খুঁড়িয়ে চলছে অধিকাংশ জেলার প্রাথমিক স্কুল
চালু হয়েছে শিক্ষার অধিকার আইন। স্কুলগুলোর উন্নয়নেও নিত্য নেওয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। কিন্তু তা কি যথাযথ ভাবে রূপায়িত হচ্ছে? তাহলে কেন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামো রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরে? সম্প্রতি বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (বিপিটিএ) রাজ্য সম্মেলন হয়ে গেল মেদিনীপুর শহরে। সেখানেই শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এল প্রাথমিক স্কুলগুলির দুরবস্থার কথা। কোথাও শ্রেণিকক্ষের অভাব, নেই সীমানা প্রাচীর, কোথাও আবার প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই। বিপিটিএ-র রাজ্য সম্পাদক কার্তিক সাহার কথায়, “অনেক স্কুলেই ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। এক-দু’জন শিক্ষক দিয়ে রাজ্যে প্রায় ২৫ হাজার স্কুল চলছে। তার উপর মিড ডে মিল-সহ হাজারটা কাজের ঝক্কি সামলাতে হয়। ক্ষতি হয় পড়াশোনার।”

শিক্ষক বাড়ন্ত
পুরুলিয়ার আড়সার বেলডি প্রাথমিক স্কুলে পড়ান অভিযান ভট্টাচার্য। এই স্কুলে ২ জন শিক্ষক। ছাত্রছাত্রী ২৩০ জন। গড়ে ১৮০ জন স্কুলে আসে। অভিযানবাবু বলেন, “দু’জন মিলে স্কুল চালাতে খুব সমস্যা হয়। এক জন ছুটি নিলে সমস্যা আরও বাড়ে।” পূর্ব মেদিনীপুরের ভোগপুরমত্তম প্রাথমিক স্কুলের অবস্থা একটু ভদ্রস্থ। ২৪৩ জন পড়ুয়ার এই স্কুলে আগে তিন জন শিক্ষক ছিলেন। সম্প্রতি জেলায় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এই স্কুল পেয়েছে তিন জন শিক্ষক। ফলে, কিছুটা সুরাহা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার জোতহাড়ো জ্ঞানদাময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ জন শিক্ষক রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫০। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা ঠিকই রয়েছে। তবে সমস্যায় অন্য জায়গায়। কেমন? স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর মাইতি এখন ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে যুক্ত। তিনি বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)। এই স্কুলে আবার কোনও বুথ নেই। বুথ রয়েছে হরিণাডাঙি গ্রামের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে। ফলে তালিকা সংশোধনের কাজের জন্য তাঁকে এখানেই বসতে হয়। সহ-শিক্ষক স্কুল চালান। দীপঙ্করবাবু বলেন, “সমস্যার কথা বিডিও অফিসে জানিয়েছি। তবে পরিস্থিতি একই রয়েছে।” বীরভূমের বোলপুরের শীতলাগ্রাম প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক লালন দাস বলছিলেন, “এ ভাবে চলতে থাকলে পঠনপাঠনে সমস্যা হবেই। প্রতি শ্রেণি পিছু অন্তত ১ জন শিক্ষক থাকুক।” এই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৯৬। শিক্ষক রয়েছেন ৩ জন।

নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ
পুরুলিয়ার আড়সার বেলডি প্রাথমিক স্কুলে ৪টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। মোট পড়ুয়া ২৩০ জন। গাদাগাদি করেই বসতে হয়। হাওড়ার মালিপুর প্রাথমিক স্কুলেও এক সমস্যা। এখানে ১১৭ জন ছাত্রছাত্রী। শিক্ষক রয়েছেন ৩ জন। স্কুলের শিক্ষক জয়ন্ত খাটুয়া বলেন, “একসঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস করতে হয়। এ ছাড়া উপায়ও নেই।” বীরভূমের বোলপুরের শীতলাগ্রাম প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক লালন দাসের কথায়, “প্রত্যেক শ্রেণির জন্য আলাদা শ্রেণিকক্ষ থাকা উচিত।” কিন্তু সে কথা শুনছে কে? তাই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের গাদাগাদি করে কোনও মতে চলছে রাজ্যের অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুল।

নেই জল-বিদ্যুৎ-পাঠাগারও
সীমানা প্রাচীর, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, পাঠাগার এ সব কিছুই নেই অধিকাংশ স্কুলে। বাঁকুড়ার খাতড়ার হাতিরামপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা মল্লিকা সরেনের কথায়, “অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলে ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। তার উপর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে তো ছাত্রছাত্রীরাও আর পড়াশোনা করতে চাইবে না।” বিপিটিএ-র রাজ্য সম্পাদকের প্রশ্ন, “প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষাকর্মী নেই। পিওন-দারোয়ান-কেরানি-মিড ডে মিল সব সামলে এক-দু’জন শিক্ষক ৪টি ক্লাসের ছেলেমেয়েদের পড়ালে কী আর লেখাপড়া হবে? শিক্ষার অধিকার আইন মেনে স্কুলে উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ, শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ-সহ পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.