লালগড়ে ভবতারিণী পুজো |
নিজস্ব সংবাদদাতা • লালগড় |
ইতিহাসের ছায়া মোড়া লালগড়ের ভবতারিণী পুজো হল সাড়ম্বরে। মঙ্গলবার রাতে এই পুজো দেখতে শুধু আশপাশের এলাকা নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও বহু মানুষ এসেছিলেন।
দুই শতাব্দী প্রাচীন পঞ্চমুণ্ডি আসনের উপরে দেবী ভবতারিণীর মন্দির। জনশ্রুতি, প্রায় দু’শো বছর আগে লালগড়ের ওই পঞ্চমুণ্ডি আসনে ভৈরবীরূপা কালীর আরাধনা প্রথম শুরু করেছিলেন লালগড়ের তৎকালীন রাজা গঙ্গানারায়ণ সাহসরায়। স্থানীয় রাজার বাঁধ দিঘির পাড়ে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করে ব্রহ্মজ্ঞানী হন তিনি। এরপর সেখানে আমৃত্যু কালীপুজো করে গিয়েছিলেন গঙ্গানারায়ণ। তাঁর মৃত্যুর পর অবশ্য পঞ্চমুণ্ডির ওই আসনে কালীপুজো বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, পরবর্তী রাজারা ছিলেন কৃষ্ণের উপাসক। গঙ্গানারায়ণের রোপণ করা একটি প্রাচীন হরিতকি গাছ এখনও রাজার বাঁধ দিঘির পাড়ে রয়েছে। |
|
ভবতারিনী প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র। |
গঙ্গানারায়ণের মৃত্যুর দেড়শো বছর পর ১৯৮২ সালে স্থানীয় চিকিৎসক উমাশঙ্কর রায়ের উদ্যোগে ফের ওই পঞ্চমুণ্ডি আসনে দেবী ভরতারিণীর নিত্যপুজো শুরু হয়। লালগড় রাজ পরিবারের উত্তরসূরিদের দূরসম্পর্কের আত্মীয় উমাশঙ্করবাবু নিজেই ভবতারিণী মন্দিরের সেবাইত ও পূজক। ১৯৮২ সালে মাটির মন্দিরে অধিষ্ঠিত দেবী ভবতারিণীর প্রতিমাটিও ছিল মাটির। বছর ছয়েক আগে ২০০৬ সালে (১৪১৩ বঙ্গাব্দের ৪ চৈত্র) স্থায়ী মন্দির তৈরি করে সিমেন্টের দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে সিমেন্টের প্রতিমাটি তৈরি করেছেন আনন্দপুরের শিল্পী সমর রায়।
উমাশঙ্করবাবু জানালেন, প্রতি অমাবস্যায় দেবীকে খিচুড়ি ও পঞ্চব্যঞ্জন নিবেদন করা হয়। আশির দশকে প্রথম দু’বছর ছাগবলি হলেও পরে বলি বন্ধ হয়ে যায়। চৈত্র অমাবস্যায় প্রতিষ্ঠা বাষির্কীর রাতে ও কার্তিক মাসের অমাবস্যায় দীপান্বিতা কালীপুজোয় ষোড়শোপচারে দেবীর বিশেষ পুজো হয়। দীপান্বিতা কালীপুজোর রাতে ঘটে জল ভরায় সময় রাজার বাঁধ দিঘিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় প্রদীপবিশেষ পুজো নেওয়ার জন্য দেবীকে আহ্বান করতে। |
|