ফের শব্দদৈত্যের দাপট দুই জেলাতেই |
প্রতিবারের মতো এ বারেও দীপাবলিতে শব্দ-বারুদে ভেসেছে বহরমপুরের রাতের আকাশ!
যদিও পুজোর আগে শব্দবাজি আটক করা থেকে বিভিন্ন জুয়ার ঠেকে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি ছিল জেলা পুলিশ সুপারের সতর্কবাণী। সেই সঙ্গে ছিল শব্দবাজি ফাটানো থেকে দূরত্ব বজায় রাখার আবেদন নিয়ে পুরসভার তরফে মাইকে প্রচার। তা সত্ত্বেও শব্দ-দানবের হাত থেকে রেহাই পাননি বহরমপুরের বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, পুজোর রাতে পুলিশ কিছুটা তৎপর হলে বাজির শব্দ থেকে রেহাই পাওয়া যেত। বহরমপুরের প্রবীণ নাগরিক সাবিত্রীপ্রসাদ গুপ্ত বলেন, “সাধারণ মানুষের চেতনার অভাব রয়েছে। সরকারি স্তরে সচেতনতা বাড়াতে আরও বেশি করে প্রচার চালানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রশাসনিক স্তরে কড়া পদক্ষেপও করতে হবে। পুলিশ ও প্রশাসন কড়া হাতে মোকাবিলা না করার ফলেই কালীপুজোর রাতে শব্দ-তাণ্ডব হয়েছে। এতে গৃহস্থ মানুষও আতঙ্কিত বোধ করেন। রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না।”
বহরমপুর জেএন অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক সুহাসরঞ্জন চট্টরাজ বলেন, “সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে বাজি ফেটেছে। সমাজের কোনও ক্ষেত্রে যেমন নিয়ন্ত্রণ নেই, বাজি ফাটানোর ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ নেই। কোনও কিছু বলার নেই। বাজির আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে ঘরবন্দি হয়ে বসে ছিলাম।” গার্লস স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা আলপনা রায়চৌধুরী বলেন, “বহরমপুর লাগোয়া সুতির মাঠ এলাকাতেও গভীর রাত পর্যন্ত ব্যাপক বাজি ফেটেছে। শব্দদানবের আওয়াজে ভয়ে ঘরের মধ্যে দাপাদাপি করেছে আমার ৫টি পোষ্য। আতঙ্কিত হয়ে তারা কোথায় মুখ লুকোবে, তা খুঁজে বেড়িয়েছে। আসলে সতর্কতা ও নির্দেশ জারি করেই পুলিশ ও প্রশাসন দায় সেরেছে। তারা যদি কড়া হাতে মোকাবিলা করত, তাহলে এই পরিস্থিতি হত না।”
এ বার কালীপুজোর রাতে কান্দিতে অবশ্য শব্দবাজি অনেকটাই কম ফেটেছে বলে দাবি পুলিশের। অন্য বছর অভিযোগ হলেও এ বার পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ হয়নি। অন্য বছর কালীপুজোর দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতভর শব্দবাজি ফাটে। পুলিশও ব্যস্ত হয়ে পড়ত সেটা বন্ধ করতে। কিন্তু এ বার সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শব্দবাজি ফাটলেও সেটা পরিমাণে খুব কম। তবে আতসবাজি পুড়েছে অনেক।
কান্দি শহর ছাড়াও বড়ঞা, ভরতপুর, সালার, খড়গ্রাম থানা এলাকায় শব্দবাজির চল ছিল খুবই কম। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বি কে দত্ত বলেন, “বহরমপুরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও অফিস নেই ঠিকই। কিন্তু অফিস থাকলেই বা কী হত! শব্দবাজি যারা ফাটাচ্ছে তাদের গ্রেফতার করার ক্ষমতা তো দূষণ পর্ষদের কর্মীদের নেই। গ্রেফতার করার কথা পুলিশের।” শব্দবাজি ফাটানোর দায়ে ‘স্পট ফাইন’ ১০০-৫০০ টাকা হতে পারে। এ ছাড়া শাস্তি হিসেবে পুলিশ গ্রেফতার করে মামলা দায়ের করার পরে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা ৫ বছরের জন্য জেল হতে পারে বলে চেয়ারম্যান জানান। |