেয়রের সঙ্গে তাদের দেখা করিয়ে দিয়েছি। সে সময় ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নান্টু পালও ছিলেন। পরে ডেপুটি মেয়রের সঙ্গেও তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কাউকেই ওই ভবনের সংস্কারের জন্য অনুরোধ বা সুপারিশ করিনি।” নান্টু পাল বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এই বিষয়ে কংগ্রেসের অন্দরেও বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সম্প্রতি বিতর্কিত বেআইনি নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার জন্য মেয়র সমালোচনার মুখে পড়ায় সম্প্রতি সরব হন উদয় দুবে, সুবীন ভৌমিক, কুন্তল গোস্বামীর মতো জেলা তথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। উদয়বাবু জানিয়েছিলেন, কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের নেতৃত্বের একাংশ এর সঙ্গে যুক্ত। তাঁরাই মেয়রকে সুপারিশ করেছিলেন। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরেই ক্ষোভ দেখা দেয়। কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটক বলেন, “জোটের কাউন্সিলরদের একাংশ ওই ভবনের নির্মাণ কাজের সুপারিশ করে থাকার বিষয়টি জেনেও উদয়বাবুর মতো প্রবীণ নেতা আপত্তি করেননি কেন? মেয়রকে অনুমতিপত্র দিতে নিষেধ করেননি কেন? অনিয়ম যাতে না হয় সে ক্ষেত্রে তাঁরা সতর্ক করতে পারতেন।” ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর কাজল চন্দ জানান, জোটের কিছু কাউন্সিলর মেয়রকে সুপারিশ করেছিলেন বলে উদয়বাবু জানিয়েছেন। তবে কারা এর সঙ্গে যুক্ত তা পরিষ্কার করে জানানো দরকার। কাজলবাবুর বক্তব্য, “অবৈধ নির্মাণে কে বা কারা মদত দিচ্ছে তা দলের শীর্ষ নেতারা স্পষ্ট করে দিন। না হলে বাসিন্দারা আমাদের সকলকেই সন্দেহ করবেন। এমনকী, পাড়ায়-পাড়ায় বেআইনি নির্মাণের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্রের পাহাড় জমে উঠবে।” |
|
|
|
|
|