বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আমদাবাদের রাস্তায় পড়লেই যেটা সবার আগে টের পাবেন, সেটা হাওয়ার চামড়ায় টান ধরানো শুকনো ভাবটা। হোটেলে ঢোকার মুহূর্ত থেকে তার সঙ্গে মিশে যাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। লবিতে সমর্থকদের ভিড়, সর্বত্র আইসিসি কর্তাদের চেনা মুখ, সাংবাদিকদের ব্যস্ততা। মোতেরায় প্রথম বল পড়ার অপেক্ষায় সবাই।
হোটেলের গেট দিয়ে ঢোকার সময় দেখা হয়ে গেল ম্যাচ রেফারি রোশন মহানামার সঙ্গে। খবর পেলাম মোতেরার পিচে গত তিন দিন কোনও জল পড়েনি। শুনে আমি বা রোশন কেউ-ই অবশ্য অবাক হইনি। ঘরের মাঠে খেলতে নেমে ভারত তো ঘরের মাঠের পুরো সুবিধেটা নেবেই। এখানে বেশ গরম। তায় টেস্ট যতক্ষণে চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে গড়াবে, উইকেটে আট দিন জল পড়বে না। ফলে মোতেরায় এ বার বল ঘুরবে বলেই আমার ধারণা। শুধু ঘুরবেই না, মাচ যত গড়াবে উইকেট তত বেশি ঘূর্ণি হয়ে উঠলেও অবাক হব না। সাম্প্রতিক অতীতে এখানে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দু’বার হেরেছি আর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে কোনও মতে ড্র করেছি। প্রতিবারই আসল ধাক্কাটা লেগেছিল প্রথম দিন নতুন বল খেলতে গিয়ে। তাই এ বার শুকনো পিচ নিশ্চিত করার চেষ্টাটা মন্দ নয়। আর আবহাওয়া যে রকম, তাতে সাধারণত এই পিচে প্রথম দিন যেটুকু আর্দ্রতা থাকে, সেটাও শুকিয়ে যাবে।
দেখেশুনে মনে হচ্ছে দু’পক্ষই দু’জন করে স্পিনার খেলাবে। এই প্রথম এ দেশে খেলতে আসা কোনও দল স্পিন শক্তিতে ভারতের থেকে কম যায় না! ভারত অশ্বিন আর ওঝাকে নিয়ে নামতে চাইবে। আমি অবাকই হব যদি হরভজন সুযোগ পায়। ধোনি দুই পেসার আর দুই স্পিনার খেলানো পছন্দ করে। দলে যুবরাজ আছে। ফলে ধোনি পছন্দের ছক বদলাবে বলে মনে হয় না। অন্য দিকে সোয়ানের পাশে দ্বিতীয় স্পিনার সমিত পটেল না মন্টি পানেসর, ইংল্যান্ডকে সেই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে। তবে বাজি ফেলে বলছি, এই পিচে মন্টিকে না খেলানো মস্ত ভুল।
কাল টসে যে-ই জিতুক, চোখ বন্ধ করে ব্যাটিং নেবে। তবে ইংল্যান্ডের কাছে আগে ব্যাট করাটা সম্ভবত ভারতের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্পিনটা ভাল খেলে বলেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার চিন্তায় কাতর হয়ে পড়বে না। তা ছাড়া ইদানীং ভারত চতুর্থ ইনিংসে দারুণ রান তাড়া করছে। তবে সবার নজর থাকবে সচিনের উপরে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যুবরাজের জন্যও এই সিরিজটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করার আরও একটা সুযোগ পাচ্ছে যুবরাজ। সব থেকে বড় কথা সুযোগটা এসেছে ঘরের মাঠে। যুবরাজের খেলোয়াড় জীবনের আরও কমকরে তিন চার বছর বাকি রয়েছে। ও তাই দেখিয়ে দিতে চাইবে যে টেস্টেও সমান সফল হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
ইংল্যান্ডের সাফল্য নির্ভর করবে ওরা কেমন ব্যাট করে তার উপর। বোর্ডে বড় রান তুলতে পারলে, লড়াই করার স্পিন শক্তি ওদের আছে। কিন্তু ব্যাটিংটাই আসল চ্যালেঞ্জ। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোয় ওদের ব্যাটসম্যানরা ভাল করেছে ঠিকই কিন্তু টেস্ট ম্যাচ একদম অন্য ব্যাপার। আর ভুললে চলবে না, নিজেদের মাঠে ভারতই কিন্তু ফেভারিট। |