ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে আনন্দবাজারের জন্য বিশেষ
লেখা
লিখছেন জাতীয় দল থেকে সদ্য অবসর নেওয়া
ভিভিএস লক্ষ্মণ |
খেলার স্ট্র্যাটেজি কষার সময়-টময় এক রকম শেষ। ভারত-ইংল্যান্ড দু’দলের কাছেই এখন সময় এসে গিয়েছে, সেই পরিকল্পনাগুলোকে মাঠে প্রয়োগ করার। যেটা সব সময়ই বেশ উত্তেজক ব্যাপার।
কিন্তু আজকাল আম্তর্জাতিক দলগুলোর জন্য এত বেশি পরিমাণ তথ্য আর পরিসংখ্যান হাজির থাকে যে, ‘গোপন’ এবং ‘রহস্য’ বলে আর প্রায় কিছুই পড়ে থাকে না। হেড কোচ আর অধিনায়ককে সাহায্য করার জন্য থাকে বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং ও বোলিং কোচ। সঙ্গে ভিডিও বিশ্লেষক। সব মিলে টিমগুলোর আদর্শ প্রস্তুতির কোনও খামতিই থাকে না।
এই অবস্থায় আসল চ্যালেঞ্জটা লুকিয়ে রয়েছে, ড্রেসিংরুমে নেওয়া পরিকল্পনাগুলোকে মাঠের মধ্যিখানে কাজে পরিণত করার মধ্যে।
টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ভারতীয় দলকে মুম্বইয়ে তিন দিনের ক্যাম্পে জমায়েত হতে দেখে ভাল লাগল। যখন দলের প্রায় প্রত্যেকেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছে, সেই সময় টেস্ট সিরিজের আগে দল হিসেবে সবার জড়ো হওয়াটা সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ। ছন্দে আসার জন্য যেমন, তেমনই সাফল্য পাওয়া আর সেই সাফল্যকে ধরে রাখার রসায়নের আলো জ্বালার জন্যও।
যে কোনও ক্রিকেট ম্যাচে গোড়াতেই খেলার রাশটা হাতে তুলে নেওয়াটা ভীষণ দরকার। আরও বেশি করে দরকার সিরিজের প্রথম ম্যাচে। কারণ সেটা হাই-প্রোফাইল ম্যাচ। যেমন বৃহস্পতিবারের ম্যাচ। আমার সময় ড্রেসিংরুমে আমরা ভাল শুরু করা নিয়ে, সেটা ব্যাটিং বা বোলিং যেটাই হোক, প্রচুর আলোচনা করতাম। বহু ম্যাচে আমরা চেষ্টা করতাম প্রথম সেশনটা প্রতিপক্ষের চেয়ে ভাল করার। কারণ সেটাই বাকি দিনের খেলার সুরটা তৈরি করে দেয়। আর প্রথম দিনের খেলাটা টেস্টের বাকি দিনগুলোর খেলার সুর বেঁধে দেয়।
এবং আমি মনে করি, এ ব্যাপারে ভারতীয় দল বিরাট ভাগ্যবান যে, আমাদের ব্যাটিং ওপেন করবে বীরু এবং গোতি। আর নতুন বলে শুরু করবে জাক এবং উমেশ। বীরু আর গোতি ভারতের সেরা ওপেনিং জুটি। যে মতবাদ ওদের নজর কাড়া রান-সংখ্যাগুলো দ্বারা সমর্থন পাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটের সেরা ওপেনিং জুটিগুলোর মধ্যেও ওরা পড়ে। মাঠের বাইরেও ওরা দু’জন খুব ভাল বন্ধু। যে ব্যাপারটা বাইশ গজে ওদের ব্যাটিংয়ের সময় বোঝা যায়। দু’জনেরই খারাপ এবং ভাল ডেলিভারিকেও মাঠের বাইরে পাঠানোর ক্ষমতা আছে। একই রকম গুরুত্বপূর্ণ ওদের দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়াটা। যার অর্থ, বোলাররা যখন রীতিমতো আঁটোসাঁটো থাকে, তখনও ওদের জুটি ছোট-ছোট পুশে একটা-দুটো খুচরো রান তোলার কাজটা নিখুঁত ভাবে করতে পারে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত বলতে পারি, ফিল্ডিং দলের কাছে এর চেয়ে হতাশাজনক আর কিছু হয় না, যখন বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করা সত্ত্বেও দেখে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের খুচরো রান নেওয়া থেকে আটকানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে যখন দুই ব্যাটসম্যানের এক জন ডানহাতি আর অন্য জন বাঁহাতি হয়, তখন সেই জুটি বোলারদের ছন্দ নষ্টের দিকে নিয়ে যায়। সারাক্ষণ চাপ সৃষ্টি করে ফিল্ডারদের পজিশন বদলানোর ওপরে। সব মিলিয়ে ফিল্ডিং দল ম্যাচে যে রাশটা নেওয়ার চেষ্টা চালায় সেটা মাঠ থেকে এক রকম উড়ে যায়।
বীরু আর গোতি দু’উইকেটের মাঝে দৌড়নোর পুরনো ওস্তাদ। বীরু যখন নিজের পুরো ফর্মে ব্যাট করে, তার চেয়ে বেশি উত্তেজক দৃশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব কমই আছে। যে কোনও বোলিং আক্রমণকে নিয়ে ও ছেলেখেলা করতে পারে। বিপক্ষ স্রেফ হতোদ্যম হয়ে পড়ে। বোলাররা প্রচণ্ড চাপে পড়ে যায়। অধিনায়ক খেই হারিয়ে ফেলে। একইসঙ্গে আমাদের ক্যাম্পের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। মিডলঅর্ডারকে সুযোগ করে দেয়, দুর্দান্ত ভিতের ওপর ইমারত গড়ার। আমি নিশ্চিত, পুরো ফর্মের বীরুকে সামলানোর ভয়ে থাকবে ইংল্যান্ড।
বীরুর মতোই জাক-ও নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক জন বড় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ও এখন প্রায় এক জন কমপ্লিট বোলার। যে নিজের শরীর আর বোলিং সম্পর্কে সব কিছু জানে। নতুন বলে ও ভয়ঙ্কর। দু’দিকেই মুভ করায়। এবং আমি নিশ্চিত, আমদাবাদে ওর আর উমেশের জন্য রিভার্স সুইং থাকবে। আমার বেশ মনে আছে, অতীতে ভারতের উইকেটে জাহির কী অনবদ্য রিভার্স সুইং করেছে। ওর অভিজ্ঞতা আর উমেশের গতি মিলে একটা কার্যকর পেস বোলিং কম্বিনেশন তৈরি করবে। যে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে অশ্বিন এবং ওঝা দৌড় শুরু করতে পারে এমন একটা উইকেটে, যে পিচের ম্যাচ যত গড়াবে ততই স্পিনারদের সাহায্য করা উচিত।
ইংল্যান্ডকে হালকা ভাবে নেবে না ভারত। তবে এমএস-এর হাতে যা গোলাবারুদ আছে তাতে আমি অবাক হব না, যদি ভারত প্রথম দিন থেকেই অ্যালিস্টার কুকের ছেলেদের বিশাল চাপে ফেলে দেয়! |