জামবনির জঙ্গলে জখম রেসিডেন্ট হাতির সন্ধান |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
জামবনির গভীর জঙ্গলে একটি জখম হাতির সন্ধান পেল বন দফতর। গত সোমবার ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের অন্তর্গত জামবনি ব্লকের গিধনি রেঞ্জের জঙ্গলে ওই হাতিটিকে দেখেন স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য-বাসিন্দারা। এরপরই বনকর্মীরা জঙ্গলে গিয়ে হাতিটিকে পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। দিন তিনেক পর্যবেক্ষণের পর বনকর্মীদের অনুমান, অন্য কোনও হাতির সঙ্গে লড়াইয়ের জেরে ‘রেসিডেন্ট’ পূর্ণবয়স্ক পুরুষ দাঁতাল হাতিটি জখম হয়েছে। কারণ, হাতিটির ডান কানের পাশে যে ক্ষতচিহ্নটি রয়েছে, তা কেবলমাত্র অন্য কোনও হাতির দাঁতের আঘাতের ফলেই লেগে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বনকর্মীরা।
আহত হাতিটি ধীর পায়ে জঙ্গলের গভীরে হাঁটাচলা করছে। বনকর্মীরা কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেই হাতিটি জঙ্গলের মধ্যে ঘন ঝোপেঝাড়ে লুকিয়ে পড়ছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার জামবনির দর্পশিলা গ্রামের লাগোয়া পলাশবনির জঙ্গলে হাতিটিকে প্রথম দেখা যায়। মঙ্গলবার রাতে হাতিটি কিছুটি দূরে টাঙ্গাশোল জঙ্গলের দিকে চলে যায়। প্রত্যক্ষদশীদের বক্তব্য, রাতে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে হাতিটি। ধান খেতের উপর দিয়ে হাতিটি হাঁটার ফলে পাকা ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু শুঁড়ে পাকা ধান গাছ উপড়ে ফেললেও হাতিটি খেতে পারছে না।
বুধবার সকালে হাতিটি ফের পলাশবনির জঙ্গলে চলে আসে। দর্পশিলা গ্রামের বাসিন্দা চন্দন মাহাতো ও অশোক মাহাতোরা বলেন, “হাতিটি খুবই দুর্বল। দিনের বেলা গভীর জঙ্গলের আড়ালে থাকছে। হাতি সচরাচর পর্যায়ক্রমে কান নাড়ায়। এই হাতিটির কান স্থির হয়ে রয়েছে। তাছাড়া হাতিটি মাঝে মাঝেই শুঁড়ে ধুলো নিয়ে কানের পাশে ক্ষতে লাগাচ্ছে।”
ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের সংযুক্ত আধিকারিক (অ্যাটাচ্ অফিসার) সুরত্ন শেরপা বলেন, “দলমার হাতির পাল এখন নয়াগ্রামে রয়েছে। এই জখম হাতিটি কিন্তু স্থানীয়। এ ধরনের ছয়-সাতটি ‘রেসিডেন্ট’ হাতি ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের জঙ্গলে বারো মাসই থাকে। রেসিডেন্সিয়াল হাতির মধ্যে মাঝেমধ্যেই লড়াই হয়। বিভিন্ন কারণে এমনটা হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে ঠিক কী কারণে গোলমাল, বা কোথায় লড়াইয়ের পর হাতিটি জখম হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। কারণ যে এলাকায় হাতিটি রয়েছে সেই পলাশবনির অদূরেই ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জঙ্গলও রয়েছে।”
বন দফতর সূত্রের খবর, গত অগস্টে পশ্চিম মেদিনীপুরের রূপনারায়ণ বন বিভাগের আমলাগোড়া রেঞ্জের মাগুরাশোল জঙ্গলে তিনটি পুরুষ রেসিডেন্ট হাতির মধ্যে তুমুল লড়াইয়ে একটি হাতির পিছনের বাম পা জখম হয়। পরে ঘুম পাড়ানি গুলি ছুড়ে স্থানীয় ভাবে ওই হাতিটির চিকিৎসা করেছিল বন দফতর। পরে ওই হাতিটি সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের এই হাতিটির ক্ষেত্রে ঘুম পাড়ানি গুলি ছুড়লে দুর্বল হাতিটির মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য বন্যপ্রাণ শাখার উপরই বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও (বিভাগীয় বনাধিকারিক) অশোকপ্রতাপ সিংহ বলেন, “হাতিটি ভীষণই দুর্বল, তাই স্থানীয় ভাবে ঘুম পাড়ানি গুলি ছুড়ে চিকিৎসার ঝুঁকি নেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখাকে জানানো হয়েছে।”
বন দফতর জানাচ্ছে, নানা কারণে হাতিরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে। কখনও পালে আধিপত্য কায়েম করার জন্য পুরুষ হাতিদের মধ্যে লড়াই হয়। কখনও আবার প্রজননের সময় স্ত্রী হাতির ঘনিষ্ঠ হওয়ার সময় দুই বা একাধিক পুরুষ হাতির মধ্যেও লড়াই হয়। এ ধরনের লড়াইয়ে পরাজিত জখম হাতিটির ক্ষতে সংক্রমণ হলে মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে। |