কথায় কথায় গুলি কেন, প্রশ্ন বিরোধীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পুলিশের ভূমিকা কেন এত অসহিষ্ণু, দুবরাজপুরের পরপরই তেহট্টে গুলিচালনার ঘটনার প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন তুলেই রাজ্য সরকারকে বিঁধছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেসের সরাসরি অভিযোগ, পুলিশ ‘ট্রিগার-হ্যাপি’ হয়ে উঠে কথায় কথায় গুলি চালাচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের বক্তব্য, প্রশাসনের তরফে অনমনীয় মনোভাব নিয়ে তেহট্টের মতো সমস্যার সমাধান করা যায় না। পুলিশের আচরণের প্রতিবাদ এবং বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাতে আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের কাছে যাচ্ছে বিজেপি।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বুধবার বলেছেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি ওখানে ছিল না। এই রকম সব সমস্যার সমাধান গুলি চালিয়ে করা যায় না। অতীতে এই ধরনের সমস্যায় আলাপ-আলোচনায় সমাধানসূত্র বার করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু এখানে যে অনমনীয় মনোভাব পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয়েছে, সেটা সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে না।” বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধিদল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের নেতৃত্বে তেহট্টে গিয়েও পুলিশি আপত্তিতে ঢুকতে পারেনি বলে অভিযোগ। একই সঙ্গে সূর্যবাবু বলেন, “এখন দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের সময় নয়। আমাদের সকলকে দেখতে হবে যাতে, ওখানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। সৌহার্দ্য বজায় থাকে। সহমতের ভিত্তিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, যথাযথ হুঁশিয়ারি না-দিয়েই পুলিশ এ দিন তেহট্টে গুলি চালিয়েছে।
সিপিএমের চেয়েও পুলিশের ভূমিকার বিরুদ্ধে আরও চড়া সুর কংগ্রেসের। প্রদেশ কংগ্রেস প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “পুলিশ হাতে সময় থাকতে আলোচনায় বসলে এই ঘটনা ঘটত না। পুলিশ চটজলদি সমস্যা মেটাতে গিয়ে আরও জটিল করে ফেলল। কথায় কথায় এই রকম গুলি চালালে সামাজিক উষ্মা বাড়বে। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত, পুলিশ কেন এত ট্রিগার-হ্যাপি হয়ে উঠছে, তার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করানো। নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার।” পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে মৌসম বেনজির নূরের নেতৃত্বে ২১ নভেম্বর ধর্মতলায় আইন অমান্য করবে যুব কংগ্রেস।
মমতার দেড় বছরের জমানায় রাজ্যে পাঁচটি গুলিচালনার ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, “বিগত সরকারের মতো পরিবর্তনের মুখ্যমন্ত্রীর সরকারও একই রকম ট্রিগার-হ্যাপি! তেহট্টের বিক্ষোভে যে ভাবে গুলি চালানো হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে পুলিশের উপরে পুলিশমন্ত্রী বা প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই!” অভিযুক্ত এসডিপিও-কে বরখাস্ত এবং নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে বিজেপি। তাদের একটি প্রতিনিধিদল আজ, বৃহস্পতিবার তেহট্ট যাচ্ছে। পুলিশের মনোবল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলে দুবরাজপুরের ঘটনায় বিজেপি-র সিবিআই তদন্তের দাবি নস্যাৎ করেছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন।
রাহুলবাবুরা আজ ফের রাজ্যপালের কাছে গিয়ে বলতে চান, পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ না-করার ফলে মানুষ মারা যাচ্ছে। ঘটনার নিন্দা করে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য রক্ষার আবেদন জানান ইউডিএফ নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে এ দিন তেহট্টে বন্ধ ডেকেছিল সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন। |