খাবার ও মাদকের জোগাড়ে রাস্তায় ভিক্ষা করছে শিশুরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দমদম জংশন স্টেশন চত্বর-ই হোক বা ধর্মতলার বাসস্ট্যান্ড, চলতে-ফিরতে এক দল শিশুর দেখা মিলবেই। পথচারীদের কাছে কখনও খাবার, কখনও বা টাকার আকুতি জানায় তারা। এ ভাবেই বছরভর রাস্তায় ঘুরে ঘুরে নিজেদের খাবার জোগাড় করে এই শিশু ভিক্ষুকরা। শুধু তাই নয়, ভিক্ষায় টাকায় মাদক কেনার দৃশ্যটাও অমিল নয়।
শিশু ভিক্ষুকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বক্তব্য, এই ধরনের শিশুদের একটি বড় অংশ পথশিশু। ছোটবেলা থেকেই রাস্তায় তাদের উপার্জন করতে নামিয়ে দেওয়া হয়। একরত্তি শিশুকেও তুলে দেওয়া হয় ভিক্ষুকদের হাতে। যাকে দেখিয়ে রাস্তায় পয়সা চায় অন্যেরা। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, ওই শিশুটির বিনিময়ে রোজ টাকা মেলে তার বাবা-মায়ের। পুলিশ সূত্রের খবর, পথশিশু বা রাস্তায় শিশু ভিক্ষুকদের অনেকেই মাদকাসক্ত। ফলে শুধু পেটের খাবার নয়, নেশার জিনিস জোগাড় করতেও তারা এই পথে নেমে পড়ছে। ভিক্ষা করার পাশাপাশি অনেক সময় ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে তারা। |
শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানোর বিরুদ্ধে পুলিশ কি কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে? পুলিশকর্তারা বলছেন, এ ধরনের আইন থাকলেও তা চট করে প্রয়োগ করা যায় না। ওই শিশুদের মূলস্রোতে ফেরানোর বিষয়টিও ভাবতে হয়। অনেক সময়ই এ ধরনের শিশুদের ধরার পরে শিশুকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (সংগঠন) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিকল্প জীবিকা এবং থাকার জায়গা না থাকাটা অন্যতম প্রধান একটি কারণ। বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এই আইনটি প্রয়োগ করার আগে সব দিক ভাবনা চিন্তা করে প্রশাসনকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
পথশিশুদের মূলস্রোতে ফেরানোর জন্য প্রকল্প রয়েছে কলকাতা পুলিশেরও। অতিরিক্ত কমিশনার (৩) দেবাশিস রায় জানিয়েছেন, “নবদিশা নামে ওই প্রকল্পে পথশিশুদের প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা দেওয়া হয়। তার পরে সাধারণ স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থাও করে কলকাতা পুলিশ।”
পুলিশকর্তারা মনে করছেন, এই ধরনের প্রকল্প ছাড়া আইনের প্রয়োগ করে পথশিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি আটকানো সম্ভব নয়। দমদম স্টেশন চত্বরে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করেন কান্তা চক্রবর্তী। তিনি মনে করেন, এই ধরনের শিশুদের মূলস্রোতে ফেরাতে গেলে শুধু শিক্ষা নয়, তাদের যথাযথ পুষ্টিও দরকার। একই সঙ্গে নাচ, গান বা আঁকার মতো বিষয়ও তাদের শেখানো দরকার বলে কান্তাদেবী মনে করেন। সমাজকর্মী মৃণাল বিশ্বাস মনে করেন, পথশিশুদের মূলস্রোতে ফেরাতে হলে তাদের আলাদা করে দেখলে চলবে না। আর পাঁচ জনের মতোই ব্যবহার করতে হবে। |