বর্ধিত বাস-ভাড়া নিয়ে আমযাত্রীর যাবতীয় বিভ্রান্তি, এবং ভাড়ার হারে অসঙ্গতি থাকলে তা অবিলম্বে দূর করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার পরিবহণ মন্ত্রিগোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে এ ব্যাপারে যত শীঘ্র সম্ভব ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। বাস-মালিকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, ভাড়া মোটেই বেশি কিছু বাড়েনি, মন্দের ভাল বলা যায়। ভাড়া কমে গেলে তাঁরা ফের আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হবেন।
রাজ্য সরকার সম্প্রতি বাসের ভাড়াবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দূরত্ব পুনর্বিন্যাসও করেছিল। কিন্তু তা নিয়ে যাত্রীমহলে যথেষ্ট বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ পেয়ে মমতা বিরক্ত। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, ভাড়া বেড়েছে এক টাকা করে। কিন্তু মহাকরণ-সূত্রের দাবি, বিভিন্ন মহলে খোঁজ-খবর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পেরেছেন, দূরত্ব ‘পুনর্বিন্যাসের’ সুবাদে অনেক ক্ষেত্রে তা ৩-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। ফলে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বার্তা এসেছে।
বিষয়টি নিয়ে মমতা এ দিন কালীঘাটের বাড়িতে পার্থবাবু ও মদনবাবুর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, বাসের ভাড়া ও দূরত্ব আবার পুনর্বিন্যাস করে অবিলম্বে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি জারি করতে দুই মন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য: বাস-ভাড়া নিয়ে কোথাও যাতে কোনও অসঙ্গতি বা বিভ্রান্তি না-থাকে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের ফলে সম্প্রতি বর্ধিত ভাড়া অনেক ক্ষেত্রেই কমে যেতে পারে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
বাস-মালিকেরা আভাস দিয়ে রেখেছেন, বেড়ে যাওয়া ভাড়া আবার কমে গেলে তাঁরা মানবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর ‘নির্দেশের’ পরে এ দিনই মহাকরণে পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বাস-মালিকদের দু’টি সংগঠন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস’ ও ‘বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট’-এর নেতারা। বৈঠকের বিষয় নিয়ে কোনও পক্ষ বিশেষ মুখ খুলতে চাননি। মদনবাবুর কথায়, “একেবারেই সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ। ভাড়া নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।” মন্ত্রী অবশ্য একই সঙ্গে বলেন, “নতুন ভাড়া নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। আমরা খবর নিচ্ছি।”
এ দিনের বৈঠকে ভাড়া প্রসঙ্গ আলোচনার কথা অস্বীকার করলেও বাস-মালিকেরা কিন্তু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার একতরফা ভাড়া কমানোর চেষ্টা করলে তাঁরা বিরোধিতার রাস্তায় যাবেন। জয়েন্ট কাউন্সিলের নেতা সাধন দাস বলেন, “এত দিন ধরে মন্ত্রিগোষ্ঠী, উপদেষ্টা বসিয়ে বহু ভাবনা-চিন্তার পরে ভাড়া বাড়ল। তাতে পুরোপুরি সুরাহা হয়েছে, এমন নয়। তবু মেনে নিয়েছি।” যাত্রীদের দিক থেকেও আপত্তি বা বিক্ষোভের খবর নেই বলে দাবি করে সাধনবাবু বলেন, “এখন ভাড়া কমানোর কথা মানব কেন! আমাদের তো সরকার ভর্তুকি দেয় না!”
সাধনবাবুর আশা, ভাড়া ফের পুনর্বিন্যাসের আগে সরকার তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতা দীপক সরকার বলেন, “এ ভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত বদলাতে থাকলে বাস শিল্পটাই তো উঠে যাবে! তাতে আখেরে ক্ষতি হবে জনগণেরই। সেটা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।” |